বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে বিগত কয়েকদিনে বেশ কিছু উৎসাহজনক খবর শোনা গিয়েছে। প্রথমত, গত ১৬ জানুয়ারি রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প, পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ব্রিটানিয়া সংস্থার বিনিয়োগ প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে জমিও। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেদিন জানিয়েছিলেন, ব্রিটানিয়া এ রাজ্যে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দেওয়া হচ্ছে ৭৫.৩৫ একর জমি। এবং তা দেওয়া হচ্ছে শিল্পোন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে যা জমি রয়েছে, তা থেকেই। এছাড়া বিভিন্ন শিল্পতালুকে আরও আটটি সংস্থাকে মোট পাঁচ হাজার বগর্মিটার জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সেদিন গৃহীত হয়। যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও ৪৫০ কোটি টাকা।
জট কাটার ইঙ্গিতটা সেদিনই মিলেছিল। কিন্তু তা আরও পরিষ্কার হয়েছে সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর সূত্রে খবর, বিভিন্ন শিল্পতালুকে একলপ্তে মোট ৪২টি সংস্থাকে মোট ৩৪.৩৬ একর জমি দেওয়া হয়েছে। দপ্তরের কর্তাদের দাবি, সাম্প্রতিককালে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এদের মাধ্যমেও রাজ্যে বিনিয়োগ হবে ৩৬৪ কোটি টাকা। কর্মসংস্থানের হাতছানি অন্তত দু’হাজার বেকারের।
এক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে কেউ এসে জমি চাইল, আর তাকে দিয়ে দেওয়া হল, এমন সহজ-সরল ফর্মুলা এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার মেনে চলেনি। কারণ, তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা বলছে, জমি নেওয়ার পর অনেকেই তা ফেলে রেখে দিচ্ছে। বিনিয়োগের নামগন্ধ নেই। আবার এমনও ঘটনা নজরে এসেছে, যে কারখানার কথা বলে জমি নেওয়া হল, পরে তা ব্যবহার করা হল সম্পূর্ণ অন্য কাজে। এই সঙ্কটজনক অবস্থা থেকেই পরিত্রাণের রাস্তা খুঁজছিলেন দপ্তরের কর্তারা। অবশেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যিনি জমি চাইছেন, তাঁর শিল্প গড়ার মতো সদিচ্ছা এবং ক্ষমতা কতখানি আছে, বা আদৌ আছে কি না, তা আগাম পর্যালোচনা করে তবেই জমি দেওয়া হবে। সেইমতো জমির জন্য আবেদনপত্র জমা পড়ার পর সেগুলি একটি আন্তর্জাতিক মানের রেটিং সংস্থাকে দিয়ে খতিয়ে দেখা হয়। তারপরই ওই ৪২টি সংস্থাকে একসঙ্গে ওই জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের রেকর্ডই বলছে, রাজ্যজুড়ে মোট ৫২টি তালুকে জমির সংস্থান রাখা হলেও গত দু’বছরে কোনও সংস্থারই সেখানে ঠাঁই হয়নি। সেই জায়গায় চলতি বছরের শুরুতেই সেই দীর্ঘদিনের জট কেটে যাওয়াটা শিল্পক্ষেত্রে একটা উজ্জ্বল সময় হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
উপরের তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার। একদিকে রাজ্য সরকার যেমন নানা ধরনের কারখানা গড়ার জন্য জমি নিয়ে তৈরি, তেমনি উদ্যোগীদের মধ্যেও এই সুযোগকে কাজে লাগানোর একটা উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এমনকী কলকাতা থেকে শুধু কাছেই জমি নিতে চায় বিভিন্ন সংস্থা, এই ধারণাও কেটে গিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা জমি নিয়েছে কল্যাণী, ফালাকাটা, রেজিনগর, বাউরিয়া, বোলপুর, অশোকনগর, বহরমপুর, শিলিগুড়ি সহ দূরদূরান্তের বিভিন্ন শিল্প তালুকে। প্রশাসনিক জটিলতা না থাকলে এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছিলেন, দু’হাজার পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ করতে পারে, এমন একটি প্রমোদতরী সংস্থা কলকাতায় আসতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কলকাতা তথা রাজ্য যে বিনিয়োগ তথা পর্যটন বাণিজ্যের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে, বিশ্বখ্যাত ওই সংস্থার আগ্রহই তার প্রমাণ।