বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

বিপদ সঙ্কেত

গত আগস্টে বাংলাদেশে পালাবদলের পরেই আশঙ্কার মেঘ জমেছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে ভারতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগই হয়তো নিরপরাধ সাধারণ মানুষ, যাঁরা পড়শি রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু হিন্দু হওয়ার কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে ঢুকে পড়ছেন ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু এই অনুপ্রবেশকারীদের একটা অংশ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-আশ্রিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর জঙ্গি, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোই যাদের মূল লক্ষ্য। সমস্যাটা তাই শুধু বাংলাদেশ সীমান্তের তিন রাজ্যের নয়, গোটা দেশের। কড়া প্রহরা ও ভৌগোলিক কারণেই পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত দিয়ে এদেশে প্রবেশ করা অনেক কঠিন। তুলনায় দীর্ঘ নদী-পথ এবং একটা বড় অংশ কাঁটাতারহীন থাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সাধারণ ও জঙ্গি অনুপ্রবেশকারীদের কাছে সহজতম পথ। ফলে যেসব মৌলবাদী সংগঠন ভারতে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ চালাতে সদাসচেষ্ট, বাংলাদেশের ঘটনা যেন তাদের কাছে একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দেরিতে হলেও এই সম্ভাব্য বিপদের গন্ধ পেয়ে এখন নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। কারণ বেশিরভাগ অনুপ্রবেশ ঘটছে এইসব রাজ্যেই। কিন্তু উদ্বেগ বাড়িয়েছে অন্যান্য রাজ্যেও। খবরে প্রকাশ, গত কয়েকদিনে মুম্বইতে ১৯ জন বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে। দিল্লির গুরুগ্রামেও গ্রেপ্তারের সংখ্যা একাধিক। অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে দিল্লি, মুম্বইয়ের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যেও। দিল্লিতে ধৃতরা সে রাজ্যের পুলিসকে জেরায় জানিয়েছে, তারা উত্তর-পূর্বের কয়েকটি সীমান্ত থেকে প্রথমে অসমে, সেখান থেকে দিল্লি মুম্বইয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জঙ্গিযোগে বাংলায় একাধিকজন গ্রেপ্তার হয়েছে, যা সব অর্থেই চিন্তার বিষয়।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকানোর দায় কার, সেই বহুল চর্চিত বিষয়টি নিয়ে আবার রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা দেশেই সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব যে বিএসএফ-এর, তা একটা দুধের শিশুও জানে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমারেখার মধ্যে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গ। এর একটা বড় অংশ নদী-পথ, যেখানে কাঁটাতারের প্রশ্ন নেই। বাকি স্থলভাগের একটা অংশও কাঁটাতারবিহীন, অ-সুরক্ষিত। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তে বিএসএফ-ই একমাত্র ‘প্রাচীর’। অথচ অভিযোগ হল, তাদের উপস্থিতিতে মানুষ থেকে গোরু হেলায় ঢুকে পড়ছে এ রাজ্যে, এ দেশে! সুতরাং অনুপ্রবেশ আটকানোর প্রাথমিক দায়িত্ব মোদি সরকারের অধীন বিএসএফের-ই। এবং এই কেন্দ্রীয় সংস্থা বারবার প্রমাণ করেছে, অনুপ্রবেশ রুখতে তারা কার্যত ব্যর্থ। তবু এই সঙ্কটের সময় অনুপ্রবেশের দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি! উল্টে আবার তাদের অভিযোগ, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নাকি বেআইনি অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। তাই সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কাশ্মীরে পাকিস্তানি জঙ্গি অনুপ্রবেশ, অসম ও ত্রিপুরায় দেদার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে কী করে? এই দুই রাজ্যে তো তৃণমূল সরকার নেই। কেন দিল্লি, মুম্বই, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে অনুপ্রবেশ-বিরোধী পুলিসি অভিযান চালাতে হচ্ছে? সেখানেও তো নেই তৃণমূল। তাহলে? এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বাংলায় জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে বিএসএফ। চলছে গেরুয়া শিবিরের ঘৃণ্য চক্রান্ত। রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কেন্দ্র ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এই গুরুতর অভিযোগের জবাবদিহি করতে হবে কেন্দ্রকে।
কিন্তু এটাও সত্য যে, অনুপ্রবেশ রোখার প্রাথমিক দায়িত্ব বিএসএফের হলেও রাজ্য হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তা ভাবের ঘরে চুরি করা হবে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর মদতে বাংলায় জঙ্গি ঢুকছে জেনেও রাজ্য পুলিস কেন কিছু করেনি—সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও! এই জঙ্গিরা কোথায়, কতদিন ধরে রয়েছে—সেই তথ্য না থাকায় পুলিসের বিরুদ্ধে সঙ্গত কারণেই ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। ঘটনাও হল, কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জাল নথি তৈরির একাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে জাল রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্টও তৈরি হয়ে যাচ্ছে! অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ গত তিন-চার বছর ধরে রাজ্যে বসবাস করছে বলে জানতে পেরেছে পুলিস। এসব তথ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিপদটা ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। এবং এসব আটকানোর জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিরও দায়িত্ব কিছু কম নয়। অনুপ্রবেশ নিয়ে বিতর্ক চললেও একে রুখতে হলে কেন্দ্র-রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্যের আগাম আদান-প্রদান ও যৌথ অভিযান জরুরি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা। রাজনৈতিক লাভালাভের অঙ্ককে সরিয়ে রেখে সেই সদিচ্ছা দেখা গেলেই সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তাতে দেশ, রাজ্য উভয়েরই লাভ। 
22d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাগত উচ্চশিক্ষায় দিনটি বিশেষ শুভ। ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন সাফল্য পাবেন। অর্থ ও...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা