বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

জনকল্যাণের নামে প্রহসন

সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্নে ভারতের হাল অত্যন্ত খারাপ। ১৫তম বার্ষিক মার্সার সিএফএ ইনস্টিটিউট গ্লোবাল পেনশন ইনডেক্স (এমসিজিপিআই) অনুসারে, ২০২৩ সালে ৪৭টি দেশের মধ্যে ভারতের র‍্যাঙ্ক ছিল ৪৫। আমাদের জন্য ওই র‍্যাঙ্ক ৪৪টি দেশের মধ্যে ৪১ ছিল ২০২২ সালে। তার আগের বছর ৪৩টি দেশের মধ্যে ৪০তম স্থানে ছিল ভারত। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিচারে কয়েক বছর যাবৎ আমাদের অবস্থান উনিশ-বিশ এবং তা অবশ্যই খারাপের দিক থেকে। যখন কর্মক্ষমতা থাকে তখন একজন মানুষ নিজ যোগ্যতা অনুসারে নিজেকে এবং তার পরিবারকে ভালো রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু সে যদি অকালেই কর্মক্ষমতা হারায়, এমনকী যথাসময়ে অবসর গ্রহণের পরও তার নিয়মিত আয় বলে কিছু থাকে না। কিন্তু তার দৈনন্দিন খরচ থেমে যায় না, বরং কিছু ক্ষেত্রে তা বেড়েই চলে। কেননা, রোগ-ব্যাধি বেশি বয়সেই অধিক আঁকড়ে ধরে। এখন এদেশে ওষুধসহ সমগ্র চিকিৎসার খরচ কী সাংঘাতিক তা কারও অজানা নয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার দুটি উপায়—এক, পর্যাপ্ত সঞ্চয় এবং ওই সূত্রে নিয়মিত আয়; আর দুই, ভদ্রস্থ পেনশন। প্রতিমাসে ভালো টাকার পেনশন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকলে একজন প্রবীণ ব্যক্তির পক্ষে খাওয়া-পরা এবং চিকিৎসা খরচ সামলানো সম্ভব হতে পারে। তবে নগদ টাকায় চিকিৎসা করে ওঠা দুঃসাধ্য ব্যাপার, সেক্ষেত্রে মুশকিল আসান হতে পারে একটি চিকিৎসা বিমা। কিন্তু এদেশে এই দুটিই একজন নিম্নবিত্ত, এমনকী মধ্যবিত্ত মানুষের কাছেও অধরা বস্তু। আবার সরকারও এমন কোনও সামাজিক সুরক্ষা নীতি নেয় না যাতে এই সমস্যা দূর হতে পারে।
ভারতের নিম্ন র‌্যাঙ্কিংয়ের একাধিক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—এখানকার সবচেয়ে গরিব ২০ শতাংশ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১.৯ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পাচ্ছে। অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মীদের হাল তো কহতব্য নয়। কেন্দ্রীয় বাজেট আজ পর্যন্ত এই গুরুতর বিষয়ে সদয় নয়, তাই চাহিদাগুলি পূরণ হয় না সরকারিভাবে। দেশের জন্য জীবনপাত করার পরিণামে চরম বঞ্চনাই হল ভারতের ‘সৌন্দর্য মাহাত্ম্য’! তাই নাগরিকের নিজের প্রয়োজন মেটাতে হয় নিজেকেই, কিন্তু সেখানেও বাধা রাষ্ট্রের রক্তচোষা চক্ষু। নাগরিকের ব্যক্তিগত বিমার উপরেও বিপুল করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। স্বভাবতই বিমার ছাতার নীচে প্রবেশ করতে পারে না বেশিরভাগ নাগরিক। জীবন বিমা, সাধারণ বিমা থেকে চিকিৎসা বিমা সবগুলি থেকেই দূরে সরে সরে যাচ্ছে অনেকে। বিপদ বাড়বে জেনেও নিরুপায় নাগরিক, কেননা তারা সত্যিই অপারগ, অক্ষম। ২০৪৭ সাল বা স্বাধীনতার শতবর্ষকে সামনে রেখে সব নাগরিককে বিমার ছাতার তলায় নিশ্চিতভাবে আনার প্রচার চলে। কিন্তু বাস্তবে মোদির ভারত যে উল্টো দিকেই হেঁটে চলেছে তা মানে দেশের বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই)। তাদের হিসেবে, জীবন ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এদেশে প্রতি ১০০০ জনে বিমা কিনেছেন মাত্র ৩৭ জন! অর্থাৎ শতকরা হিসেবে ৯৬.৩ শতাংশ ভারতবাসীর কোনও ধরনের বিমা নেই। আরও লক্ষ করার মতো বিষয় হল, বিমা কেনায় এই অনীহা বাড়ছে প্রতিবছর।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেনা বিমাকে সমীক্ষার আতশকাচের তলায় রাখতেই প্রকাশ্যে এসেছে এই গুরুতর পরিসংখ্যান। বিশ্বের গড় হিসেব অনুযায়ী প্রতি হাজারে ৭০ জন বিমা কিনে থাকেন। সেই নিরিখে ভারতের গড় প্রায় অর্ধেক। এর কারণ অনেকগুলি। প্রথমত, কম খরচে ইনস্যুরেন্স করানোর সুবিধা এদেশে নেই। অনলাইনে বিমা কেনা বা পলিসির শর্ত লাঘবের মতো কিছু পদক্ষেপ কেন্দ্র করলেও তা সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। তার উপর চাপানো হয়েছে অত্যন্ত উচ্চ হারে (১৮ শতাংশ) জিএসটির বোঝা। গ্রাহকের এই বোঝা কমানোর ব্যাপারে বিমা সংস্থাগুলি কেন্দ্রের কাছে বারবার অনুরোধ করছে। সমস্ত গ্রাহক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে প্রতিবাদ, আর্জি তো আছেই। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, অর্থনীতির বৃদ্ধির লক্ষণ বস্তুত করুণ। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগই ইতিমধ্যে অশনিসঙ্কেত দিয়ে রেখেছে, চলতি অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৬.৪ শতাংশ, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রত্যাশার চেয়ে ২০ বেসিস পয়েন্ট কম। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি এগনোর পরিবর্তে চারবছর পিছনে হাঁটতে চলেছে! তারপরও মোদি সরকারের হেলদোল নেই। তাদের এই নীতি কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশের সরকারের এই নীতি গ্রহণের অর্থ, একটি রাষ্ট্র হিসেবে ভারতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ অমানবিকতার শিকার। সেখানে ‘আচ্ছে দিন’, ‘অমৃতকাল’ প্রভৃতি প্রচার অতিনিকৃষ্ট প্রহসন মাত্র।
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা