হইচই প্ল্যাটফর্মে আসছে অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘নিখোঁজ ২’। ‘বৃন্দা’র চরিত্র নিয়ে ফিরছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। একান্ত আড্ডায় সেই জার্নির কথা ভাগ করে নিলেন নায়িকা।
নতুন বছরে কোনও রেজোলিউশন নিলেন?
আমি কোনও রেজোলিউশনই নিই না। এসব কোনওদিন রাখতে পারিনি। আগে তাও ভাবতাম। এখন সাপ্তাহিক রেজোলিউশন নিই (হাসি)। সারা বছর প্রচণ্ড কাজ করতে হবে, এটাই ইচ্ছে। যত বয়স বাড়ছে, মনে হচ্ছে, হাতে সময় কম। অনেক কাজ করতে হবে।
২০২৫-এ অনেকগুলো সিনেমা আছে?
সায়ন্তন ঘোষাল, অর্জুন দত্তর একটা করে সিনেমা করছি। আরও একটা বাংলা ছবি আছে। ওয়েব শো করতে ভালোই লাগে। কিন্তু সিনেমা না করলে একটু মন খুঁতখুঁত করে। ফলে সিনেমাটাও করতে চাই। বলিউডের একটা ছবির কাজও করছি (হাসি)।
‘নিখোঁজ ২’-এ তো এই গল্পটা শেষ?
হ্যাঁ, নাহলে আর কত ধৈর্য ধরা যায় (হাসি)?
শ্যুটিং শুরুর আগে প্রথম পার্টটা আবার দেখেছিলেন?
নিজের সিনগুলো আমি ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে দেখে নিই। যাতে আমার ওই ম্যানারিজম, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, মুখের অভিব্যক্তি, চরিত্রটি ইমোশনাল দৃশ্যে কেমন ছিল, রাগের দৃশ্যে কেমন ছিল, সেগুলো ধরতে সুবিধে হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের বদল আসে। তাতে বৃন্দার যে যে বদল প্রয়োজন, তা করতে হয়েছে। বাকিটা ঝালিয়ে নিয়েছি। নিজেকেই নিজে দেখছি (হাসি)। বেশ মজার ব্যাপারটা।
নিজের কাজ ফিরে দেখলে মনে হয়, আরও ভালো হতে পারত?
ডাবিংয়ের সময় থেকেই এটা মনে হয়। কিন্তু যখন ওই অভিনয়টা করছি, তখন আমি সেটাতে বেস্ট। তখন তো কম্প্রোমাইজ করিনি। আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। পরিচালকের কোনও একটা শট দেখে মনে হতে পারে, দারুণ। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে ওই একই শট আবার দেওয়ার কথা বলি। ফলে যখন কাজটা করেছি, তখন ওটাই সেরা ছিল। কিছুদিন পরে সেটা দেখলে অন্যরকম মনে হতেই পারে।
নিজের তৃপ্তি নাকি দর্শকের প্রশংসা, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ?
দু’টোই। তবে এমন একটা কাজ করলাম, যেটা মিডিওকার মনে হল, এমন ঘটনা আমার সঙ্গে কখনও ঘটেনি। কারণ আমি কাজটা সেভাবে অ্যাপ্রোচই করি না। যখন যে কাজটা করি, জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ হবে, সেভাবেই অ্যাপ্রোচ করি। একটা সিনেমা বা সিরিজ নিয়ে দর্শকের অনেক বক্তব্য থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাজটা কখনও যেন কমজোরি না হয়। আমার জব স্যাটিসফ্যাকশন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দর্শকের ভালো লাগাটাও জরুরি।
ওয়েবে ফ্র্যাঞ্চাইজি সিরিজ কি বেশি হচ্ছে?
কয়েকটা তো নিশ্চয়ই হচ্ছে। আবার ‘পাতাললোক’-এর মতো সিরিজে, প্রথম সিজনের গল্প কিন্তু দ্বিতীয় সিজনে দেখা যাচ্ছে না। আমি প্রচুর কনটেন্ট দেখি। সেকেন্ড সিজনকে প্রথম সিজনের মতোই বা তার থেকে ভালো করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।
ওয়েবের কনটেন্টে কি একঘেয়েমি এসেছে?
ওয়েব যখন প্রথম এল, নতুন মাধ্যম ছিল। অনেক রকম কনটেন্ট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে। সেন্সরের অত চাপ ছিল না। যে কোনও জিনিসের প্রাথমিক উত্তেজনাটা একসময় থিতিয়ে যায়। এখন মানুষ জানে কোনটা দেখবে, কোনটা দেখবে না। ২০২০-তে যা রিলিজ করত, আমরা সব দেখতাম। ২০২৪-এ কত কিছু এসেছে! ফলে এখন মানুষ সেটাই সাবস্ক্রাইব করেন, যেটা পছন্দ করেন।
বাংলা ওয়েবে কি মহিলাকেন্দ্রিক কাজ বেশি হচ্ছে?
নায়কোচিত উন্মাদনা থেকে বেরিয়ে আমরা অন্তত এই একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি, যেখানে মহিলা চরিত্রদের নিয়ে বেশি কাজ হচ্ছে। বলুন তো, আগামিকাল যদি বাংলার সেরা অভিনেত্রীদের নিয়ে ‘খাদান’-এর মতো একটা ছবি হয়, এই উন্মাদনা তৈরি হবে কি? দক্ষিণ ভারতের কথাও যদি ধরি, সেরা অভিনেত্রীদের নিয়ে যদি কেউ ‘পুষ্পা’ বানায়, এমন গ্রহণযোগ্যতা থাকবে? আমি নিশ্চিত সেটা হবে না। কারণ আমাদের দেশ, সমাজ সবকিছুই ‘হিরো ওরশিপ’ করতে চায়। সেখানে অন্তত ওয়েব প্ল্যাটফর্মে গৃহহিংসা, মানসিক নির্যাতন, ধর্ষণ, র্যাগিং নিয়ে কাজ হচ্ছে। এই গল্পগুলোও বলা দরকার। কারণ এগুলোই আজও হচ্ছে চারপাশে।
‘বৃন্দা’র কোন সত্তা স্বস্তিকার সঙ্গে থেকে যাবে?
বৃন্দার মরিয়া হয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করার অভ্যেসটা আমার সঙ্গে থাকবে। কোনও ঘটনার শেষটা আদৌ হবে কি না, সেটা না জেনে মরিয়া হয়ে ও চেষ্টা করে। নিজে না পারলে সাহায্যও নেয়। কখনও বৃন্দার মা-সত্তাটা উপরে চলে আসে, কখনও পুলিস-সত্তা। মাথার কথা শুনবে, নাকি মন— এই দ্বন্দ্বটা চলতে থাকে। সেটা অভিনেতা হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে দারুণ লেগেছে।
স্বরলিপি ভট্টাচার্য