সম্পাদকীয়

যোগসাজশ!

এ যেন টাট্টু ঘোড়া! নির্বাচনী বন্ড হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একথা বলেছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পরকলা প্রভাকর (অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী)। পর্দা ফাঁসের সময় দেখা যায়, মোট অনুদানের প্রায় অর্ধেক অর্থ একাই পেয়ে বসে আছে নরেন্দ্র মোদির দল। দশ মাস পর এই ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য থেকে এবার জানা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪-এর অর্থবর্ষে বিভিন্ন ব্যক্তি, ট্রাস্ট বা কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি যে অনুদান পেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি তার শীর্ষেও সেই বিজেপি-ই! বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তাদের অনুদান প্রাপ্তির ব্যবধান আসমান-জমিন। রাজনৈতিক দল চালানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ কোনও বেআইনি কাজ নয় এবং এই অর্থ সংগ্রহে শাসক দল কেন এগিয়ে থাকে, তার কারণ বুঝতেও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে দেশের বর্তমান শাসক দল যে হারে টাকা তুলেছে (বা শাসককে টাকা দিয়েছে), তার নজির গত সাত দশকের সংসদীয় গণতন্ত্রে নেই। এও এক রেকর্ড! খাতায়-কলমে যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও দলকে অনুদান মানে চাঁদা দিতেই পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল ফুলেফেঁপে ওঠে মূলত ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট সংস্থার অনুদানে। মনে করা হয়, এরা টাকা ঢালে সরকারি সুবিধা পেতে, বা মোটা অঙ্কের টাকা কামানোর জন্য। এই অঙ্ক মিলিয়ে কেউ নিজের সংস্থার নামে, কেউ অন্যের নামে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে। মোদি জমানার দশ বছরে দেখা গিয়েছে, জল-স্থল-অন্তরীক্ষের বৃহৎ পরিসরে থাবা বসিয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা। আবার অভিযোগ, রেল-ব্যাঙ্ক-বিমা-রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা-বিমান বন্দরের মতো বৃহৎ ক্ষেত্রও প্রায় জলের দরে বেচে দিচ্ছে মোদি সরকার। সরকারের ‘দাক্ষিণ্যে’ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বড় বড় ঋণখেলাপিদের সাতখুন মাফ হচ্ছে। মকুব হচ্ছে কর। কমছে কর্পোরেট ট্যাক্সের হার। এ সবই বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর জন্য মোদি সরকারের ‘উপহার’। বস্তুত এই শাসকের চেয়ে বড় ‘সুহৃদ’ দেখেনি কর্পোরেট দুনিয়া। তাই শাসক দলের তহবিলের জন্য হাত উপুড় করতেও তাদের কার্পণ্য নেই। অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটেই চলেছে।   
মূলত ‘দাতা’র নাম গোপন রেখে দলীয় তহবিলে অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল বিজেপি সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেওয়ার পর দেখা যায়, ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ড বিক্রি করে বিজেপি সংগ্রহ করেছে ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যা মোট বন্ড বিক্রির ৪৭ শতাংশ অর্থ। বাকি সব জাতীয়-আঞ্চলিক দলের মিলিত সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৫৩ শতাংশ অর্থ। এই ‘গোপন’ লেনদেনের ছবিটা সামনে আসতেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে শাসকের স্বচ্ছতা নিয়ে। কিন্তু মোদিবাহিনীর অভিধানে যে স্বচ্ছতা শব্দটির কোনও জায়গা নেই, তা আবার বোঝা গেল সরাসরি চাঁদা সংগ্রহের ক্ষেত্রে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যে ২০ হাজার বা তার বেশি টাকার অনুদানকেই দেখানো হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৩-২৪-এর অর্থবর্ষে (চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত) বিজেপি অনুদান পেয়েছে ২২৪৪ কোটি টাকা, যা মোট অনুদানের প্রায় ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি। তাদের সংগ্রহ ৫৮০ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ২৮৮ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, বিজেপির আগের অর্থবর্ষের তুলনায় অনুদান বেড়েছে তিন গুণ। কংগ্রেসের চেয়ে ৮ গুণ বেশি। এবছর লোকসভা ভোট ছিল। ফলে কর্পোরেটকে আরও বেশি করে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে যে শাসক দলের তহবিলের এই বাড়বাড়ন্ত তাতে বোধহয় কোনও সন্দেহ নেই। এর নিট ফল হিসেবে শোষণ, অসাম্য আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। হচ্ছেও তাই। কর্পোরেট বান্ধব প্রধানমন্ত্রীর জমানায় সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। আয় ও সম্পদ বৈষম্য বেড়েই চলেছে। ফলে বিত্তবানদের সম্পদ বাড়ছে, আর গরিবের দুর্গতির শেষ নেই। 
ঘটনা হল, শাসক দলের শ্রীবৃদ্ধির জন্য এই তৎপরতা দেখা গেলেও দেশের বেহাল আর্থিক দশা নিয়ে মাথাব্যথা নেই নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের। চলতি অর্থবর্ষের (২০২৪-২৫) প্রথম ত্রৈমাসিক এপ্রিল থেকে জুনে ভারতের আর্থিক কর্মকাণ্ড মন্থর হতে শুরু করে। জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ৬.৭ শতাংশ-এ। জুলাই-সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা আরও নেমে হয় ৫.৪ শতাংশ। আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি সহ নানা কারণে এই বেহাল দশার জন্য সুদের হার (রেপো রেট) কমাতে রাজি হয়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে, শিল্পক্ষেত্রে কার্যকলাপ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে এখন সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ককেই যেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে মোদি সরকার। দেশ গোল্লায় যাক, দলীয় তহবিলের গতিতে যেন লাগাম না পড়ে— মন্ত্র একটাই।
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৮০ টাকা৮৬.৫৪ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৬ টাকা১০৯.০৯ টাকা
ইউরো৮৭.০০ টাকা৯০.৩৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা