সম্পাদকীয়

বিচারের বাণী...

দ্রুত বিচার, দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত শাস্তি—আর জি কর কাণ্ডে এক তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর এই দাবিতেই সোচ্চার গোটা সমাজ। দেশে নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। রাজ্যগুলিকে আরও কঠোর হতে হবে। একই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ধর্ষণের ঘটনার ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্টের মাধ্যমে পনেরো দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে পঞ্চাশ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে, দোষী সাব্যস্ত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের শীর্ষস্তরের নেতা-নেত্রীদের কথা মেনে সত্যিই তেমন আইনি ব্যবস্থা করা গেলে ঘরে-বাইরে মেয়েরা যে অনেকটা নিরাপদ বোধ করবেন, তাতে সন্দেহ নেই। হয়তো অপরাধীরাও কুকর্ম করার আগে দু’বার ভাববে। কিন্তু এদেশে যেখানে ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন, নারী নির্যাতনের ঘটনা কার্যত জলভাত হয়ে গিয়েছে, যেখানে অপরাধ প্রমাণ করে শাস্তি দিতেই বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়, সে দেশে কি সত্যিই এমন আইন আনা ও তা কার্যকর করা আদৌ সম্ভব? নাকি এসব আপ্তবাক্য, সমাজের ক্ষোভকে প্রশমিত করার রাজনৈতিক কৌশল? ধর্ষণের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ফাঁসির মতো কঠোর আইন এখনও চালু আছে। ধর্ষণ করে খুনের মতো জঘন্য অপরাধের বিচার ফাস্ট ট্র্যাকে করার নজিরও কম নেই। তাও ২০১২ সালে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া নির্ভয়া কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চার অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে আট বছর গড়িয়ে গিয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের হাতরাসে এক দলিত কন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত উচ্চবর্ণের তিনজনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালে। আর এ রাজ্যে কামদুনি কাণ্ডের অভিযুক্তদের চারজন মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। একজনের সাজা ফাঁসি থেকে কমে হয়েছে যাবজ্জীবন। বিলকিস বানোর ঘটনা তো কহতব্যই নয়। এই হল বাস্তবের প্রতীকী ছবি। যা দেখে দ্রুত বিচার-শাস্তির দাবিকে অলীক কল্পনা বলে মনে হতে পারে।
অথচ নির্ভয়া থেকে আর জি করের মতো বর্বরোচিত ঘটনা, তা নিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে উঠলেও ধর্ষণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বগামী। রীতিমতো হাড়হিম করা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, মোদি জমানায় শুধু ২০২২ সালে দেশে ৩৫ হাজার ৮০টি ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে যা ৯৬টি। হিসাবটা ২০১৭ থেকে ’২২ সালের মধ্যে ধরলে দেখা যাবে, ওই পাঁচ বছর গড়ে প্রতিদিন ৮৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৮২টি ক্ষেত্রে ধর্ষক পূর্ব পরিচিত। পাঁচ বছরে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার। আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তথ্য দিয়ে দাবি করেছেন, আর জি কর কাণ্ডের পর মাত্র দশ দিনে দেশে ৯০০টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। মানে, ২৪ ঘণ্টায় ৯০টি, প্রতি ঘণ্টায় ৪টি। তবু ধর্ষণের বিরাম নেই! গত কয়েক দিনে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের দুই রাজ্য অসম ও মহারাষ্ট্রে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। অসমের নগাঁও, লখিমপুর ও তেজপুর জেলায় পরপর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, গত দু’মাসে অসমে ২২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের পুনেতে তেরো বছরের এক নাবালিকাকে মদ্যপান করিয়ে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই রাজ্যের থানে জেলার বদলাপুরে স্কুলের মধ্যে দুই শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছে গোটা দেশ। প্রশ্ন উঠেছে, এই ব্যাধি কি রাজনৈতিক আকচা-আকচিতে থামবে?
ধর্ষণের বিচার আর শাস্তি এক বিষয় নয়। ২০১২-তে নির্ভয়া কাণ্ডের পর ২০১৩ সালে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অপরাধীদের ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বিচার ব্যবস্থার ফাঁকফোকর গলে অপরাধীরা সাত বছর কাটিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাস বলছে কোনও ধর্ষণের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পুলিস কর্তৃপক্ষ কতটা নিশ্চিত প্রমাণ জোগাড় করতে পারছে, কোন ধারায় মামলা দিচ্ছে তার উপর শাস্তির চরিত্র অনেকটাই নির্ভর করে। এক্ষেত্রে অনেক সময় পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আবার নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের মতো সাজা দিলেও তার বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে সর্বোচ্চ আদালত, এমনকী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করার অধিকার রয়েছে অভিযুক্তের। এর পাশাপাশি রয়েছে পুলিসি তৎপরতা ও বিচার ব্যবস্থার গড়িমসির অভিযোগ। তাই ধর্ষণের বিচার ও শাস্তির ক্ষেত্রে রাতারাতি সব বদলে যাবে—বিষয়টা অনেকটা বেদনার বালুচরে খেলাঘর তৈরির স্বপ্নের মতো শোনায়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা