বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

দুর্বল ফন্দি

ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম নিঃসন্দেহে বেকারত্ব। রাজ্য রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে উত্তরণের জন্য এই সমস্যাকেই হাতিয়ার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারকে গদিচ্যুত করতে গেরুয়া শিবিরের মুখ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদিকে। নির্বাচনের বছর ছিল ২০১৪। প্রচারে ঝড় তুলে দিতে, তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৩ সালেই ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ধুরন্ধর রাজনীতিক মোদি নিশানা করেছিলেন একেবারে ঠিক জায়গায়। তিনি খেপিয়ে তুলেছিলেন দেশের বেকার বাহিনীকে। একের পর এক জনসভায় গিয়ে মোদি বলেছিলেন, দেশের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নীচে আর তারা একটি করে চাকরি বা কাজের সন্ধানে মরিয়া। অথচ এদেরকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে এরাই হয়ে উঠবে উন্নয়নের কারিগর। এটা সম্ভব। কিন্তু কংগ্রেস সরকারের লাগাতার ব্যর্থতার কারণেই উজ্জ্বল যুব শ্রেণির হাতে কোনও কাজ নেই। এই হতাশা ভেঙে যুব শ্রেণির জন্য নতুন ভোর এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদি। তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশবাসী তাঁকে আশীর্বাদ করলে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে বছরে ২ কোটি চাকরির ব্যবস্থা তিনি করবেন। 
দেশবাসী তাঁর অনুরোধ রেখেছিল, সাড়া দিয়েছিল তাঁর আহ্বানে। শুধু সেবারই নয়, ২০২৪ সালেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে ভারত। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের এখন তৃতীয় পর্ব। কিন্তু গত দশবছরে নতুন ২০ কোটি চাকরি কি হয়েছে? গেরুয়া শিবিরের কোনও পরম ভক্তও তা মনে করেন না। বাস্তব এটাই যে, দেশে বেকারের সংখ্যা কোটি কোটি। ২০২৩ সালের বাদল অধিবেশনে সরকার জানিয়েছিল যে, দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারে ৪০ লক্ষ অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯ লক্ষ ৬৪ হাজার শূন্য। এরপর হাজার হাজার কর্মী অবসর নিয়েছেন। সেসব পদ পূরণের উদ্যোগও নজরে আসে না। ২০২৩ সালের ১৬ জুন একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, গত একদশকে কেন্দ্রীয় সরকার অধিগৃহীত সংস্থাগুলিতে কর্মসংকোচনের হার দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তার ফলে ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ সালের ভিতরে ২ লক্ষ ৭০ হাজার চাকরি কমে গিয়েছে এবং একইসঙ্গে পাল্টে গিয়েছে কাজ দেওয়ার ধরন। নিয়োগের ক্ষেত্র দখল করেছে চুক্তিভিত্তি কিংবা ক্যাজুয়াল সিস্টেম। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি ক্ষেত্রে শ্রমের বাজারে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। সিএমআইই’র মতে, দেশে সার্বিক বেকারত্বের হারও ভয়াবহ। গত জুন মাসে ছিল ৯.২ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নীতি আয়োগের একটি রিপোর্টে স্বীকার করা হয় যে, ৪৫ বছরের মধ্যে ভারতে বেকারত্বের হার সেইসময় ছিল সর্বাধিক! প্রথম মোদি সরকার সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বটে, তবে তা হয়ে উঠেছিল শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই হাস্যকর। ২০২২ সালে সরকারের দেওয়া আর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, ২০১৪ থেকে পরবর্তী সাতবছরে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির জন্য ২২ কোটি কর্মপ্রার্থী আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে নিয়োগপত্র হাতে পান মাত্র ৭ লক্ষ ২২ হাজার জন। ২০১৫ সালে সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার জন। দু’বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৩৮ হাজারে। তারপর পাঁচবছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ২০২২ সালে পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয়েছে বছরে সেই ৩৮ হাজারই। 
মোদ্দা কথা, বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিপরীত প্রবণতাই কায়েম করেছে মোদি জমানা। শূন্যপদের পাহাড়চূড়ায় বসেই মোদি এবং এই সরকার ও শাসক দলের কেষ্টবিষ্টুরা ছেলে ভুলানো ছড়া শুনিয়ে চলেছেন। ২০২৪-এর ভোট বৈতরণী পেরনোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে ১০ লক্ষ চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এজন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন দেড় বছর। সেই দিনক্ষণ পেরিয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। বাস্তব অন্য কথা বললেও মোদি দাবি করা ছাড়েননি। সোমবার এক রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেড় বছরে আমাদের সরকার প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি দিয়েছে। আমাদের মতো এত চাকরি আজ পর্যন্ত কোনও সরকার দেয়নি।’ ৭১ হাজার নতুন নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁর আরও দাবি, গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে তাঁর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের প্রবণতা এখন বহুমুখী। আসলে এই সরকার বেকার সমস্যার সমাধান চায় না। তাহলে বাস্তবটা মেনে নিয়েই দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজত এবং আন্তরিক উদ্যোগ নিত। মোদিজি হাঁটছেন উল্টো পথে। একটা করে ভোট আসে এবং তখনকার মতো বেঁচে যাওয়ার ফন্দি আঁটেন তিনি। তাতে একাধিকবার তাঁর সাময়িক ও ব্যক্তিগত ‘জয়’ হলেও বারবার হেরেছে দেশ। এতে যে তাঁর পার্টি বিজেপিরও দীর্ঘ মেয়াদে কল্যাণ হবে না, তা হলফ করেই বলা যায়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাগত উচ্চশিক্ষায় দিনটি বিশেষ শুভ। ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন সাফল্য পাবেন। অর্থ ও...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা