সম্পাদকীয়

‘উন্নততর’ অসাম্য!

কথাটা বাম আমলের শেষ দশ বছরে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর আমলে নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদে একটি নতুন স্লোগান বাজারে আনে সিপিএম। ‘উন্নততর বামফ্রন্ট’। সেই ‘উন্নততর’ বামফ্রন্টের স্বরূপ বোঝাতে শিল্পায়নকে ‘পাখির চোখ’ করেন জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি। কিন্তু সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ছোট গাড়ির কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে বিতর্কের জেরে শেষমেশ রাজ্য থেকেই বিদায় নেয় বামফ্রন্ট সরকার। ফলে ‘উন্নততর’ বামফ্রন্টের চেহারাটা কেমন, তা আর দেখার সুযোগ হয়নি রাজ্যবাসীর। কিন্তু এত বছর বাদে তা দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! রাজ্যবাসী নয়, দেশবাসীকে। গত দশ বছর ধরে দেশ চালানোর পর তাঁর অন্যতম বড় ‘অবদান’ হল, অসাম্যকে আরও ‘উন্নত’ করতে সক্ষম হওয়া। এই অসাম্য ধনী-দরিদ্রের, পুরুষ-নারীর। বামেদের স্লোগান পাল্টে দিয়ে বলা যায় ‘উন্নততর’ অসাম্য। গত কয়েক বছর একাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, মোদি জমানায় কীভাবে এই অসাম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে চলেছে। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে অসাম্যের এই লজ্জাজনক রিপোর্ট চড়া সুরে অস্বীকার করেছে কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু এবার মোদি সরকারের নীতি আয়োগই জানিয়েছে, দেশে অসাম্যের ছবিটা উদ্বেগজনক। পদাধিকার বলে এই সংস্থার প্রধান প্রধানমন্ত্রী নিজেই। নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন দেশের সুস্থায়ী উন্নয়নের যে ছবি তুলে ধরেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ তার মধ্যে অসাম্যের মাপকাঠিতে ভারতের নম্বর পিছিয়ে হয়েছে ১০০-তে ৬৫। ২০১৮-তে এই নম্বর ছিল ৭১, ২০২০-২১-এ তা কমে হয় ৬৭। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬৫। শুধু আর্থিক অসাম্য নয়, লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে দেশের ছবিটা আরও উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে ভারতের নম্বর ১০০-তে ৫০-এরও কম। ‘উন্নততর’ অসাম্যই বটে!
মোদির রাজত্বে এই ‘উন্নততর’ অসাম্যের ছবিটা ঠিক কেমন? আর্থিক অসাম্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’ জানিয়েছে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে তৈরি সম্পদের ৪০ শতাংশ কুক্ষিগত হয়েছে মাত্র এক শতাংশ ধনীতম মানুষের হাতে, দরিদ্রতম মানুষের ৫০ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ! আবার প্যারিসের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন ইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে এখন ব্রিটিশ রাজত্বের সময় থেকেও বেশি অসাম্য। ২০২২-২৩- এ দেশের মোট আয়ের ২২ শতাংশেরও বেশি রয়েছে ওই এক শতাংশ ধনকুবেরদের হাতে। নীচের সারির ৫০ শতাংশের মিলিত আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। এই ৫০ শতাংশের গড় আয় বছরে ৭১ হাজার টাকা। আর সবচেয়ে ধনী ১০ হাজার ব্যক্তির গড় আয় বছরে ৪৮ কোটি টাকা। মানে, ২ হাজার গুণেরও বেশি। মোদির শাসনে লিঙ্গ বৈষম্যের ছবিটা আরও ভয়াবহ। যেমন, সাক্ষরতায় পুরুষ-নারীর ফারাকের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১১২তম। কলেজ শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে ভারত রয়েছে ১০৫তম স্থানে। লোকসভায় গতবার মহিলা সাংসদ ছিলেন ১৭ শতাংশ। এবার কমে হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। দেশের স্থল-নৌ-বিমানবাহিনীতে নারীশক্তির অনুপাত যথাক্রমে ৩.৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ। সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৯.০৯ শতাংশ, হাইকোর্টগুলিতে ১৩.৫ শতাংশ। সন্দেহ নেই, অসাম্যের এমন সার্বিক ‘উন্নততর’ ছবি দেখিয়ে নজির গড়েছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এ লজ্জা ঢাকার জায়গা নেই।
মোদি জমানার গত দশ বছরের ইতিহাস বলছে, যে কোনও রাজ্যের নির্বাচনের প্রচারেই ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের রব তোলে গেরুয়াবাহিনী। বোঝাতে চায়, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে সাফল্যের ঘোড়া ছুটবে। অতএব ভোট দিন পদ্মে। সেই প্রচার যে কত অসার, তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে নীতি আয়োগের রিপোর্টেই। দেখা যাচ্ছে, সার্বিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অসম, ছত্তিশগড়, অরুণাচলের মতো ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ রাজ্য। আবার ক্ষুধার্তহীন অবস্থানে (জিরো হাঙ্গার) জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে মোদি-অমিত শাহদের নিজের রাজ্য গুজরাত। সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জাতীয় গড় পয়েন্ট ৭৭-এর চেয়ে পিছিয়ে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অসমের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য। সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারফরম্যান্সের বিচারে পিছিয়ে রয়েছে ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ একাধিক রাজ্য। তাহলে ‘ডাবল ইঞ্জিনে’র সুফল কোথায়? মোদি সরকারের এই ব্যর্থতার ছবি কোনও বিরোধী দল তুলে ধরেনি, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ‘চক্রান্ত’ও নয়। অসাম্য নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে খোদ সরকারি রিপোর্ট। তাই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে অসাম্য দূর করে প্রকৃত সার্বিক উন্নয়নে যদি নজর দেয় মোদির তৃতীয় সরকার তাহলে দেশ ও দশের মঙ্গল।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা