সম্পাদকীয়

চিকিৎসার অধিকার

প্রথমে ছিল আবেদন। এবার কার্যত নির্দেশ এল, কাজে ফিরুন ডাক্তাররা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের বেঞ্চের এমন মনোভাব জেনে বৃহস্পতিবার বিকালেই দিল্লি সহ বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কিছু সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। কিন্তু এ রাজ্যের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা উল্টো পথে হেঁটে ঘোষণা করেছেন, তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। তাঁদের সাফ কথা, আর জি করের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সব অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। ৮ আগস্টের মধ্যরাতে মহিলা পড়ুয়া চিকিৎসককে তাঁর কর্মস্থলে পৈশাচিকভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পথে নেমেছে গোটা দেশ। একটাই দাবি, এর সুবিচার চাই। ঘটনার দু’ সপ্তাহ পরও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আন্দোলনের জোয়ারে উত্তাল হচ্ছে গলি থেকে রাজপথ। কবির ভাষায়, ‘এত বিদ্রোহ কখনও দেখেনি কেউ’। কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এই আন্দোলনের সঙ্গে দুটি প্রশ্নও জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে। এক) সুবিচার দেওয়ার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তেছে, সেই সিবিআই গত দশ দিনে জিজ্ঞাসাবাদের বাইরে একচুলও এগতে পারেনি কেন? দুই) ডাক্তারদের কর্মবিরতি আর কতদিন চলবে? আর জি করের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিস। তারপর সিবিআই দায়িত্ব নেওয়া ইস্তক এখনও (এই লেখার সময় পর্যন্ত) কোনও গ্রেপ্তার নেই! এটা কেন, কী করে সম্ভব? সেই প্রশ্নও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, তাহলে এই তদন্তের পরিণতিও কি নোবেল চুরি, সারদা, নারদ, বগটুইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো হবে? এ তো অভিজ্ঞতার আলোকে জনমনের আশঙ্কার কথা। কিন্তু যুক্তি দিয়েও যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না তা হল, আর ঠিক কতদিন অপেক্ষা করলে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্তরা গ্রেপ্তার হবে, তা কি জানা আছে জুনিয়র ডাক্তারদের? তা না হলে কি ধরে নিতে হবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মবিরতি চলবে? তেমনটা হলে যে গোটা সরকারি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে তার দায় আদৌ কি সরকারের হবে? 
হাসপাতাল যে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট করার জায়গা নয় সেই সহজ কথাটা সোজা ভাষায় আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতিরা বলেছেন, ‘বিচার ও চিকিৎসা ধর্মঘটে যেতে পারে না।’ এই জন্যই হাসপাতাল, ‘জরুরি পরিষেবা’র আওতায় পড়ে। যে কোনও রাজনৈতিক দল যখন ধর্মঘট বা বন্‌ধ ডাকে তখন চিকিৎসা পরিষেবাকে ‘ছাড়’-এর আওতায় রাখা হয়। ভেবে দেখা দরকার, সরকারের কাছে কোনও দাবি জানিয়ে যদি পুরসভার কর্মীরা পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেন, আগুন নেভানো যাঁদের দায়িত্ব সেই দমকল কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেন, যদি বিদ্যুৎ কর্মীদের ন্যায্য দাবিতে ধর্মঘটের কারণে ধসে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা— তা কি অভিপ্রেত হবে? এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই যে, ন্যায্য দাবিতে ক্রমাগত চাপ তৈরি করা গেলে যে কোনও সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। আর জি করের ঘটনা সেই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা যার সুবিচার চেয়ে লাগাতার আন্দোলন হচ্ছে। এটা সময়ের দাবি এবং এই কারণেই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ পথে নেমেছেন। একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ আন্দোলন চলুক, চান প্রায় সকলে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্যখানে, আন্দোলনের ধরন নিয়ে। প্রশ্ন হল, সরকারি হাসপাতালে যাদের চিকিৎসা পাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, টানা কর্মবিরতি চালিয়ে এবং তা অনির্দিষ্টকালের জন্য চালানোর কথা জানিয়ে কি লক্ষ কোটি মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না? দশ দিনে সিবিআইয়ের একজনকেও গ্রেপ্তার করতে না পারার দায়ভার কেন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষ নেবেন? তাঁদের অপরাধ কী? 
এমন নয় যে ঘটনার পর দু’ সপ্তাহের আন্দোলনে সরকারকে একটুও টলানো যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিসের ব্যর্থতা মান্যতা পেয়েছে আদালতে। দাবিমতো তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। যে নিরাপত্তার দাবি নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল, সেই হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে পুলিসকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে (সিআইএসএফ) আনা হয়েছে, ডাক্তারদের দাবি মেনে হাসপাতালের চার মাথাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘কুখ্যাত’ সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের  তদন্তে রাজ্যের তরফে ‘সিট’ গঠন করা হয়, শুক্রবার আদালতের নির্দেশে এই তদন্তভারও যায় সিবিআইয়ের হাতে। হাসপাতালের পরিষেবা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার ও পুলিস। গোটা দেশে ডাক্তারদের নিরাপত্তা জোরদার করতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। তার মানে, আন্দোলনের চাপে নড়েচড়ে বসেছে সব মহল। এবার হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসার পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে  মানবিকতা ও দায়বদ্ধতা দেখানোর সময় জুনিয়র ডাক্তারদের। তাতে সমর্থন বাড়বে ছাড়া কমবে না। 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা