সম্পাদকীয়

‘মৃত্যু’ ব্যবসায়ী

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘ভেজাল’ শিরোনামের কবিতায় লিখেছিলেন, ‘ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়/ ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিস মিলবে নাকো চেষ্টায়!’ কবিতাটির শেষদিকে কবি তাঁর এই উপলব্ধির কথাও জানিয়েছেন যে, ‘খাঁটি জিনিস’-এর প্রত্যাশা বৃথাই। কারণ, ‘‘ভেজাল’ নামটা খাঁটি কেবল আর সকলই মিথ্যে।’ সমাজ, সরকার ও প্রশাসনের প্রতি মুহুর্মুহু ধারালো তিরই নিক্ষিপ্ত হয়েছে লেখাটি থেকে। কবিতাটি রচিত পরাধীন ভারতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরও ভেজাল-বিরোধী যুদ্ধে কতদূর এগিয়েছি আমরা? লোক দেখানো অভিযানে কিছু চুনোপুঁটি মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ে নিশ্চয়, কিন্তু যথারীতি রেহাই পেয়ে যায় মাথাগুলি। ফলে বেশিরভাগ মামলাই আইনি লড়াইয়ের সামনে দাঁড়াতে পারে না। অতঃপর পূর্বের পাপাচারেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে দুষ্টচক্র। তাই চাল, ডাল, তেল, দুধ, ঘি, মাখন, ডিম, মাছ, মাংস, চা প্রভৃতির গুণাগুণ বিচারে সময় নষ্ট করতে আর কেউ রাজি নয়। সিমেন্ট থেকে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটের ব্যবসায় সীমাহীন দুর্নীতিই দস্তুর একই সূত্রে। ভেজাল খেয়ে আর ফাঁকিতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। তাতে আর যাই হোক, সরাসরি মৃত্যুর ঝুঁকি কম।
দুর্নীতিবাজরা তাতেও থামতে রাজি নয়, দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে জীবনদায়ী ওষুধ নিয়েও। বিভিন্ন রাজ্যে ভেজাল ওষুধের ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগ পুরনো। বহু নকল ‘ওষুধ’ মানুষ ব্যবহার করছে। স্বভাবতই, অনেকের রোগ সারছে না, এমনকী  বেঘোরে মারাও পড়ছে কিছু হতভাগ্য মানুষ। তখন ভাগ্যকে দোষ দেওয়া ছাড়া করার কিছুই থাকে না তাদের। এমনই মুহূর্তে সামনে এসেছে চোখ কপালে ওঠার মতোই এক সরকারি তথ্য। ন্যাশনাল সার্ভে অব ড্রাগসের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির জন্য কেনা ওষুধেরও ১০ শতাংশ নিম্নমানের! তার মধ্যে সুগার-প্রেশার তো বটেই, রয়েছে ক্যান্সারেরও বহুমূল্য ওষুধ! পয়সা জনগণের হলেও, সেসব কেনা হয় সরকারি উদ্যোগে এবং সরকারের তরফে। অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করতেও ভয় পাচ্ছে না দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে প্রশ্ন, ভূত সর্ষের মধ্যে বা সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের মধ্যেই দুর্নীতির শিকড় নেই তো? একদিকে মোদি সরকারের স্বাস্থ্য এবং রসায়ন মন্ত্রকের উদ্বেজনক রিপোর্ট এবং তার উপর রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির চাপ, যার সভাপতি তৃণমূল এমপি কীর্তি আজাদ। এই জাঁতাকলে পড়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুষ্টচক্রের জালটি আসলে আন্তর্জাতিক! ওষুধে ভেজাল কারবার বন্ধ করার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রক আশ্বস্তও করেছে  সকলকে। কিন্তু কর্তাব্যক্তিদের এসব যে পিঠ বাঁচানোর ‘তৎকাল’ কৌশলমাত্র, তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তা বোঝে দেশবাসী।
রাজশেখর বসু তাঁর ‘ভেজাল ও নকল’ প্রবন্ধেই বোধহয় শেষ কথাটি লিখে গিয়েছেন, ভেজাল ও নকল এ দেশে নতুন নয়। দেশি বিক্রেতার সাধুতায় এতই অনাস্থা যে খাঁটি জিনিসের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ‘সাহেব-বাড়ি’র দ্বারস্থ হতে হয় আমাদের। এই জাতিগত নীচতায় আমরা গ্লানি বোধ করি না। স্বাধীন দেশে আবির্ভূত মহাকলিযুগে বেড়ে গিয়েছে সর্বপ্রকার দুর্নীতি। সম্পূর্ণ প্রতিকার সরকারের অসাধ্য। জনসাধারণের অধিকাংশেরই সামাজিক কর্তব্যবোধ কম, একজোট হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার উৎসাহ তাদের নেই। অনেক বীরপুরুষ ট্রাম-বাস পোড়ায়, বোমা ফেলে, পুলিসকে মারে, মান্যগণ্য লোককে আক্রমণ করে, শ্রমিক ও ছাত্রদের খেপায়, কিন্তু ভেজাল নকল কালোবাজার প্রভৃতি দুষ্কর্ম সম্বন্ধে তারা ভীষণই নির্বিকার! শুধু অশান্তির প্রসারেই তারা সিদ্ধহস্ত। লেখকের বক্তব্য ছিল, কোনও অনাচার যখন দেশব্যাপী হয় এবং জনগণ তা নির্বিবাদেই মেনে নেয় তখন অল্প কয়েকজন সমাজহিতৈষীর উদ্যোগেই প্রতিকারের সূচনা হতে পারে। এই প্রসঙ্গে সতীদাহ নিবারণ, নারীশিক্ষা প্রবর্তন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সাফল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, ভেজাল ও নকল নিবারণের জন্যও আদতে প্রয়োজন মুষ্টিমেয় নিঃস্বার্থ উৎসাহী মানুষ। দুধ, ঘি, আটা, ময়দা, মটরশুঁটি, চা প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভেজালের বাড়াবাড়ি দেখে উদ্বিগ্ন হয়েই প্রবন্ধটি লিখেছিলেন মনস্বী লেখক। লক্ষণীয় যে তাঁর ওই নাতিদীর্ঘ পণ্য তালিকায় ওষুধের কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই ধরে নিতে হয়, সেদিনের ব্যবসায়ীরা এতটা নীচে নামার কথা ভাবতেও পারেনি। মুনাফার নেশা আজ সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে বহুদূর প্রসারিত। আজকের ভেজালের কারবারিরা আসলে ‘মৃত্যু’ ব্যবসায়ী। তাই সরকার বলে যদি কিছু এই দেশে অবশিষ্ট থাকে তবে তার উচিত, ভেজাল প্রতিরোধে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ। এই পাপকর্মে লিপ্ত মানুষের চেহারায় ইতরগুলির জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থাই করতে হবে। সর্বসাধারণকেও সর্বতোভাবে থাকতে হবে সেই উদ্যোগের পাশে।
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে উন্নতি। ব্যবসায় গতি বৃদ্ধি। ব্যবসা ক্ষেত্রে লগ্নিবৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সাফল্য। সন্তান বিষয়ে কোনও সুখবর পেতে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৬ টাকা৮৬.৭০ টাকা
পাউন্ড১০৪.৫৩ টাকা১০৮.২৪ টাকা
ইউরো৮৬.৫১ টাকা৮৯.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা