কেপ অব গুড হোপ। বাংলায় উত্তমাশা অন্তরীপ। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের এই জায়গাতেই জীবনের সব আশা হারাতে বসেছিলেন এক স্কটিশ অভিযাত্রী। লেফটেন্যান্ট আর্চিবল্ড ব্লেয়ার। পেশায় নাবিক, নেশায় সমীক্ষক। সমীক্ষার কাজেই এসেছিলেন উত্তমাশা অন্তরীপে। সেটা ১৭৮০ সাল। উত্তমাশা অন্তরীপেই একটি ফরাসি যুদ্ধজাহাজের খপ্পরে পড়ে বন্দি হন আর্চিবল্ড। সেটা ১৭৮০ সাল। টানা চার বছর চলে সেই বন্দিদশা। একসময় মুক্তির আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। শেষপর্যন্ত মিলল মুক্তি, তবে পুরোপুরি নয়। ১৭৮৪ সালে ওলন্দাজ অর্থাৎ ডাচদের হাতে তাঁকে তুলে দেয় ফরাসিরা। তারাই নিরাপদে স্কটিশ লেফটেন্যান্টকে পৌঁছে দেয় ভারতে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘বম্বে মেরিন’ বিভাগে। বন্দি হওয়ার ন’বছর আগে এই ‘বম্বে মেরিন’-এই মিডশিপম্যান হিসেবে আর্চিবল্ডের কর্মজীবন শুরু। সেটা ১৭৭১ সাল। পরের বছরই প্রথম সমীক্ষা অভিযান ভারত, ইরান ও আরবের উপকূলে। তারপর সমুদ্র আর জরিপে নেশা তাঁকে পেয়ে বসে। বন্দিজীবন কাটিয়ে ফিরে প্রথমে মলদ্বীপের দক্ষিণে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং পরে কলকাতার কাছে সমীক্ষা চালাতে আসেন তাঁকে। ডায়মন্ড হারবার ও হুগলি নদীতে ছিল সেই কাজ। তারপর তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের নির্দেশে আবার ভেসে পড়েন। এবারের গন্তব্য আন্দামান। মূল উদ্দেশ্য মালয় জলদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উপযুক্ত ঘাঁটি স্থাপনের জায়গা বের করা।
১৭৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে রওনা হলেন আর্চিবল্ড। এলিজাবেথ ও ভাইপার নামের দু’টি জাহাজ নিয়ে। নানা বিপদ সামলে একসময় পৌঁছেও যান গ্রেট আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। সেখানেই একটি প্রাকৃতিক বন্দর-সুলভ জায়গার হদিশও পান। আর্চিবল্ড জায়গাটির নাম দেন পোর্ট কর্নওয়ালিস। তারপর ১৭৮৯ সালের ২২ এপ্রিল কলকাতায় ফিরে জমা করেন রিপোর্ট। তার ভিত্তিতেই তৈরি হল নয়া উপনিবেশ। আবার আন্দামানে ফিরলেন আর্চিবল্ড। এবার ফার্স্ট অফিসার-ইন-চার্জ হিসেবে। এরও প্রায় ৬০ বছর পর সেখানে পাকাপাকিভাবে বসতি গড়ে ইংরেজরা। তারপরই সরকারিভাবে পোর্ট কর্নওয়ালিসের নাম বদলে দেওয়া হয় স্কটিশ সমীক্ষকের সম্মানে—পোর্ট ব্লেয়ার। গত শুক্রবার পর্যন্ত সেই নামেই পরিচিত ছিল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী।

ভরা ভাদ্র। পচা ভাদ্র। বাংলা নববর্ষের পঞ্চম মাসের এমনই নানা দুর্নাম। কখনও এই ভাদ্র ভাসিয়ে দেয়। কখনও আবার গরমের চোটে ঘেমে নেয়ে একশেষ।