সম্পাদকীয়

কবে রহস্যভেদ?

ধর্ষণ করে খুনের প্রতিটি ঘটনার অভিঘাত সমান হয় না। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-এ সতেরো বছরের এক তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। ২০১৮ সালে জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়াতে আট বছরের এক শিশুকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশেই হাতরাসে কুড়ি বছরের এক দলিত কন্যাকে একইরকম বর্বরতার শিকার হতে হয়। অথবা ২০১৩ সালে এই বাংলার কামদুনিতে ২০ বছরের এক পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি নিয়ে তোলপাড় কম হয়নি। কিন্তু দিল্লির ‘নির্ভয়া’ কাণ্ডে রাজধানীর বুকে যে গণপ্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল, সাম্প্রতিককালে সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের ইতিহাস। এক যুগ আগে, ২০১২ সালের সেই ঘটনায় প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী ‘নির্ভয়া’কে গণধর্ষণের পর পৈশাচিকভাবে মেরে ফেলা হয়। আর জি করের ঘটনা যেন প্রতিবাদের সব রেকর্ড ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে। ৩১ বছরের চিকিৎসক-পড়ুয়াকে সরকারি হাসপাতালের মধ্যেই ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ৮ আগস্টের শেষ রাতে। তার দশ দিন পরেও রাজ্য, দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। লক্ষ-কোটি কণ্ঠে সোচ্চার- স্বতঃস্ফূর্ত-জোরালো দাবি উঠেছে, সুবিচার চাই। দ্রুত। ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিস। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, কয়েকদিনের মধ্যেই রহস্যের কিনারা করতে হবে পুলিসকে। সেই সময় পেরনোর আগেই আদালতের নির্দেশে তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। তারপর থেকে দৃশ্যমান, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি ঘটনার কিনারায় দিনরাত এক করে ফেলছে। কিন্তু সেই অনিবার্য প্রশ্নটা ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করেছে, এই পৈশাচিক ঘটনার রহস্যভেদ করতে আর কতদিন সময় নেবে সিবিআই? রবিবার পর্যন্ত সিবিআই তদন্তের পাঁচদিন পরেও দেখা যাচ্ছে, সেই একজনের পর আর কোনও গ্রেপ্তার নেই! ঘটনায় আর কেউ যুক্ত কি না, কী উদ্দেশ্যে এমনটা ঘটানো হল, তরুণীকে কোনও গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হল কি না— এসব প্রশ্নে সেই অন্ধকারেই রয়েছে নাগরিক সমাজ। ফলে যে মৃত্যু কার্যত গোটা পৃথিবীর ভারতীয়দের নাড়িয়ে দিয়েছে, পথে নামিয়েছে— তার তদন্তে সিবিআই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে চলছে কি না, সেই সংশয়ও বৃহত্তর জনমানসে দানা বাঁধছে। 
এই সংশয়, প্রশ্নের সুযোগ করে দিয়েছে সিবিআই নিজেই। একটা সময় বলা হতো, এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিধানে ‘ব্যর্থতা’ শব্দটির কোনও জায়গা নেই। কিন্তু গত এক দশকে, মোদি জমানায় বারবার দেখা গিয়েছে, কোনও ঘটনার তদন্তে সেই তৎপরতার লেশমাত্র নেই। কখনও বা আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছে সিবিআই। এ রাজ্যের কথাই ধরা যাক, সাল ২০০৪। এক দুপুরে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবরটি, বিশ্বভারতীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ‘রবি-কোষ’ থেকে উধাও কবিগুরুর নোবেল পদক। তারপর কুড়ি বছর কেটে গেলেও নোবেল চুরির কিনারা করতে পারেনি সিবিআই। বাম আমলে নন্দীগ্রাম, ছোট আঙারিয়া, তাপসী মালিকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তে সেভাবে কোনও বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করেছে এ রাজ্যের শাসকদল। ২০১১-তে পালাবদলের পর সারদা, নারদ, শিক্ষা, পুরসভায় দুর্নীতি সহ অন্তত ৩০টি বড় ঘটনায় আদালতের নির্দেশে তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ফলাফল, প্রায় শূন্য। সর্বোচ্চ আদালতে সিবিআই নিজেই জানিয়েছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তাদের জমে থাকা মামলার সংখ্যা ৯০৫টি। ওই সময়ে গোটা দেশে সিবিআইয়ের হাতে ছিল ৯ হাজার ৭৫৭টি মামলা। এর এক তৃতীয়াংশ চলছে দশ বছর ধরে, শ-পাঁচেক মামলার নিষ্পত্তি হয়নি বিশ বছরে। এই যাদের অতীত ‘রেকর্ড’ তারা কত দ্রুত আর জি কর কাণ্ডের তদন্ত শেষ করে রহস্যের কিনারা করবে, ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পিছনে থাকা কুশীলবদের প্রকাশ্যে আনবে, তা নিয়ে সংশয় থাকা অপ্রত্যাশিত নয়। তবে আশার কথা, সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা হাতে নিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতে তার শুনানি হওয়ার কথা। আদালত হস্তক্ষেপ করলে তদন্তে গতি আসবে, দ্রুত কিনারায় পৌঁছনো যাবে— এই আশা ভরসা জোগাচ্ছে। 
আর জি কর ঘটনা নিয়ে যে তোলপাড় আন্দোলন শুরু হয়েছে, বিশেষত মহিলারা যেভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে পথে নেমেছেন তার জন্য কোনও তারিফই যথেষ্ট নয়। এর ‘শেষ দেখে ছাড়ার’ যে বজ্রনির্ঘোষ ঘোষিত হয়েছে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি হাসপাতাল জুড়ে অচল অবস্থা কাটিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে স্বাভাবিক পরিষেবা চালু নেই। ভিন রাজ্যেও প্রায় একই হাল। এর শিকার হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ অসুস্থ মানুষ। হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর কথা আদালত বলেছে, মুখ্যমন্ত্রীও আবেদন করেছেন। সকলেই চান সুবিচারের দাবি বুকে নিয়ে কাজে ফিরুন চিকিৎসকেরা। প্রাণ ফিরুক হাসপাতালগুলিতে। 
27d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা