বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অপারেশন লোটাস নবরূপে

দেশজুড়ে মোট সাত দফায় সাধারণ নির্বাচন চলছে। প্রথম দুই দফায় ১৯১টি আসনের ভোট গ্রহণে অন্তত প্রার্থীদের নিয়ে কোনও ঝঞ্ঝাট হয়নি। তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ ৭ মে। ওইদিন ১২টি রাজ্য/ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৪টি আসনের জন্য কয়েক কোটি মানুষের ভোটের লাইনে দাঁড়াবার কথা। ওই দফায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজ্য হল ২৬ আসনের গুজরাত। মোদি-শাহের রাজ্যের সব আসনের ভোট ওই একদিনেই। গত নির্বাচনে গুজরাতের সবক’টি আসনই দখল করেন মোদিরা। তার মধ্যে সুরাতে বিজেপির পক্ষে প্রদত্ত ভোট (৭.৯৬ লক্ষ) এবং জয়ের মার্জিন (৫.৪৮ লক্ষ) ছিল চমকপ্রদ। সব মিলিয়ে গুজরাতের ভিতরে অন্তত সুরাত আসনটি বিজেপির জন্য শুধু ‘নিরাপদ’ নয়, ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’। তা সত্ত্বেও সুরাতের ১৬.৫৬ লক্ষ ভোটার এবার ভোটদানের সুযোগ পেলেন না। ভোটগ্রহণের অনেক আগেই আসনটি চলে গেল বিজেপির ঝুলিতে! স্কুটিনিতে বাতিল হয় কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়ন। ‘হাত’-এর ‘ডামি’ প্রার্থীর সম্ভাবনাও খারিজ করে দেন রিটার্নিং অফিসার। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইতে বাকি ছিলেন বিএসপি এবং নির্দল-সহ আটজন। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, ২২ এপ্রিল তাঁরাও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন! অমনি একমাত্র প্রার্থী, বিজেপির মুকেশ দালালকেই ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করা হয়।
মনোনয়নপত্র পেশের শেষদিন ছিল ১৯ এপ্রিল। পরদিন ছিল ‘স্কুটিনি’। সেদিনই সুরাতের কংগ্রেস প্রার্থী নীলেশ কুম্ভানির প্রস্তাবকদের স্বাক্ষরে গরমিলের কারণ দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। এক্ষেত্রে প্রস্তাবকরাও স্বীকার করেন যে, সইগুলি তাঁদের নয়। একইভাবে বাতিল হয় ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিকল্প প্রার্থী সুরেশ পাডশালারও মনোনয়ন। ভোটের লড়াই থেকে নিজেদের একে একে গুটিয়ে নেন বিএসপির পেয়ারেলাল ভারতী-সহ বাকি আটিজনও! অতঃপর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধির হাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের শংসাপত্র তুলে দিতে দেরি করেনি কমিশন। তাঁকে দ্রুত অভিনন্দন জানান গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি। এমনকী, ‘প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম পদ্মটি সুরাতই তুলে দিল’ জানিয়ে আহ্লাদ প্রকাশ করেন দলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব। সুরাতের ভোট-পরম্পরা বলে যে, পৃথিবী নিতান্ত উল্টে না গেলে অন্তত সুরাত আসনটি নিয়ে গেরুয়া শিবিরের কোনও দুশ্চিন্তা ছিল না। তা সত্ত্বেও যে কায়দায় মুকেশ দালালের ‘জয়’ নিশ্চিত করা হল তা এক বেনজির দৃষ্টান্ত। বিশেষত মোদি এবং শাহ যে অহমিকার সঙ্গে লোকসভায় চারশো পারের ‘গ্যারান্টি’ দেশজুড়ে বিতরণ করছিলেন কিছুদিন আগেও, সেই অহমিকার সঙ্গে এই কাণ্ড ভীষণই বেমানান। এতে বরং এই বার্তাই সর্বত্র পৌঁছেছে যে, বিজেপি নেতারা মুখে যতই হম্বতম্বি করুন, তাঁরা ভিতরে ভিতরে রীতিমতো ভড়কে আছেন। সম্ভবত, প্রথম দফাতেই পড়ে ফেলেছেন এবারের দেওয়াল লিখন। তাই আর তিনশো-চারশো পারের গল্পে আটকে থাকতে চাইছে না গেরুয়া শিবির, যেখানে যে কায়দায় যতটা সম্ভব সেটুকুই ঝুলিতে ভরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যেন তারা। যদি এনডিএ ছাপিয়ে ‘বৃহত্তর জোট’ করেও আর একবার সরকারে ফেরা যায়, সেই শেষ চেষ্টাটাই কি করে চলেছেন মোদি-শাহরা? কারণ তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, ভয়ানক খেপে রয়েছে সব শ্রেণির মানুষ। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কৃষক, পরিযায়ী শ্রমিক, প্রতারিত বেকার বাহিনী, পেনশন-বঞ্চিত প্রবীণ নাগরিকগণ, মহিলারা, সর্বোপরি মুসলিম সহ সমগ্র সংখ্যালঘু শ্রেণি। তাহলে গেরুয়া ঝুলি কানায় কানায় ভরাবেন কারা!  
সুরাতের রেশ মিটতে না মিটতেই এবার সংবাদ শিরোনামে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর। সেখানে ভোট ১৩ মে, চতুর্থ দফায়। তার আগেই বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাল বিজেপি। সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে কংগ্রেস প্রার্থী অক্ষয়কান্তি বামকে ছিনিয়ে নিল তারা। এমনকী, অন্য বিরোধী প্রার্থীদেরও মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এদিন কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে গাড়িতে বসে, নিজের ছবি এক্স-এ পোস্ট করে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় লিখেছেন, ‘ইন্দোরের কংগ্রেস প্রার্থী অক্ষয় বাম বিজেপিতে স্বাগত!’ ইন্দোরের জেলাশাসক জানান, কংগ্রেসসহ তিন বিরোধী প্রার্থী ‘নিয়ম মেনেই’ তাঁদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেছেন। উল্লেখ্য, এক বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে গিয়ে মনোনয়ন তুলে নেন অক্ষয়। অথচ, স্কুটিনির দিন তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে অক্ষয়ের মনোনয়ন খারিজের দাবি তোলে বিজেপি। কিন্তু সেই কৌশল ফেল করে। অবশেষে অন্য ছকে খেলে বিজেপি প্রার্থীর যাত্রাপথ সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক করল গেরুয়া বাহিনী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূর, সরাসরি পদ্ম-এ ছাপেরই গ্যারান্টি নেওয়া হল হাত-এর প্রার্থীর কাছ থেকে। অর্থাৎ আমদানি হল ‘অপারেশন লোটাস’-এর নিউ এডিশন! এতদিন জারি ছিল জনপ্রতিনিধিদের অনৈতিক দলত্যাগের ব্যবসা। এবার বিরোধী দলের প্রতীকে জয়ের স্বাদ গ্রহণের আগেই ‘বধ’ করা হচ্ছে কাউকে কাউকে। নির্বাচন কমিশন নামক একটি দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রতিষ্ঠানের চোখের সামনেই দিনের আলোয় গণতন্ত্র হত্যার এই খুল্লামখুল্লা কারবার চলছে! এর দায় তারা নেবে না কেন?

1st     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ