সম্পাদকীয়

দায় স্বীকার করুন

কোনও সরকার-বিরোধী দল নয়, তথ্য দিয়েছেন স্বয়ং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৪-এর বর্ষশেষের দিন অশান্ত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং নতজানু ভঙ্গিতে জানান, ২০২৩-এর মে থেকে হিংসায় রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০০ জন। মামলা নথিভুক্ত হয়েছে ১২,২৪৭টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৬২৫ জন। বিভিন্ন জেলা থেকে ৫,৬০০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৫ হাজার কার্তুজ এবং প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। দেড় বছরের বেশি সময়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেননি, কত মানুষ আজও ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন, জাতিদাঙ্গা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে কতগুলো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, কত মহিলা ধর্ষণ সহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও তাঁর নিজের বাসভবনসহ একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হওয়ার ঘটনাও উল্লেখ করেননি তিনি। তবু রাজ্যজুড়ে ধারাবাহিক হিংসার কিছু তথ্য প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই না থেমে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজ্যবাসীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। গত ১৯ মাস ধরে মণিপুরে হিংসা রুখতে এই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে টানা ব্যর্থতার অভিযোগ জানিয়ে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, এনডিএ সরকারের দুই জোটসঙ্গীও নেতৃত্বের বদল চেয়েছেন প্রকাশ্যে। এমনকী বিজেপির একাধিক বিধায়কও সরকারের ব্যর্থতা ও মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের স্নেহধন্য মুখ্যমন্ত্রী এতদিন পর্যন্ত কোনও ঘটনার দায় ও দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন। এখন বছর শেষের দিনে তাঁর এই স্বীকারোক্তি কোনও বোধোদয়, ঘরে-বাইরের প্রবল চাপ, নাকি কৌশল— তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে, দায় স্বীকারের জন্য কেন তাঁর এত সময় লেগে গেল? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চাইলেও কেন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমা চাইবেন না? মণিপুরের অশান্তি, জাতিদাঙ্গার ঘটনা বহির্বিশ্বের নজর কাড়লেও এখনও সেই রাজ্যে পা পড়েনি নরেন্দ্র মোদির। অথচ মণিপুরে ব্যর্থতার দায় কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করতে পারে না। 
শুধু অর্থনীতির, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নয়, সমতলে মেইতেই ও পাহাড়ি অঞ্চলে কুকি-জো জনজাতির মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে গোটা রাজ্য কার্যত আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ছোট্ট রাজ্যটি। ইতিহাস বলছে, কয়েকবছর আগে পর্যন্তও এই দুই জনগোষ্ঠী সমতল-পাহাড়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিনযাপন করেছে। কিন্তু আরএসএস-বিজেপির মতাদর্শ মেনে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সুকৌশলে বিভাজন তৈরি করেছেন মোদি-শাহের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ বলে পরিচিত মুখ্যমন্ত্রী। জনজাতিগোষ্ঠী কুকিদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু মেইতেইদের মেরুকরণ করে ভোটে জেতার পরিচিত খেলা চালিয়েছে বর্তমান ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ সরকার। এর পরিণতি হিসাবেই গত ১৯ মাস ধরে শত্রুতার বর্ম পরে দুই গোষ্ঠী মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছে। সেই লড়াইয়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে মণিপুর। লড়াই থামাতে চূড়ান্ত ব্যর্থতার নজির তৈরির পরেও এন বীরেন সিংকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে রেখে দিয়েছেন মোদিরা! তাই মণিপুরের যাবতীয় অশান্তি ও ব্যর্থতার দায় শুধু মুখ্যমন্ত্রী একা নন, মোদি-শাহকেও নিতে হবে। আর শুধু দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী পার পেয়ে যেতে পারেন না। ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। না হলে বুঝতে হবে এসব আসলে লোক দেখানো, ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সস্তা নাটক। 
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সে পথে না হেঁটে নতুন বছরে শান্তি ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনা হল, তাঁর আশ্বাসবাণীর পরেই বছরের প্রথম দিকেই ফের উত্তপ্ত হয়েছে মণিপুর। সেদিন বেশি রাতে ইম্ফলের এক গ্রামে হামলা চালায় কয়েকজন জঙ্গি। যথেচ্ছ বোমা-গুলি চলে। এর দু’দিন পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাহাড়ে কুকি অধ্যুষিত এলাকায় এক ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। আসলে মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে এই রাজ্যে। এজন্য রাজ্যের পাঁচ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। গত ডিসেম্বরেও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে বোমা পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ নেই। বরং মনে হতে পারে, অশান্তি জিইয়ে রাখতেই বেশি আগ্রহী শাসকগোষ্ঠী। তাই মুখ্যমন্ত্রীর শোনানো আপ্তবাক্য নয়, মণিপুরের ভবিষ্যৎ কুয়াশায় ঢাকা। 
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

একাধিক সূত্র থেকে আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধির যোগ। কাজকর্মে উন্নতি হবে। মানসিক চঞ্চলতা ও ভুল...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৬ টাকা৮৬.৭০ টাকা
পাউন্ড১০৪.৮৮ টাকা১০৮.৫৯ টাকা
ইউরো৮৬.৮৭ টাকা৯০.২১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা