সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্যে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ

নতুন বছরের প্রথম সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব জারি করেছেন একটি উল্লেখযোগ্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি। তাতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে কোনও সরকারি ডাক্তার তাঁর কর্মস্থল থেকে ২০ কিমি দূরত্বের বাইরে গিয়ে আর প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। রাজ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ২৪টি। রয়েছে চারটি সরকারি টিচিং মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট। এছাড়া আছে চোদ্দোশোর মতো সরকারি হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এই সবগুলি মিলিয়ে বাংলাজুড়ে সরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রে যত ডাক্তার কমর্রত, এই নির্দেশ তাঁদের ক্ষেত্রে কার্যকর ধরা হবে। অর্থাৎ এই নির্দেশে মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন প্রায় ১৩ হাজার সরকারি ডাক্তার। নির্দেশনামায় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, এরপর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে চাইলে ইচ্ছুক ডাক্তারকে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নিতেই হবে। বলা বাহুল্য, তাতেই উপর্যুক্ত শর্তের উল্লেখ থাকবে। ইচ্ছুক ডাক্তারকে ওই শর্ত মানার অঙ্গীকার করেই নিতে হবে জরুরি এনওসি। সব জেলায় কিছু সরকারি ডাক্তারের আবাসনের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন এক পুরনো চেনা ছবি। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সরকারি কোয়ার্টারেই চলে প্রাইভেট চেম্বার (পড়ুন সমান্তরাল আউটডোর)! বিপুল অর্থ উপার্জনকারী ওই ডাক্তারদেরকেও কড়া বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর—সরকারি আবাসনে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও আর কোনোভাবে বরদাস্ত নয়। অর্থাৎ, নয়া বিজ্ঞপ্তি মারফত সরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দুটি নিয়ম বলবৎ করতে চলেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। এক, সরকারি হাসপাতালের ডিউটি অবহেলা করে বেসরকারিভাবে বিপুল অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁরা দূর দূরান্তে আর ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। শর্ত মেনে সরকারি অনুমতিপত্র সংগ্রহের পর হাসপাতালের নিকটবর্তী অঞ্চলেই তাঁকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে হবে। দুই, সরকারি কোয়ার্টারকে আর বেসরকারিভাবে আয়-রোজগারের আখড়া করে তোলা যাবে না।
কোনও সন্দেহ নেই, এই চাহিদা রাজ্যবাসীরও। কেননা, বহু হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা নির্দিষ্ট ডাক্তারের দেখা পান না। এই ঘটনার একমাত্র কারণ ডাক্তারের সঙ্কট নয়, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার আছেন কেবল খাতাকলমেই। সরকারি ক্ষেত্রে, বাস্তবে তাঁর সাক্ষাৎ রোগীরা পান না দিনের পর দিন। কিন্তু তাঁদের দিব্যি দেখা মেলে কোনও কোনও প্রাইভেট চেম্বারে কিংবা হাসপাতাল/ নার্সিংহোমে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার, তা সরকারি হাসপাতালের ডিউটি আওয়ারেই! ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস করি না’ জানিয়েও অনেক সরকারি ডাক্তার লুকিয়ে চুরিয়ে নিজস্ব চেম্বার চালান, পাশাপাশি অম্লান বদনে হাত পেতে নেন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স’। সিনিয়রিটি ভেদে সেই অর্থের অঙ্ক মাসে ১৬-২২ হাজার টাকা! অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথোলজি, ফার্মাকোলজি ও অন্যান্য শাখার শিক্ষক চিকিৎসকদের প্রায় সকলেই ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স’ নেন। কিন্তু এঁদেরও অন্তত ২০-৩০ শতাংশ চুটিয়ে বেসরকারিভাবে রোগী দেখেন। আর মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থো, শিশুরোগসহ ক্লিনিক্যাল বিষয়ের শিক্ষক চিকিৎসকদের ৮০-৯০ শতাংশই ওই ভাতা নেন না এবং প্র্যাকটিস করেন, আর তা চলে মূলত ডিউটি আওয়ারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যদপ্তরটিও তাঁর নিজের হাতে রেখেছেন। তাঁর সরকারের কাছে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলির শীর্ষেই রয়েছে স্বাস্থ্য। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফিরিয়ে তাকে জনমুখী করে তোলাই স্বপ্ন তাঁর। তিনি ‘কর্ণেন পশ্যতি’ নীতির মানুষ নন, সবটাই চর্মচক্ষে যাচাই করে নেওয়ার পক্ষপাতী। এজন্য কলকাতাসহ রাজ্যজুড়ে অসংখ্য হাসপাতাল তিনি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সারা রাজ্যে রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক—তাঁর ‘সোর্স’ নানা প্রান্তের সাধারণ মানুষ। সহজ অনুমান এই যে, এই দুইয়ের ভিত্তিতেই মানবিক সিদ্ধান্তটি তিনি নিয়েছেন এবং স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা চেয়েছেন ডাক্তাররাই, সেই লক্ষ্যেই সরকারের এই অনবদ্য পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম মনে করেন, ‘সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা এই নির্দেশ অবশ্যই মেনে চলবেন।’ গেল গেল রব তুলে দেওয়া সহজ। কিছু মানুষ এটাই করেন নানা সময়ে। তাঁদের মধ্যে ডাক্তার এবং ওই কমিউনিটির কিছু লোকও আছেন। সন্দেহ জাগে, স্বাস্থ্যদপ্তরের ভূমিকাকে কালিমালিপ্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে তা করা হয় না কি? খারাপ বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্তরিক হলে সবার আগে ডাক্তার এবং তাঁদের কমিউনিটির সকলকেই সরকারের এই মানবিক সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকতে হবে। এই নির্দেশ নিজেরা অবশ্যই পালন করবেন এবং যাঁরা পালন করছেন না বা চাতুরির আশ্রয় নিয়ে লঙ্ঘন করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতেও সাহায্য করবেন তাঁরা। এই ব্যাপারে বাম চিকিৎসক সংগঠনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু তা মেলেনি। তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে, বামেদের জনদরদ নিছকই লোক দেখানো?
20h 20m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পরিবারের কারও স্বাস্থ্য অবনতিতে মানসিক চিন্তা। অপ্রিয় সত্য কথার জন্য সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৭ টাকা৮৬.৭১ টাকা
পাউন্ড১০৫.৭০ টাকা১০৯.৪৩ টাকা
ইউরো৮৭.৫৩ টাকা৯০.৮৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা