সম্পাদকীয়

করদাতারাই ব্রাত্য!

এ যেন গ্রামের পাঠশালা। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে জীর্ণবাড়ির ভাঙাচোরা দেওয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে জল ঢুকে ভাসিয়ে দেয় শ্রেণিকক্ষ। বাধ্য হয়ে মাস্টারমশাই অসময়ে ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে দেন। আচরণে সেই হতভাগ্য পাঠশালার মতো হলেও এ আসলে পাঠশালা নয়। এ হল গণতন্ত্রের মন্দির, ভারতের সংসদ, যা রাজনৈতিক তরজায় দিনের পর দিন স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে! অথচ এই সংসদের দিকেই সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে তাদের নানাবিধ সমস্যার সুরাহার জন্য। অধিবেশন থাকলে দেশের সব প্রান্তের জনপ্রতিনিধিরা (যাঁদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক) সব অর্থে সুরক্ষিত এই সংসদ ভবনে সমবেত হন। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে নয়, এখানে সাংসদদের একাংশের নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে বিতর্ক ও তুমুল হট্টগোলের জেরে অসময়ে ‘ছুটির ঘণ্টা’ বেজে চলেছে প্রায় রোজ। কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। এই ‘ছুটি’ বা মুলতুবি মানে শুধু দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনার সুযোগ নষ্ট হওয়া নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের খামতি তুলে ধরে তাদের কাঠগড়ায় তোলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়াও। বা আলোচনা ছাড়াই সংখ্যাধিক্যের জোরে গুরুত্বপূর্ণ বিল সরকার পক্ষকে পাশ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। সংসদ অচল মানে আম আদমি করদাতাদের কোটি কোটি টাকা জলের মতো অপচয়। কারণ সংসদের অধিবেশন চালাতে আম আদমির করের টাকাই ব্যয় হয়। তৃতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর। চলার কথা ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৬ দিনের এই অধিবেশনের দুই তৃতীয়াংশ দিন ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। কিন্তু শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত কার্যত একদিনও অধিবেশন ঠিকঠাকমতো চলতে পারেনি। কারণ দুই ধনকুবেরকে নিয়ে শাসক বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যেই লড়াই বেঁধেছে। দু’পক্ষই আতস কাচে মাপছে কার ‘দুর্নীতি’ কত বড়! কে কার কত কাছের! আর সব সমস্যা, বিষয়কে পিছনে ফেলে সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশনের দফারফা হচ্ছে শুধুমাত্র আদানি-সোরোস নিয়ে তরজায়। অদ্যাবধি এই অধিবেশনে আম আদমি ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে। অথচ তাদের করের টাকাতেই সংসার চলছে সংসদের, খাতায় কলমে সাংসদদেরও।
সাধারণ নিয়মে সংসদ চলার কথা বছরে ১৩৫ দিন। প্রতিদিন ছ’ঘণ্টা। মনমোহন সরকারের শেষের দিকে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় বছরে গড়ে ৮০ দিন। মোদি জমানায় তা আরও কমে বছরে গড়ে ৫৫ দিন অধিবেশন বসেছে। সংসদ চালানোর ‘হাতি পোষা’র খরচের হিসাব দিতে গিয়ে ২০১২ সালে তৎকালীন সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল জানিয়েছিলেন, প্রতি মিনিট অধিবেশন চালাতে খরচ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, ঘণ্টায় দেড় কোটি টাকা। পরবর্তীকালে এই হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬ সালে শীতকালীন অধিবেশনে ৯০ ঘণ্টা কাজকর্ম হয়নি। এতে অপচয়ের অঙ্ক ১৪৪ কোটি টাকা। একইভাবে অচল অবস্থার কারণে ২০২১ সালে স্রেফ ‘জলে’ গিয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা! ২০১২-র পর ২০২৪, মানে ১২ বছর অতিক্রান্ত। এই এক যুগ সময়ে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকার আশপাশে। ফলে এখন অধিবেশন অচল থাকলেও খরচ যে ঘণ্টায় দেড় কোটি টাকার দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হল, এই অপচয়ের দায় কে নেবে? খবরে প্রকাশ, অচলাবস্থার দায় মেনে নিয়ে একবার এক সাংসদ নিজের বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। এই নজির কি বর্তমান অচলাবস্থা সৃষ্টিকারীরা অনুসরণ করবেন?
ঘটনা হল, সংসদ অচল করার এই সংস্কৃতি বেশ পুরনো। মনমোহনের শেষবারের জমানায় বিরোধী আসনে বসে বিজেপি যা করেছে এখন সেই কাজই করছে কংগ্রেস এবং আরও কয়েকটি দল। ২০১২ সালের টু-জি কেলেঙ্কারি সহ নানা কেলেঙ্কারির জন্য মন্ত্রীদের ইস্তফার দাবি, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে দিনের পর দিন সংসদ অচল করে দিয়েছিল বিজেপি। এখন আদানি ইস্যুতে মোদি সরকারের সঙ্গে ওই শিল্পপতির সম্পর্কের প্রশ্ন সামনে এনে সেই পথেই হাঁটছে কংগ্রেস। দুর্নীতি নিশ্চয়ই বড় ইস্যু। তা নিয়ে আলোচনা কিংবা অন্য দাবিতে বিরোধীরা সরব হবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু যে দেশে বেকার সমস্যা, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি আম জনতার মুখের গ্রাস, রাতের ঘুম কেড়েছে এই ডামাডোলে সেই আলোচনা পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে! সন্দেহ নেই এতে লাভ হচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর। তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। যদিও বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূলসহ কয়েকটি দল এভাবে সংসদ অচল থাকার বিরুদ্ধে সঙ্গতকারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ সংসদে অচলাবস্থা চললে আঞ্চলিক দলগুলি বলার সুযোগ, সময় কম পাচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষোভে অচল অবস্থা কাটবে এমন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ফলে শুধু হট্টগোল করার জন্য কোটি কোটি টাকা অপচয় করে এই আলোচনার প্রয়োজন কতটা সেই সঙ্গত প্রশ্নটি নিয়ে এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অসময়ে ‘ছুটির’ ঘণ্টা কি বন্ধ হবে না?
7d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায়...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.১৩ টাকা৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২৭ টাকা১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো৮৬.৪২ টাকা৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা