বিশেষ নিবন্ধ

বাংলাকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত বন্ধ হোক!
হিমাংশু সিংহ

‘দুনিয়ার হিন্দু এক হও...।’ বাংলাদেশ ইস্যুতে ফায়দা লুটতে আওয়াজ তুলছেন হতাশ দলবদলু নেতা। বঙ্গ বিজেপি’র যেরকম দিশাহারা অবস্থা, তাতে আর কী-বা করার আছে তাঁর। এই স্লোগান হিন্দু ধর্মের স্বার্থে না ঢাল তরোয়াল ছাড়া ভোট বৈতরণী পার করার বাধ্যবাধকতায়? জঙ্গি অনুপ্রবেশকে হাতিয়ার করে এপারের পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে। বিএসএফ দেখেও কিছু দেখছে না, অভিযোগ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্বেগ সঙ্গত। সীমান্তের কাছেই জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ এবং আনসারুল্লা বাংলা টিম যে সক্রিয়, তা সবারই জানা।
বিগত একুশ ও চব্বিশ সালে বাংলার মানুষের মন জেতার কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর এবং চলতি সদস্য সংগ্রহ অভিযানের শোচনীয় পরিণতি খতিয়ে দেখার পরই আবার অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে হিন্দুত্বের মুখিয়া সাজার প্রাণান্তকর চেষ্টা! বারবার সময় বাড়িয়েও সদস্য সংগ্রহ অভিযান টার্গেটের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি গেরুয়া শিবির। আজ রবিবার পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েও ফল হয়নি বিশেষ। বার্ধক্যের ভারে নুইয়ে পড়া অতীত দিনের যে নায়ক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারেনি দল। অগত্যা বিয়েবাড়িতে সদ্য বিবাহিত কনের হাতে সদস্যপত্র তুলে দিয়ে পোজ দিতে দেখা গিয়েছে অপর এক এমপিকে। এতেই বোঝা যায় এ রাজ্যে গেরুয়া সংগঠনের দৌড়। কিন্তু বাজারের যাবতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহারের পর আর কি মেরুকরণের পুরনো ওষুধ কাজে দেবে? একদিন এ রাজ্যে বামপন্থীদের স্লোগান ছিল ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। অতি ব্যবহারে এবং সাড়ে তিন দশকের ভণ্ডামি দেখে দেখে আজ তা একেবারে ক্লিশে। লাল দল আজ এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে জেলায় জেলায় সিপিএমের সম্মেলন চলছে, মানুষ ঘুরেও দেখছে না। সেই বাতিল বামপন্থীদের স্লোগান নকল করে কেউ যদি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের উদার হিন্দুত্বকে কলঙ্কিত করতে চায়, কেউ যদি উন্নয়নকে পিছনে ঠেলে বিভাজনকে বাংলার যুযুধান ভোট রাজনীতির অস্ত্র করতে চায়, তাহলে সেটা আবারও ব্যুমেরাং হতে বাধ্য। এ রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষ ওই ফাঁদে পা দিতে রাজি নন। কারণ নাগপুরের মেকি হিন্দুত্ব পরখ করা হয়ে গিয়েছে বাঙালির। চোদ্দ মাস পর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট। মধ্যিখানে প্রথমে দিল্লির নির্বাচন। বছর শেষে বিহারের ভোট। অতঃপর ছাব্বিশের এপ্রিল মে মাসে বাংলাকে উথালপাথাল করা নির্বাচন। সঙ্গী কেরল ও তামিলনাড়ুও। জাতীয় রাজনীতির পক্ষে প্রতিটি লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর কে না জানে, আপাতত শুরু হওয়া নতুন বছরের রাজনৈতিক কিস্‌সা আবর্তিত হবে ওই পথেই।  
আসলে বড় অশান্ত সময়ে শুরু হল নতুন বছর ২০২৫। পৃথিবীজুড়ে একাধিক যুদ্ধ, লোকক্ষয়। অর্থনৈতিক মন্দার নিঃশব্দ উঁকি। অশান্ত গাজা। 
বিধ্বস্ত ইউক্রেন। ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া। এবং অবশ্যই এক আশ্চর্য সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মানচিত্রে যুদ্ধ, অশান্তি, আর্থিক মন্দা কিছুই অপ্রত্যাশিত নয়। 
কিন্তু পড়শি দেশের মধ্যেই যুদ্ধ, হিন্দু নিপীড়ন, মন্দিরে আগুন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনার প্রভাব এপার বাংলায় পড়তে বাধ্য। 
আদালত পর্যন্ত মূক ও বধিরের ভূমিকায়। ইউনুস সরকারের মুজিবুরের ভূমিকাকে অস্বীকার আসলে ভারত বিরোধিতারই উগ্র প্রকাশ। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে ভুলিয়ে দিতেই বাংলাদেশের এই তালিবান হয়ে ওঠা। তারই ফায়দা লুটতে পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের শাসক ‘হিন্দু’ বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে দেখেই মনে কু ডাকছে। এবং যদি সেই কাজে সীমান্তের পাহারাদার বিএসএফের মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে বল঩তেই হবে পরিস্থিতি অত্যন্ত গম্ভীর। কারণ অভিযোগটা করা হয়েছে এই বাংলার জনপ্রিয়তম মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
সবাই জানে এ রাজ্যের সঙ্গেই বাংলাদেশের সীমান্ত প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এটাই সর্বোচ্চ। এর একটা বড় অংশই নদীপথ। সেখানে কাঁটাতারের বাধা নেই। স্থলভাগেরও একটা বড় অংশ এখনও উন্মুক্ত। সীমান্তরক্ষীদের প্রহরাও অজ্ঞাত কারণে দুর্বল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে অসম ও ত্রিপুরা। দু’টিই ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য। সেই কারণে নাগপুরের চুঁইয়ে পড়া হতাশা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। যাতায়াতে কোনওদিনই তেমন কোনও বাধা নেই। একাত্তরের পর দু’দেশের সুসম্পর্ক এই আদানপ্রদান ও মেলামেশাকে আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও নিরুপদ্রব করেছে। ফলে পদ্মাপারের অশান্তি এবং নৈরাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রভাব যে পশ্চিমবঙ্গে পড়বে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। সেই সুবাদেই গত কয়েক মাসে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেভাবে একের পর এক বাংলাদেশি জঙ্গি মডিউলের (ধুলিয়ান ও জলঙ্গী) সন্ধান মিলেছে। শুধু মমতার সরকারকে দায়ী না করে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমান্ত প্রহরাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা কী করে এখানে ঘাঁটি গাড়ল, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কেউ বলছে সব মিলিয়ে জঙ্গিদের ৪০টি স্লিপার সেল সক্রিয়। আবার কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে সংখ্যাটা আরও বেশি। বলাই বাহুল্য, সেই প্রশ্ন আজ রাজনৈতিক দলাদলি ও ক্ষমতা দখলের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিএসএফের ব্যর্থতা কিংবা গাফিলতিকে অস্বীকার করা যায় কি? অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একটা বড় অংশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ এবং শিলিগুড়ি করিডর বা বিতর্কত চিকেন নেককে জঙ্গিদের ডেরা বানানোর আসল উদ্দেশ্য যদি ভয় দেখিয়ে হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করা হয়, তাহলে বলতেই হবে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না। প্রশাসনিক সভায় সেই চক্রান্তের ব্লু প্রিন্টই ফাঁস করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 
কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, আবারও ভুল করছে বিজেপি। মেরুকরণ মানুষের মন জিততে পারে না। আর স্টেরয়েড রোজ রোজ ব্যবহার করা যায় না। সংগঠন শূন্য, গ্রহণযোগ্যতা  তলানিতে, মুখ নেই, নেই দল অন্তপ্রাণ কর্মীও। এমন একজন আগমার্কা বাঙালি নেতাও নেই যাঁর নামে কিংবা নেতৃত্বের ধারে ও ভারে জনসভায় লোক হয়। এই বাংলার মানুষের আবেগ, চাওয়া পাওয়া আন্দোলিত হয়। যিনি মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন মমতা দূর অস্ত, তৃণমূলের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণির নেতা-নেত্রীদের। বঙ্গ বিজেপি’র এই শোচনীয় সাংগঠনিক অবস্থার মধ্যেই পৌষ সংক্রান্তি শেষ হলেই নাকি নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হবে। সেই গেরুয়া পুত্রের জন্য অপেক্ষা নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু তাঁকে মুখ করে ভোটে লড়ার সাহস কিংবা সামর্থ্য হবে কি? নাকি মোদি–অমিত শাহের আড়ালেই মুখ লুকোবে বাংলা দখলের আহ্লাদ! ভোট এলেই দেড় হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়িয়ে এনে প্রধানমন্ত্রীকে এ রাজ্যে বিজেপির শতছিন্ন সংগঠনের নৌকো বাইতে বলা হয়। অলিতে-গলিতে প্রধানমন্ত্রীর সভা। তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে নেতা ভাঙিয়ে আনতে হয় অন্য দল থেকে। একুশে সেই খেলা জমলেও চব্বিশ থেকেই দল ভাঙায় ভাটা চলছে। ছাব্বিশের ভোটে দল ভাঙার ওষুধে কাজ হবে না বুঝতে পেরেই অগত্যা সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে চাগিয়ে তোলার মরণপণ চেষ্টা। হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের অভিঘাত আমাদের মতো গরিব দেশে বিরাট। কিন্তু ওটাই সব নয়। মানুষ কাজ চায়, চায় উন্নয়ন। যাবতীয় কেন্দ্রের টাকা দেওয়া বন্ধ করে হিন্দু বন্ধু সাজা এবারও মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এভাবে ‘দুনিয়ার হিন্দু এক হও’ আওয়াজ তুলে পশ্চিমবঙ্গ জয়ের দুঃস্বপ্ন যাঁরা দেখছেন, একুশ ও চব্বিশ সালের মতো তাঁরা আবারও অকৃতকার্য হবে। বাংলার মানুষ যে কোনওরকম ধর্মীয় বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সহাবস্থান ও সৌভ্রাতৃত্বই এপারের হিন্দু ধর্মের ভিত্তি। নাগপুরের কট্টর সঙ্ঘ পরিবার রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ এবং চৈতন্যদেবের বাংলায় অন্য কোনও কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আমদানি করতে চাইলে বারবার ব্যর্থ হওয়াই দেওয়াল লিখন। আরএসএসের একচোখা হিন্দুত্ব কোনওদিন আম বাঙালির হতে পারে না। 
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

একাধিক সূত্র থেকে আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধির যোগ। কাজকর্মে উন্নতি হবে। মানসিক চঞ্চলতা ও ভুল...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৩ টাকা৮৬.৬৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.৭২ টাকা১০৮.৪৪ টাকা
ইউরো৮৬.৮১ টাকা৯০.১৭ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা