বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
অল্প করে বেচে দেওয়া। কেনারাম পূর্বসূরির উত্তরসূরিরা তখন বেচারামে পরিণত হয়।
স্বাধীনতার আগে ও পরে গড়ে ওঠা বহু সংস্থা দেশকে সমৃদ্ধশালী করেছে। সরকারের অধীনে থাকা ওইসব সংস্থা একাধারে আধুনিক ভারত গড়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, একইসঙ্গে সেগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করেছিল। আধুনিক ভারতের রূপকার তথা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু দেশজুড়ে নানান শিল্পসংস্থা গড়ে তোলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই মহৎ কাজে তাঁর যোগ্য সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মতো বেশ কয়েকজন দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব। পণ্ডিত নেহরুর দৃষ্টিতে ভারতের কলকারখানাগুলি মন্দির মসজিদ গির্জার মতোই পবিত্র বলে বিবেচিত হতো। তিনি ভারী শিল্প কারখানা ও বড় সংস্থার ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। তাই তাঁর আমলে এবং পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে সরকারের ছাতার তলায় আনা হয়েছিল। পাশাপাশি বহু নতুন সংস্থাও গড়ে তোলা হয়েছিল। এইসব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দেশের নাগরিকদের কাছে ভরসার স্থলে পরিণত হয়েছিল। জীবিকা থেকে পরিষেবা, দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রয়োজন মেটানো থেকে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা তৈরিতে নির্ভরযোগ্য সহায়ক হয়ে উঠেছিল।
এদিকে, কংগ্রেস আমলের নানান দুর্বলতা, দুর্নীতি, ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করে একটি নতুন ভারত উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ তে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। নানা কায়দা কৌশলে নিজের এমন একটি ভাবমূর্তি বাজারে ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে আম ভারতবাসীর বড় অংশের মনে হয়েছিল, মোদির পকেটে রয়েছে এমন সর্বরোগহর আশ্চর্যবটিকা যাতে সত্যিই এক নতুন ভারত মিলবেই। সবকা সাথ সবকা বিকাশ হবে। সর্বস্তরের ভারতবাসীর জীবনে আচ্ছে দিন আসবেই।
দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে যেতে চলল। ২০১৪ তে শপথ নেওয়া সরকারের আয়ু আর মাত্র কয়েকটা মাস। ওই সরকারের সাফল্য ব্যর্থতার হিসেব নিকেশের পালা এসে গিয়েছে। কী দেওয়ার ছিল, কী দিয়েছে ওই সরকার—তা ভারতবাসী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো একটি দুঃসংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। ভোটের মুখে সংসদে পেশ করা সর্বশেষ বাজেটে সরকার মহানুভব দাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চেয়েছে। রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় জনকল্যাণমূলক একঝাঁক ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলি রূপায়ণে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থান করতে মেদিজিরা বেচারাম হতে চাইছেন। এয়ার ইন্ডিয়া, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, সিমেন্ট কর্পোরেশন, স্টিল অথরিটি অথ ইন্ডিয়ার দুর্গাপুর ইউনিট, স্কুটার ইন্ডিয়া লিমিটেডের মতো পঁয়ত্রিশটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আংশিক বা পুরোটাই বেচে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এগুলির সবই যে লোকসানে চলে এমনটি নয়। তবু সেগুলি বেচতে হবে, কারণ সরকার আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের পথ ধরেছে। এই সংস্থাগুলি বিক্রি করে আসতে পারে নব্বই হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে আর একটি তথ্য উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তা হল, এই সরকারের আমলে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ মামা-ভাগ্নে জুটি নীরব মোদি-মেহুল চোকসিরাই দেশের প্রায় তিরিশ হাজার কোটি টাকা মেরে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। অপর এক শিল্পপতি বিজয় মালিয়াও হাপিস করেছেন প্রায় দশ হাজার কোটি। এরকম আরও আছে। দ্বিতীয় একটি তথ্য—এই সরকার ধনী শিল্পপতিদের কয়েক লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দিয়েছে।
শেষের কথা, চলতি সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদের শেষবেলায় দেশবাসী বেচারামদের পাল্লায় পড়ল!