বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

শুধুই প্রচারের ঢক্কানিনাদ!

উত্তরপ্রদেশে গঙ্গার তীরে অবস্থিত বারাণসী থেকে ২০১৪ সালের মে মাসে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘মা গঙ্গার সেবা করাই আমার ভাগ্যের লিখন।’ সে বছর নিউ ইয়র্কের ম্যাসিডন স্কোয়ার পার্কে প্রবাসী ভারতীয়দের এক সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি এই নদীকে আমরা পরিষ্কার করে তুলতে পারি, তাহলে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের বিরাট উপকার হবে। তাই গঙ্গাকে পরিষ্কার করার কাজটি এক ধরনের অর্থনৈতিক কর্মসূচিও বটে।’ নিজের বলা কথার মান রাখতে রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে সে বছরের জুলাই মাসে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। নাম দেওয়া হয় ‘নমামি গঙ্গে’ (নদীর প্রতি প্রণাম)। মূলত গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে প্রথম বছরের বাজেটে ২০৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরের পাঁচ বছরের জন্য বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সব টাকাই দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট পরিকাঠামো তৈরি করা, রিভার ফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট, নদীপৃষ্ঠ পরিষ্কার করা, জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করা, বনায়ণ, জনসচেতনতা, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এফ্লুয়েন্ট মনিটারিং প্লান্ট তৈরি এবং গঙ্গা-গ্রাম তৈরি করা। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২০ সালে মিশন-২ নামে ফের ২২,৫০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার ২০২৬ সালের মধ্যে লক্ষ্যপূরণের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঘটনা হল, প্রকল্প ঘোষণার দশ বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, ভারতবাসীর ভাগ্যলিখন বদলায়নি। বরং আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। সম্প্রতি মোদি সরকারের জলশক্তি মন্ত্রক বাজেট-বরাদ্দ খরচের যে তথ্য সামনে এনেছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি কিংবা প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা নগদ দেওয়ার মতোই প্রধানমন্ত্রীর নমামি গঙ্গে প্রকল্পটিও ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ, দেশবাসীকে দেওয়া তাঁর মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীটির নাম গঙ্গা। অথচ এই গঙ্গার পাড়ে গড়ে উঠেছে কত জনপদ, কত অসংখ্য মানুষের রুটিরুজিও নির্ভর করে মা গঙ্গাকে ঘিরে। 
সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা বা নমামি গঙ্গে প্রকল্পে গত দশ বছরে নিজেদের সরকারের বাজেট বরাদ্দের অর্ধেক টাকাও খরচ করতে পারেননি দিল্লির কেষ্টবিষ্টুরা। যেমন, প্রথম বছর ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ৯২ শতাংশ অর্থ, ২০১৫-১৬-তে ৭৮ শতাংশ অর্থ, ২০১৬-১৭-তে ৩৩ শতাংশ অর্থ, ২০১৭-১৮-তে ৭০ শতাংশ অর্থ, ২০১৮-১৯-এ ৭০ শতাংশ অর্থ, ২০১৯-২০-তে ৪৩ শতাংশ অর্থ, ২০২০-২১-এ ৩৮ শতাংশ অর্থ, ২০২১-২২-এ ২৯ শতাংশ অর্থ এবং ২০২২-২৩-এ ৪০ শতাংশ অর্থই খরচ করতে পারেনি মোদি সরকার। দশ বছরে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫১ শতাংশ অর্থ। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে তার পুনরুজ্জীবনের যে শপথ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, সেই প্রকল্প নিয়ে প্রচারে কোনও ফাঁক না থাকলেও তা রূপায়ণে যে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র— সরকারের দেওয়া তথ্যই তার প্রমাণ। বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদি ইউপিএ সরকারের ২০০৯-এ চালু করা ‘মিশন গঙ্গা’ প্রকল্পের নাম বদলে ঘোষণা করেন, ‘নমামি গঙ্গে’র। কিন্তু গঙ্গা এখন দশ বছর আগের থেকেও বেশি দূষিত। এই আমলে মোদি ঘনিষ্ঠ কিছু শিল্প সংস্থা ও কিছু বিজেপি নেতা গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার প্রকল্পের ঠিকা আদায় করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে চলেছেন। কাজের কাজ সেভাবে কিছু হচ্ছে না। 
গঙ্গা দূষণ নিয়ে বিরোধীদের এই অভিযোগকেই যেন মান্যতা দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। যে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি গঙ্গা নিয়ে তাঁর আবেগ ও পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিলেন, সেই রাজ্যের প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা। মেলায় ৪০ কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গঙ্গা-যমুনার পবিত্র এই সঙ্গমস্থলে তাঁরা স্নান করবেন, তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশ আদালত। গঙ্গার দূষিত জল পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশ আদালতের। কারণ, প্রয়াগরাজের রসুলবাদ থেকে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পথে ৫০টি নর্দমার বিষাক্ত জল সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে মিশছে বলে মামলা হয়েছে আদালতে। এই দূষিত জলে পুণ্যার্থীদের একাধিক ব্যাধি হতে পারে বলে সতর্ক করে অবিলম্বে নিকাশি বর্জ্য প্রয়াগরাজের গঙ্গায় ফেলা বন্ধ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই হচ্ছে মোদির নমামি গঙ্গের আসল চেহারা! এটা একটা উদাহরণ মাত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনই এমন নানাভাবে দূষিত হচ্ছে গঙ্গার জল। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার যে এ ব্যাপারে আদৌ সচেতন নয় বরং উদাসীন—তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
26d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উত্তম ধনোযোগ পরিলক্ষিত হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে দিনটি ভালো বলা যায়। কাজকর্মে শুভফল লাভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা