বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

আইনি সুরক্ষা ও বেআব্রু বাস্তব

২৭ বছর! এই দীর্ঘ সময়েও যে ছবিটা বদলায়নি, আর জি করের ওই তরুণী পড়ুয়া চিকিৎসক বেঘোরে প্রাণ দিয়ে যেন সেই কঠিন সত্যটাকে ফের সামনে এনে দিলেন। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও কর্মক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষার দাবিতে তেতে উঠেছে গোটা দেশ। কারণ মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে আইন-আদালত, সরকার, পুলিস, কর্মক্ষেত্র, সাজা ইত্যাদি যে যে ব্যবস্থা চালু আছে, ওই মেয়েটির পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বুঝিয়ে দিল এ-সবই আসলে তাসের ঘরের মতো, ভঙ্গুর। একমাত্র সত্যিটা হল, কর্মক্ষেত্রে এ দেশের মেয়েরা আজও নিরাপত্তাহীনতায় চরম অসহায়। সুযোগ পেলে শ্বাপদের দল তাদের ছিঁড়ে খায়। সরকারি হাসপাতাল আর জি করের ওই তরুণী চিকিৎসক পৈশাচিক ঘটনা ঘটার ও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ওই মর্মান্তিক পরিণতির পর চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে আইএমএ হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে একটি সমীক্ষা করে। দেশের ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একদিনের সমীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে ৩৫ শতাংশ জানিয়েছেন, রাতের ডিউটিতে তাঁরা নিরাপদ নন। এর মধ্যে ১১.৪ শতাংশের মতে, রাতের ডিউটিতে নিরাপত্তার প্রবল অভাব রয়েছে। ৪৫ শতাংশ চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁদের কোনও ‘ডিউটি রুম’ নেই। ৫৩ শতাংশ জানিয়েছেন, ডিউটি রুম থাকলেও তা ওয়ার্ডের থেকে অনেক দূরে ফাঁকা জায়গায়। অনেকে আবার বলেছেন, ডিউটি রুম সংলগ্ন শৌচাগার নেই! সেখানে যেতে হলে প্রায়ান্ধকার করিডর দিয়ে অনেকটা দূর যেতে হয়। যে চিকিৎসকরা এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাঁদের ৮৫ শতাংশের গড় বয়স ৩৫-এর নীচে। ৬১ শতাংশ ইন্টার্ন। অনেক মহিলা চিকিৎসকই জানিয়েছেন, নিজেদের সুরক্ষায় তাঁরা ব্যাগে পেপার স্প্রে, ছুরির মতো অস্ত্র রাখেন। এই ভয়াবহ ছবি দেখে কিছু দাওয়াইয়ের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএ। যেমন প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী রাখা, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো, কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করা ইত্যাদি।
আর জি করের চিকিৎসকের মৃত্যু কিংবা আইএমএ-র সমীক্ষা রিপোর্ট দেখে ভাবার কারণ নেই যে এটা শুধু এদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদেরই সমস্যা। বরং মাঠ-ময়দান থেকে অফিস-কাছারি, সংগঠিত অসংগঠিত প্রায় সব কর্মক্ষেত্রেই মহিলাদের নিরাপত্তা যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে তা অস্বীকার করতে পারছে না মোদি সরকার। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্ট ‘উইমেন অ্যান্ড মেন ইন ইন্ডিয়া- ২০২৩’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেশজুড়ে নারী সুরক্ষার বেহাল দশাটা পরিষ্কার। রিপোর্টে কবুল করা হয়েছে, দেশে সর্বাধিক ধর্ষণের শিকার ১৮ থেকে ৩০ বছরের মেয়েরা। আর ১৬ বছরের কমবয়সি নাবালিকাদের নির্যাতনের ঘটনা ঠিকমতো নথিভুক্তই হয় না। কারণ সামাজিক ভয়। সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ মেয়েদের প্রতিদিন বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয়, অনেককে রাতে কর্মক্ষেত্রে থাকতে হয়। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে মোট ৫৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৯৪৬টি নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ রয়েছে এক নম্বরে (সাড়ে ৭ লক্ষ), দু নম্বরে আছে মোদির নিজের রাজ্য গুজরাত (৫ লক্ষের কিছু কম)। সেই তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের অভিযোগ নথিভুক্তির সংখ্যা দু’লক্ষের কম। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশে ধর্ষণের মতো ঘটনায় সাজার হার মাত্র ২৭ শতাংশ। তার মানে ৭৩ শতাংশ অভিযুক্ত কোনও শাস্তিই পায় না! স্বাধীন দেশে এ এক চরম লজ্জার ছবি।
অথচ কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা রুখতে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৭ সালে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যা বিশাখা নির্দেশিকা বলে বহুল প্রচারিত। এই নির্দেশিকায় পরিষ্কার তিনটি বার্তা ছিল— নিষেধ (প্রহিবিশন), প্রতিরোধ (প্রিভেনশন) এবং প্রতিকার (রিড্রেস)। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। এই নির্দেশকে শিরোধার্য করে ২০১৩ সালে আইন তৈরি করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আইনও সংশোধিত চেহারায় আত্মপ্রকাশ করেছে গত ১ জুলাই। এই নতুন ন্যায় সংহিতা আইনে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে একগুচ্ছ কড়া পদক্ষেপের দাওয়াই দেওয়া হয়েছে। যেমন, ১৮ বছরের কমবয়সিদের ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, অন্যক্ষেত্রে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। যৌন নির্যাতনের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে ২০১৮ সাল থেকে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু আছে দেশে। আসলে নারী নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে আইনে বিশেষ কমতি নেই। তবু মেয়েরা আজও নিরাপত্তাহীন! বিশাখা নির্দেশিকা, ২০১৩ সালের আইনের পরও আর জি কর কিংবা দেশের অন্যান্য প্রান্তের ঘটনা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অসহায়তার ছবি তুলে ধরেছে। তাই বর্তমান ন্যায় সংহিতায় কড়া পদক্ষেপের কথাগুলি বাস্তবে কেমন যেন ক্লিশে শোনায়।
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা