সম্পাদকীয়

ইতিহাস সাক্ষী

‘জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা, মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল।’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আবেগমথিত শোকজ্ঞাপন দেখে যদি এই জনপ্রিয় বাংলা গানটির প্রথম দু’কলি মনে পড়ে যায় তা কি খুব দোষের হবে? যে কোনও মৃত্যুতেই শোকপ্রকাশ এক চিরায়ত শিষ্টাচার। মৃত্যু শত্রুতার দেওয়াল ভাঙে, এ কথাও অজানা নয়। সেই হিসেবে নরেন্দ্র মোদি যা বলেছেন, তা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাঁর ব্যক্তিত্ব, কাজকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ আর সমালোচনায় অহরহ বিদ্ধ করেছেন, যাঁর সাড়া জাগানো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে বাতিল অথবা সংশোধন করে ইতিহাসের পাতা থেকে ‘মনমোহন-জমানা’ মুছে দিতে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন সেই উত্তরসূরি মোদির আজকের মূল্যায়নকে ‘মেকি’ মনে হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক? কারণ একজন যোগ্যকে প্রকৃত সম্মান দেখাতে হলে তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি যা করেছেন এবং করে চলেছেন তার বিচার করবে ইতিহাস। প্রয়াত মনমোহন সিং কোনও পেশাদার রাজনীতিবিদ ছিলেন না। কিন্তু অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় পাণ্ডিত্য ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি যেভাবে প্রথমে অর্থমন্ত্রী, পরে প্রধানমন্ত্রী পদের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছেন, তাকে কুর্নিশ করতে ভুলছে না গোটা বিশ্ব। ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে ১৯৪৭ সালে। আর অনেকের মতে, ১৯৯১ সালে মনমোহনের হাত ধরে এসেছে দেশের আর্থিক স্বাধীনতা। নেহরু-ইন্দিরা জমানার কিছু পুরনো ধ্যানধারণা বদলে আর্থিক সংস্কারের যে পথ দেখিয়েছিলেন তিনি, তাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি দোর্দণ্ডপ্রতাপ মোদিও। অথচ এই মৃদুভাষী, সজ্জন, পণ্ডিত ও দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষটিকে শুনতে হয়েছে ‘গান্ধী পরিবারের রাবার স্ট্যাম্প’, ‘মৌনী বাবা’র কটাক্ষ! মোদিবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ‘নীতিপঙ্গুত্বের’ অভিযোগও তুলেছে বারবার। আর স্বয়ং মোদি! ইউপিএ-২ আমলে দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলতে গিয়ে লোকসভায় দাঁড়িয়ে মোদি বলেছিলেন, ‘রেনকোট পরে বাথরুমে কীভাবে স্নান করতে হয়, সেটা ডক্টর সিংয়ের কাছে শেখার’। সেই তিনিই এখন প্রয়াত মনমোহনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের বিকাশ ও প্রগতিতে তাঁর অবদান চিরকালীন। আম জনতা ও দেশের বিকাশে তাঁর আত্মত্যাগ প্রেরণার যোগ্য।’ এটা বোধোদয় নাকি দ্বিচারিতা! 
প্রাক্তনের মৃত্যু দেশের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করে তাঁর অবদান অনুকরণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান। অথচ দশ বছরের শাসনকালে তিনি নিজেই মনমোহনের উল্টোপথে হেঁটেছেন! প্রাক্তনের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ছিল, ১০০ দিন নিশ্চিত কাজের প্রকল্প (মনরেগা)। বর্তমান সেই প্রকল্পের বাজেট নির্মমভাবে ছাঁটাই করেছেন। এখন আর কেউ গড়ে ৫০ দিনের বেশি কাজ পায় না। কাজ করেও ঠিকমতো মজুরি পায় না। নিজের সরকারের ‘স্বচ্ছতা’র স্বাক্ষর রাখতে তথ্য জানার অধিকার আইন চালু করা মনমোহনের আর এক যুগান্তকারী অবদান। মোদি জমানায় সেই আইন সংশোধন করে শর্ত চাপানো হয়েছে। একইভাবে ইউপিএ আমলে চালু হওয়া জমি অধিগ্রহণ আইন, অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা আইন, শিক্ষার অধিকার আইন, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন, মজুরি আইন সংশোধন করে দিয়েছে মোদি সরকার। আর অর্থনীতি? মনমোহনের জমানায় জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬-৭ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। আর এখন মোদি জমানায় তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫.৪ শতাংশে। এই জমানায় মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। অন্যদিকে, আদিবাসীদের অধিকার দিতে মনমোহন সরকার যে বনাঞ্চল আইন তৈরি করেছিল, মোদি জমানায় তা সংশোধন করে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আবার কোভিডকালে মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগানের বিষয়ে মনমোহনের দেওয়া সদুপদেশও মানেনি মোদি সরকার। যে দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় এসেছেন মোদি, তার প্রায় কোনওটাই এখনও প্রমাণিত নয়। দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে প্রাক্তনের দৃঢ় অবস্থান গোটা বিশ্বের সমীহ আদায় করেছিল। আর এখন? ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দবন্ধটি সংবিধান থেকে বাদ দিতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এখন দেশে উগ্র-হিন্দুত্ববাদীদের ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’ ও সংখ্যালঘু বিদ্বেষের প্রচার দিকে দিকে ধিকৃত হচ্ছে। ‘নির্বিকার’ মোদি অবশ্য গোটা বিশ্বের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এখন প্রাক্তনের জয়গানই করে গেলেন! 
কিন্তু মৃত্যুতেও কি মনমোহনকে যথাযোগ্য সম্মান দিল মোদি সরকার? এদেশের ঐতিহ্য ও চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রাজঘাটে। সাধারণত সেখানেই গড়ে ওঠে রাষ্ট্রনায়কদের নামে স্মৃতিসৌধ। অথচ সেই ঐতিহ্য ও রীতিকে উপেক্ষা করে খোদ মোদি সরকারের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হল লালকেল্লার পিছনে নিগমবোধ ঘাট শ্মশানে। এ নিয়ে মনমোহনের পরিবার ও তাঁর দল আপত্তি তুললেও কর্ণপাত করেনি মোদির সরকার। ক্ষতে প্রলেপ দিতে দিল্লিতেই মনমোহনের নামে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরির সরকারি ঘোষণা হলেও সেটা কবে, কোথায় হবে— তা পরিষ্কার নয়। ফলে বিদায়বেলাতেও সৌজন্যের জায়গা নিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ইতিমধ্যে ভারতের সুসন্তান মনমোহনকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি উঠেছে। মোদির সরকার সেটা মানবে কি না, সেটাই দেখার।
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৮০ টাকা৮৬.৫৪ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৬ টাকা১০৯.০৯ টাকা
ইউরো৮৭.০০ টাকা৯০.৩৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা