সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
ভোটের জন্য উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এদিকে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরমও। সব মিলিয়ে গরমাগরম পরিবেশ। সর্বত্রই একই আলোচনা। ভোট আর ভোট! কে কত আসন পাবে? আবার কি বিজেপি ক্ষমতায় ফিরবে, না কি কংগ্রেস? অথবা, এবার কি ভারত পাবে একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে... ইত্যাদি ইত্যাদি। ভোটপ্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত। কখনও বাড়ির দরজায়, কখনও সভা সমাবেশে, কখনও-বা রোড শোয়ে। ভোটের প্রচারে বাজার যতই গরম হোক না কেন, দিন-আনি-দিন-খাই মানুষ কিন্তু দামবৃদ্ধির আঁচ পাচ্ছে সব্জি কিনতে গিয়ে। মোদি জমানায় মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানা যে সম্ভব হয়নি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে আম আদমি। মূল্যবৃদ্ধির কারণে জেরবার অবস্থা। প্রতিবারই ভোটের সময় মূল্যবৃদ্ধি রোধের প্রতিশ্রুতি দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু, পরবর্তীকালে দেখা যায় যে কে সেই অবস্থা। বাজারে গেলে বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অগ্নিমূল্যের দরুন ছ্যাঁকা লাগার উপক্রম। এবারও তাই মানুষ প্রত্যাশা করছে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, জিনিসপত্রের দামটা অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখুক। তাঁদের ভাবনার মধ্যে এটাও রয়েছে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এবার কি ফিরবে স্বাচ্ছন্দ্য? বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের দাম শুনে এখনকার মতোই কি তাঁদের নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে?
ভোটপ্রার্থীরা প্রচারে এখন ভীষণ ব্যস্ত। নাওয়া খাওয়ারও অবসর নেই। যাদের ভোটে জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে এই মুহূর্তে তাদের কথা ভাবছেন ক’জন? ভোটের বাজার যত গরম হচ্ছে ততই দাম বাড়ছে আলুসহ নানা সব্জির। প্রশ্ন এটাই, ভোটবাবুরা কি এই খবর রাখছেন? যতটা সময় তাঁরা ভোটের প্রচারে ব্যয় করছেন তার ১ শতাংশ সময়ও কি বাজারে ঢুঁ মারার জন্য ব্যয় করছেন? তা না-করলে কীভাবে বুঝবেন, সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সমস্যাটিকে? পরিস্থিতি হল ভোট পর্ব চলাকালীন এই সময়টায় বিভিন্ন সব্জির দাম কিন্তু বেশ চড়া। শীতের মরশুমে নানা রঙের যেসব সব্জি মন ভরিয়ে দেয় গরমের দিনে তার অনেকটাই অনুপস্থিত। বাজারের ছবিটাও তাই অনেকটাই বদলে যায় এ-সময়। এখন বাজারে পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শসহ যেসব সব্জি পাওয়া যাচ্ছে তার কোনওটার দামই ৫০-৬০ টাকার নীচে নয়। আর একটু ভালো মানের বেগুন হলে তার দাম ৮০ টাকা কেজি হেঁকে বসছে অনেকেই। কয়েক দিন আগেও খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ১০ টাকার আশেপাশে ছিল। এখন খুচরো বাজারে সেই আলর দামই ১২ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অসময়ের বৃষ্টিতে সব্জির ক্ষতি হওয়ায় খোলা বাজারে তার দাম চড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আলুর ক্ষেত্রেও রয়েছে একটি যুক্তি। এবার রাজ্যে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও উৎপাদন মার খেয়েছে অসময়ের বৃষ্টির দরুন। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, চাষিদের অনেকেই নাকি এখনও আলু ধরে রেখেছেন। ফলে, জোগান কমে যাচ্ছে, তাতে দাম বাড়ছে। তবে, যেভাবে গরম বাড়ছে তাতে হিমঘরের বাইরে আলু বেশিদিন রাখা সম্ভব হবে না। তখন বেশি পরিমাণ আলু বাজারে চলে আসবে এবং দাম কমবে। নিঃসন্দেহে এটা আশার কথা। সে যাই হোক, ভোটের বাজারের উত্তেজক পরিবেশ পরিস্থিতি ও নেতাদের ব্যস্ত থাকার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়েরা যাতে দাম বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের পকেট কাটতে না-পারে সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। দরকার প্রতিটি বাজারে প্রয়োজনীয় নজরদারি।
রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকার ন্যায্য মূল্যে মানুষ যাতে জিনিসপত্র কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করেছে। বাজারগুলির উপর নজরদারি করার জন্য আছে টাস্কফোর্সও। চাষিরা যাতে তাদের পরিশ্রমের মূল্য ঠিকমতো পেতে পারে সে ব্যবস্থাও আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এতসব উদ্যোগ সত্ত্বেও কখনও কখনও বাজারে গিয়ে চড়া দামের কারণে জেরবার হতে হচ্ছে মানুষকে। কখনও-বা ঠিকমতো নজরদারির অভাবের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই বলতে হচ্ছে, ভোটের ময়দান যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, বাজারে যাতে আগুন না-লাগে সেজন্য সরকারি তরফে পদক্ষেপ জরুরি। একই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করাটাও ভোটপ্রার্থীদের নির্বাচনী অ্যাজেন্ডার অন্যতম বিষয় হওয়া উচিত। কারণ, এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষাটি যে বিশেষভাবে যুক্ত।
