বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

দৈন্যদশা

আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকা গেল না। একদিকে জিনিসপত্রের চড়া দাম, যার জেরে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিয়েছে, কমেছে কলকারখানার উৎপাদন। অন্যদিকে, বেকারত্বের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, তলানিতে ঠেকেছে টাকার দাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে দাবিই করুন, অর্থনীতির কোনও কোনও তাবৎ পণ্ডিত যে পূর্বাভাসই দিন, দেশের বর্তমান বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থাটা বেআব্রু করে দিল কেন্দ্রীয় সরকারেরই ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস, সংক্ষেপে এনএসও। তাদের রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০২৪-২৫-এর চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) দেশের আর্থিক বৃদ্ধি বা জিডিপির হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৫.৪ শতাংশে। এই হার শেষ দু’বছর বা সাতটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে সর্বনিম্ন। দু’বছর আগে ’২২-’২৩ সালের অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ। গত বছর ২০২৩-’২৪-এ ওই সময়ে ছিল ৮.১ শতাংশ। এবার হল ৫.৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, দেশ ‘মুদ্রাস্ফীতির’ কবলে পড়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বারবার দাবি করে এসেছে, দেশে জিডিপি বৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ হবে। তা হয়নি। কারণ, গ্রাম-শহর দুই ক্ষেত্রেই লোকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। চাহিদা কমেছে বলে উৎপাদনও কমেছে। রিপোর্ট বলছে, একমাত্র কৃষি ও পরিষেবা ক্ষেত্র ছাড়া অর্থনীতির বাকি সব ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার কমেছে। এই বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার জন্য সরকারের ব্যয়সঙ্কোচের দিকেও আঙুল তুলেছে এনএসও। অর্থনীতির ব্যাখ্যা অনুসারে, ব্যয়সঙ্কোচ মানে সরকারি প্রকল্পের খরচ ছাঁটাই করা। তা উন্নয়ন ক্ষেত্র হতে পারে আবার সামাজিক প্রকল্প হতে পারে। এর পরিণতিতে মূলত গরিব মানুষের রোজগার ধাক্কা খেয়েছে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমায় ভোগ-ব্যয়ে টান পড়েছে। 
এনএসও-র এই বক্তব্যকে আরও উস্কে দিয়েছে দেশের কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস বা সিজিএ-র দেওয়া তথ্য। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি আর্থিক বছরে বাজেট পেশের সময়ে সরকার জানিয়ে দেয়, কোষাগারের ঘাটতি জিডিপির কত শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। চলতি আর্থিক বছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ৪.৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ১৬ লক্ষ ১৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। সিজিএ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রথম সাত মাসে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৬.৫ শতাংশ। এর অর্থ, এই আর্থিক বছরের বাকি পাঁচ মাসে কোষাগারের ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়তো ব্যাপক হারে প্রকল্প ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে কেন্দ্রীয় সরকার। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে মূলত গরিব মধ্যবিত্তের উপর। তার মানে, একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারির মতো জ্বলন্ত সমস্যাগুলির সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার, এর জেরে মার খাচ্ছে শিল্পের উৎপাদন, অন্যদিকে আয়-ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে সরকার। এর পরেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বছর শেষের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ হবে বলে অসত্য আশ্বাস দিয়ে চলেছেন! আসলে মোদি জমানায় অনেক সত্যকেই আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে বারবার। কখনও কোভিড সময়কালকে ঢাল করা হয়েছে, কখনও বা রিপোর্ট চেপে রেখে প্রত্যাশার পারদ চড়ানো হয়েছে। স্বপ্ন দেখানো হয়েছে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির। যদিও ২০১৯ সালে সরকারি তরফে যে আর্থিক সেন্সাস হয়েছিল তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি যে আদৌ আশাব্যঞ্জক নয় তা কি সেই রিপোর্টেই উল্লেখ ছিল? তাই তা ধামাচাপা দিয়ে রেখে ফের আগামী এপ্রিলে আর্থিক সেন্সাস শুরু করার তোড়জোড় চলছে? 
লজ্জার কথা হল, এই জিডিপিকে দেখিয়েই কেন্দ্রের শাসক দল লম্বাচওড়া ভাষণ দেয়। জিডিপির পরিমাপ যে কোনও দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য বোঝার মাপকাঠি। যে দেশে জিডিপির হার যত বেশি অর্থনৈতিক পরিভাষায় সে দেশের আর্থিক অবস্থা তত ভালো বলে মনে করা হয়। মোদিবাহিনী গর্ব করে বলে, মোট জিডিপির অঙ্কে দুনিয়ায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে ভারত। এই দাবির মধ্যে কোনও অতিরঞ্জন নেই। কিন্তু এই তথ্যের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে আসল চেহারাটা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারত রয়েছে ১৪০-এরও পরে! মোদি সরকারের বদান্যতায় এদেশে জিডিপি যে অতি ধনী ৩-৪ শতাংশ শ্রেণির সম্পদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই তথ্যই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মন্ত্রেও জিডিপির হার বাড়াতে ব্যর্থ এই সরকার। কারণ, অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই সরকারের ব্যর্থতা একে একে সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক ক্ষেত্রে বহু প্রচেষ্টার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম উন্নতিতে আনন্দ লাভ। অর্থকর্মে শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৪.১৭ টাকা১০৭.৮৭ টাকা
ইউরো৮৭.৫৯ টাকা৯০.৯৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা