সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
আলিগড়ে বিজেপির বিক্ষুব্ধদের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ক্ষোভ লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থী নিয়ে। রাজ্যপাল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁরা সকলেই বিজেপি কর্মী। কাজেই দল যে প্রার্থীকে ঠিক করবে, তাঁকেই মেনে নিতে হবে। নরেন্দ্র মোদিকে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী করাটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সাংবিধানিক পদ হওয়ায় রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন নন। অর্থাৎ কল্যাণ সিংয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে কি? কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই, কল্যাণ সিং আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন—এই অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দ্বারস্থ হয়েছে। দেশের বাইরে থাকায় কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি কথা হয়নি ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের খবর, ব্যবস্থা নিতে পারেন বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কোবিন্দ।
এপর্যন্ত আচরণবিধি ভঙ্গ সংক্রান্ত যত অভিযোগ জমা পড়েছে, নিঃসন্দেহে কল্যাণ সিংয়ের বিরুদ্ধে আনা নালিশই সবচেয়ে হাই প্রোফাইল। আর একটি হতে পারত নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষের উপগ্রহ ধ্বংসের ক্ষমতাসম্পন্ন এস্যাট ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের পর মোদির ঘোষণা এসেই গিয়েছিল কমিশনের ছাঁকনির তলায়। যদিও বিষয়টি জাতীয় সুরক্ষা সংক্রান্ত এবং এমন পরীক্ষা কোনও দেশ করলে আন্তর্জাতিক মহলকে তা জানানো নিয়মের মধ্যে পড়ে বলে পার পেয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও নমো টিভি নিয়ে রীতিমতো চাপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। বিজেপি তথা এই মুহূর্তে কার্যনির্বাহী বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে নিশ্চিতভাবে কড়া পদক্ষেপ নেবে কমিশন।
এ তো গেল কেন্দ্রীয় স্তরে অভিযোগের সাতকাহন। এছাড়া দেশজুড়ে আঞ্চলিক এবং জাতীয় দলগুলির বিরুদ্ধেও নিত্যদিন ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়ছে। কখনও অনুব্রত মণ্ডলের নকুলদানা খাওয়ানোর ‘প্রতিশ্রুতি’, আবার কখনও বাবুল সুপ্রিয়র গান। নির্বাচন কমিশন নিষেধ করা সত্ত্বেও তৃণমূল-বিরোধী ওই বিতর্কিত গান বাজিয়েই বাবুল প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নরেন্দ্র মোদির ব্রিগেড সমাবেশে গানটি বাজানো হয় কি না, সেদিকেও কড়া নজর রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর আবার রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুর কনভয় থেকে টাকা বিলির অভিযোগ। মোদিকে জেতানোর দাবিতে। এ নিয়েও কম বিতর্ক দানা বাঁধেনি!
আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে বহু জায়গায় আজও ভোটের আগের দিন ঠিক হয়, ভোটারের সমর্থন কোনদিকে যাবে। টাকা বিলির মাধ্যমেই। যে কাউন্টার থেকে বেশি টাকা পাওয়া যাবে, সেখানেই যাবে ভোট। বছরের বেশিরভাগ সময় আধপেটা খেয়ে থাকা মানুষের কাছে তাই ভোটের সময়টা খুব গুরুত্বপর্ণ। আচরণবিধির গেরো তারা বোঝে না। ভোট আসে ভোট যায়, সমাজের একটা অংশের মানুষ সেই অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া পায় না। রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় এলে এই করব, ওই করব...। এরপর কী, জানে না ভারতবাসী। তাই বিধিভঙ্গই তাদের কাছে হয়তো বেশি উপকারী।
প্রতিশ্রুতি আর আচরণবিধির মধ্যে যে একরত্তি সুতোর ফারাক!