বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

আতঙ্কের নাম জিএসটি

পেট্রলিয়াম পণ্য, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং বিদ্যুতের উপর জিএসটি চাপানো হয়নি। এই পণ্যগুলিকে জিএসটির আওতাবহির্ভূত রাখা হয়েছে। এগুলির ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় করা হয় পৃথকভাবে এবং পূর্ববর্তী কর ব্যবস্থা অনুসারে। এই কর সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারগুলি। বাদবাকি পণ্য ও পরিষেবার উপর নেওয়া হয় জিএসটি। বস্তুত মূল্যযুক্ত কর বা ভ্যাটের জায়গাতেই জিএসটি আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জিএসটি কাউন্সিল পণ্যবিশেষে জিএসটির একাধিক হার ঠিক করে দেয়। কাউন্সিলের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন সময়ের জিএসটি হারের বদল হয়, এমনকী নতুন নতুন পণ্য ও পরিষেবার উপর জিএসটি চাপে কিংবা বাদ যায়। জিএসটি হল এক ধরনের পরোক্ষ কর। প্রথম মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লোকসভায় জিএসটি বিল পেশ করেন। ১০১তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৬ সালে সেটি নতুন আইনে পরিণত হয়। এরপর ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ভারতজুড়ে প্রয়োগ করা হয় জিএসটি। ভ্যাট তুলে দিয়ে জিএসটি চালু করা নিয়ে শিল্পমহলের অনেক সংশয় ও উদ্বেগ ছিল। মান্য অর্থনীতিবিদদেরও অনেকের পরামর্শ ছিল, জিএসটি অনেক সতর্কতার সঙ্গেই চালু করা উচিত, প্রয়োজনে সময়ও নিক সরকার।
কিন্তু, কে শোনে কার কথা? নরেন্দ্র মোদির যে সবচেয়ে বেশি আস্থা চমকে। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ ও উত্থান নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। সেই চমকের ধারাবাহিকতা রক্ষাতেই তাঁকে মরিয়া মনে হয়েছে বরাবর। তাঁর এই চমক সিরিয়ালের প্রথমটিই ছিল জিএসটির প্রবর্তন। বণিক মহল এবং অর্থনীতিবিদদের একটি বড় অংশ মনে করেন, মোদি সরকারের জিএসটি ব্যবস্থায় নানাবিধ ত্রুটি রয়েছে। তড়িঘড়ি চালু করতে গিয়েই ব্যবস্থাটিকে ত্রুটিমুক্ত করার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার উপর রয়েছে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে গলদ। এই কারণে ধনিক শ্রেণিকে বহুলাংশে ছাড় দিতে গিয়ে গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণের গলা কাটা পড়ছে অহরহ। আর শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (এমএসএমই)। মোদি সরকারের নির্মম কর আদায় ব্যবস্থাকে বিরোধী দলগুলি এজন্য ‘কর সন্ত্রাস’ বলে নিন্দা করেছে বরাবর। পরে বিরোধীদের সঙ্গেই কণ্ঠ মেলাতে দেখা গিয়েছে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকেও।
কে তিনি? মোদি জমানায় ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলেছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম। দেশে জিএসটি প্রবর্তনের প্রধান কাণ্ডারীও মোদিবাবুদের একদা বিশেষ পছন্দের এই অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেই তিনিই এখন আর জিএসটির গুচ্ছ গলদ ঢেকে রাখার পক্ষপাতী নন। তিনিই বলেন, ‘জিএসটি ব্যবস্থায় নানারকম সেস মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৫০ রকমের কর। অন্যান্যগুলিসমেত মোট করের সংখ্যা দাঁড়াবে শ’খানেক। কর-সন্ত্রাস এবং অতিরিক্ত করের বোঝা ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। জিএসটি তাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে!’ জিএসটি, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের একসময়ের ব্যাখ্যায় ছিল ‘কর সন্ত্রাস’ আর আজ তিনি আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছেন ‘ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি’! ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলবেন নাই-বা কেন? সামান্য পপকর্ন খেতেও সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের জিএসটি গুনতে হবে! সামাজিক সুরক্ষা নাগরিকের অধিকার। দেশের সরকার তা দিতে অপারগ। তাই দেশবাসীকেই তার সাধ্যমতো জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা কিনতে হয়। মোদির অর্থমন্ত্রকের শ্যেনদৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে সেদিকেও। এই দুই জরুরি বিমার উপরেও মোটা হারে জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে এই দুটি প্রোডাক্ট। মানুষের অনাগত ভবিষ্যৎ এবং চিকিৎসা পরিষেবার নিশ্চয়তা এইভাবে বস্তুত সরকারের লালসার শিকার হল না কি? নানা মহলের দাবি ছিল—জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা থেকে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু, জিএসটি কাউন্সিলের সর্বশেষ বৈঠকও দেশবাসীকে এই প্রশ্নে হতাশ করেছে। অথচ জিএসটি চালুর আগে সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, কর ব্যবস্থাকে সরল এবং উদার করবে নয়া ব্যবস্থা। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণ এবং এমএসএমই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে, সরকারের দাবি ও আশ্বাসের বিপরীত ফলই প্রসব করে চলেছে জিএসটি ব্যবস্থা। ভ্রান্ত নীতি আঁকড়ে থাকা সরকারের মুখে অর্থনীতির উত্তরণ এবং অমৃতকাল-এর কথা কোনোভাবেই শোভা পায় না। মন ও মুখ এক হলে জিএসটি ব্যবস্থার সরলীকরণেই আন্তরিক হতো দিল্লি, রেহাই দিত সাধারণ মানুষকেও।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাগত উচ্চশিক্ষায় দিনটি বিশেষ শুভ। ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন সাফল্য পাবেন। অর্থ ও...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা