সম্পাদকীয়

নিছকই ঢক্কানিনাদ!

ধাপ্পা এক: ‘ক’-বাবুর পরিবারে চারজন লোক। মাসিক আয় এক লক্ষ টাকা। অর্থাৎ মাথাপিছু আয় ২৫ হাজার টাকা। ‘খ’-বাবুর দু’জনের পরিবারের আয় মাসে ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাথাপিছু আয় ৩৫ হাজার টাকা। মোট টাকার অঙ্কে ‘ক’-বাবুর পরিবারের আয় ‘খ’ বাবুর পরিবারের থেকে বেশি। কিন্তু এই আয়ের হিসাব দিয়ে ‘ক’ বাবুর পরিবারকে বেশি অবস্থাপন্ন বলে দাবি করলে প্রশ্নকর্তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। দেশের আম আদমিকে ভুল বুঝিয়ে সেই ধাপ্পাটাই দিয়ে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি থেকে সীতারামনদের মতো রাজনীতিকরা! মোট আয় দিয়ে যে কিছুই আসে যায় না, প্রকৃত আয় বোঝাতে যে মাথাপিছু আয়কেই শিরোধার্য করা উচিত—সেই সত্যটা সচেতনভাবে আড়াল করে দেশবাসীকে বোকা বানানোর খেলায় মেতেছে মোদিবাহিনী। মোদি সরকারের দাবি হল, ২০২৯ সালের মধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে ভারত। এই দাবি ‘ক’ বাবুর অবস্থাপন্ন হওয়ার দাবির মতোই একটা বড় ধাপ্পা। ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি। তাই এদেশের জিডিপি বেশি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এই কারণেই ভারত এখন পঞ্চম স্থানে রয়েছে, যা তিনে উঠে আসবে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর। তাহলে কি ভারতের আর্থিক স্বাস্থ্য জার্মানি, ব্রিটেন, জাপানের চেয়েও ভালো? উত্তরটা জলের মতো সহজ। না। ভারতের অবস্থা আসলে ‘ক’ বাবুর পরিবারের মতো। লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় আয় বেশি, কিন্তু মাথাপিছু আয়ে কম। যেমন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের হিসেবে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ২২০০ ডলার। ব্রিটেনের ৪৭ হাজার ৩৭৪ ডলার। এতেই পরিষ্কার ভারত আর ব্রিটেনের পার্থক্যটা। ঘটনাও হল, জিডিপির নিরিখে এখন ভারত বিশ্বে পঞ্চম স্থানে থাকলেও মাথাপিছু আয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪১তম। একেবারে পিছনের সারিতে। তবু ঢক্কানিনাদ চলছেই! 
ধাপ্পা দুই: রীতিমতো কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে দাবি করা হচ্ছে, মোদি জমানায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তার মানে খরচ করার মতো আয়ও বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের তথ্যপ্রকাশ করে সরকার জানিয়েছে, ২০১১-১২ সালে গ্রামে মাথাপিছু মাসিক খরচ ছিল ১ হাজার ৪৩০ টাকা। সেটা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১২২ টাকা। একইভাবে শহরে মাথাপিছু খরচ ২ হাজার ৬৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৯৯৬ টাকা। মোদি সরকারের দাবি, আয় বেড়েছে বলে খরচ করার সামর্থ্যও বেড়েছে। গৃহস্থের মাসিক খরচ দেখলে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা বোঝা যায়। একটি পরিবারের কোন খরচের কতটা, কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে তা থেকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈষম্যের ছবিটা ফুটে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে মোদির লোকজনেরা খরচ বৃদ্ধির সরল অঙ্কটা পেশ করে বোঝাতে চাইছেন, সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, অত্যন্ত সুচতুরভাবে মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটিকে এর মধ্যে রাখা হয়নি। কারণ তাতে পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে। কীরকম? ধরা যাক, ২০১১ সালে কোনও ব্যক্তি ১০০ টাকা রোজগার করলে তাঁর নিত্যপণ্য কিনতে খরচ হতো ৬০ টাকা। সেই ব্যক্তির রোজগার দ্বিগুণ বেড়ে হল ২০০ টাকা। কিন্তু সেই একই দ্রব্যসামগ্রী কিনতে তাঁর খরচ হচ্ছে ১৮০ টাকা। তার মানে, ১০০ টাকা উপার্জনের সময়ে তাঁর সঞ্চয় হতো মাসে ৪০ টাকা। এখন সেটা কমে হচ্ছে ২০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় আসলে মানুষের প্রকৃত আয় ও সঞ্চয় দুটোই কমেছে। ফলে খাই-খরচের বাইরে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ যেমন পরিবহণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদিতে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই কারণে দেশে কিছু ক্ষেত্রে চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে। তবু আয় বৃদ্ধির ঢক্কানিনাদ চলছেই! 
আসলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মকেই নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করে চলেছে মোদিবাহিনী। নিম্নচাপ হলে বৃষ্টি হবেই। ১৪২ কোটির দেশে জিডিপি বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই ভারত একদিন তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাবটাও তেমনই। কিন্তু ঘটনা হল, এই বৃদ্ধি সকলের জন্য হয়নি। বরং মোদি জমানায় আর্থিক অসাম্য বেড়েছে। আয়ের মাপকাঠিতে সমাজের উপরের দিকে থাকা জনসংখ্যার এক শতাংশ দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক। কিন্তু আম জনতার প্রকৃত আয় বাড়ার বদলে কমেছে। সঞ্চয় আরও কমেছে। শিয়রে তাই সঙ্কট। গরিব-মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার এই কঠিন লড়াই থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অন্তত এই জমানায়।
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে উন্নতি। ব্যবসায় গতি বৃদ্ধি। ব্যবসা ক্ষেত্রে লগ্নিবৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সাফল্য। সন্তান বিষয়ে কোনও সুখবর পেতে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৬ টাকা৮৬.৭০ টাকা
পাউন্ড১০৪.৫৩ টাকা১০৮.২৪ টাকা
ইউরো৮৬.৫১ টাকা৮৯.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা