সম্পাদকীয়

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে জয়ধ্বনি

বোধোদয় দেরিতে হলেও মন্দ নয়। দেশের প্রধান শাসক দল বিজেপি এবং একাধিক বিরোধী দলের বিলম্বিত বোধোদয় তাই প্রশংসার দাবি রাখে। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলার মহিলাদের জন্য চালু করেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। তার মারফত সাধারণ শ্রেণিভুক্ত বেনিফিসিয়ারিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে সরাসরি ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। তবে প্রতিমাসে ১২০০ টাকা দেওয়া হয় এসসি এবং এসটি শ্রেণিভুক্ত মা-বোনেদের। এই প্রকল্প চালু হতেই বিজেপি নেতারা রে রে করে তেড়ে এসেছিলেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পার্টি ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এই ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’র নিন্দা শোনা যায় তাঁর মুখে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ‘দানখয়রাতির রাজনীতি’ অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক। ‘সস্তা ভোট রাজনীতি’র খপ্পরে পড়ে বাংলার অর্থনীতিই নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে! কিন্তু কট্টর সমালোচকদের সংবিৎ ফিরতে অবশ্য দেরি হয়নি। বছর ঘুরতেই দেখা যায়, নির্বাচনী পরীক্ষায় মেয়েদের ভোট নিশ্চিত করার বাসনায় একাধিক রাজ্যে বিজেপিই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ টুকছে! ২০২৪ সাল পেরনোর আগে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলির কথা ধরলে লক্ষণীয় যে, সবাই মিলে গণটোকাটুকিতে ব্যস্ত! ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’কে মাঝখানে রেখে চারধারে বসে গণটোকাটুকি করেছে বিজেপি এবং অন্য একাধিক বিরোধী দলও। অর্থাৎ বিজেপি তার ফেলা থু থু চেটেছে নির্বিকার চিত্তে। আর বিজেপির কুৎসা দেখেও তৃণমূলের যেসব মিত্র দল ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছিল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নকল করতে তাদের কোনও অসুবিধাই হয়নি। 
সব মিলিয়ে এখন দেশজুড়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই জোয়ার। তবে চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা পদার্থ কমবেশি সকলের থাকে, তাই অন্য রাজ্যগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া প্রকল্প-নামটি সরাসরি নেয়নি, নিজের পছন্দমতো তা পাল্টেটাল্টে নিয়েছে। যেমন কোনও রাজ্যে সেটি ‘মাহাতারি বন্ধন’ আবার কোথাও গালভরা ‘লাডলি লক্ষ্মী’ কিংবা ‘মাঈয়া সম্মান যোজনা’। যাই হোক, বস্তুটি বাস্তবে অভিন্ন—সে ভাতকে আপনি চাউল, রাইস, অন্ন প্রভৃতি যে নামেই ডাকুন না কেন সেটি ক্ষুধানিবৃত্তির চালসেদ্ধই বটে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নকলনবিশদের মধ্যে এখন যেটা বেশি চিত্তাকর্ষক তা হল—টাকার পরিমাণ—কে কতটা বেশি দিতে পারে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছে তারই। যে সরকার যত বেশি টাকা দিতে পারবে, সেই রাজ্যের শাসক দল ভাবছে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে বেশি গোলে এগিয়ে থাকবে সে। 
মানুষকে হাত খুলে দেওয়া ভালো। তবে দেখতে হবে প্রকৃত গরিব মানুষেরই হাতে যেন পৌঁছয় টাকাগুলি, মাঝপথে কোনও নেপোয় না মেরে দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির শুরু এবং শেষকথা হল ‘মানুষ’। তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে গরিব ও মহিলা। এই দুই শ্রেণির ক্ষমতায়নই তাঁর স্বপ্ন। তাই গরিব নারীর মুক্তির সংগ্রামে নেমেই তিনি একে একে চালু করেছেন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবা ভাতা, মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সবলা মেলা প্রভৃতি। বাংলার গত এক দশকের সমাজ-অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করলে এই সত্যই ধরা পড়ে যে—বাংলায় মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতা এবং রাজনীতি ও প্রশাসনে তাঁদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কমেছে বাল্যবিবাহ, মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার এবং নারীনির্যাতন। জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা রিপোর্টেও উজ্জ্বল জায়গা পাচ্ছে বিষয়গুলি। যেমন পারিবারিক ভোগব্যয় সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গ্রামীণ ভারতে কেনাকাটার বহর বাড়ছে। এর পিছনে সক্রিয় সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির প্রত্যক্ষ প্রভাব। কারণ একাধিক সরকারি প্রকল্পে গরিব মানুষের হাতে নিয়মিত কিছু অর্থ উঠছে। তা দিয়ে সংসার খরচের বাইরেও কেনাকাটা করছে তারা। গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় ধীরে হলেও সমৃদ্ধি আসছে তারই সুবাদে। গ্রামীণ ভারতে ২০২৪ সালে অতিরিক্ত পণ্যবিক্রয় বা গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশ। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই সমীক্ষা মেনে নিয়েছে যে পথ দেখাচ্ছেন মমতার বিকল্প এবং ইনক্লুসিভ ইকনমিকস। কারণ, যেসব রাজ্যে সরকারি প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গরিব মানুষের হাতে নগদ জোগান বৃদ্ধির ব্যবস্থা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে, পণ্য বিক্রয় বেড়েছে মূলত সেখানেই। এমন তালিকা শীর্ষে স্বভাবতই শোভা পাচ্ছে দুটি নাম—পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়। আরও সুখের কথা এই যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মধ্যে এই প্রশ্নে প্রতিযোগিতাই লক্ষণীয়। বস্তুত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে জয়ধ্বনি দিয়েই ২০২৪-এর বিদায় এবং ২০২৫-এর শুভারম্ভ।
3d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

একাধিক সূত্র থেকে আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধির যোগ। কাজকর্মে উন্নতি হবে। মানসিক চঞ্চলতা ও ভুল...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৩ টাকা৮৬.৬৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.৭২ টাকা১০৮.৪৪ টাকা
ইউরো৮৬.৮১ টাকা৯০.১৭ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা