সম্পাদকীয়

চিকিৎসাকেই সর্বোচ্চ মান্যতা

আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্যের বড় হাসপাতালগুলিতে টানা যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে বহু মানুষ প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়েছেন। বিনামূল্যে ভালো চিকিৎসার জন্য গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলির উপর চোখ বুজে ভরসা করে। ডাক্তারদের একাংশের মাসাধিক কালের কর্মবিরতির কারণে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। একদিকে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চলছে নজিরবিহীন অচলাবস্থা, অন্যদিকে বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতালগুলি চলছে রমরমিয়ে। জীবনদায়ী প্রয়োজনে কিছু পরিবার সর্বস্ব খুইয়ে সেখানেই যেতে বাধ্য হচ্ছে। তার ফলে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল এই সুযোগে ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বেশিরভাগ পরিবার বেসরকারি জায়গায় যেতে পারেনি। তাদের রোগীরা হয় বিনাচিকিৎসায় বাড়িতে কাতরাচ্ছে কিংবা মারা পড়ছে বেঘোরেই। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, গরিব-মধ্যবিত্তের কী তবে অপরাধ? তাদের কি বিনাঅপরাধে চরম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা-বঞ্চনা নিয়ে সোমবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক: আউটডোর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৭ লক্ষ মানুষ। ৭০ হাজার মানুষ ইন্ডোর পরিষেবা পাননি। ৭ হাজার অপারেশন আটকে গিয়েছে। ক্যাথল্যাবের পরিষেবা থেকে বঞ্চিতের সংখ্যা ৭ হাজার। চিকিৎসা না-পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের! এই সময়ে সরকারি হাসপাতালে অচলাবস্থার কারণে কর্পোরেট হেলথ সেক্টরের অস্বাভাবিক ব্যবসা বৃদ্ধি নিয়েও প্রসঙ্গক্রমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্যাপারটিকে ভালো নেয়নি দেশের শীর্ষ আদালতও। তাই আর জি কর মামলায় বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের উদ্দেশে সোমবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় পরিষ্কার করে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘দায়িত্বে অবহেলা করে প্রতিবাদ হয় না। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দিন।’ একইসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরলে রাজ্য সরকার বিক্ষোভরত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না। কোথাও বদলিও করবে না তাঁদের। কিন্তু তারপর যদি রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করে, তা আমরা আটকাতে পারব না। বাকিটার জন্য সিবিআই যেমন তদন্ত করছে, তা চলবে। তদন্ত কতদূর এগল, তা নিয়ে আগামী সপ্তাহেই রিপোর্ট দেবে সিবিআই।’ অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর ফের শুনানির দিনই স্টেটাস রিপোর্ট দিতে হবে তদন্তকারী এজেন্সিকে। আর জি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় সোমবার বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে ছিল তৃতীয় দিনের শুনানি। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনেই শীর্ষ আদালত তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। পরিষ্কার যে, অপরাধের তদন্তকে আদালত যতখানি গুরুত্ব দিয়েছে, ততখানিই জোর দিয়েছে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সঙ্কটকেও। সত্যিই তো, যেকোনও অন্যায়ের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সুবিচার অবশ্যই কাম্য। সেই প্রক্রিয়া আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে অবশ্যই চলবে। বিশেষ করে আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রতিটি জায়গায় ডাক্তারসহ চিকিৎসা কর্মীদের পূর্ণ নিরাপত্তার দাবিটিও অত্যন্ত সংগত। সরকারকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। শীর্ষ আদালতও তার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের ভূমিকায় দেশের বিচার ব্যবস্থার মানবিক মুখটিই পরিস্ফুট হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায়, কেন মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপরেই তার শেষ আস্থা স্থাপন করে। আবার অভিভাবকের মতোই শীর্ষ আদালত সাবধান করে দিয়েছে, ‘এরপরও যদি জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফেরেন এবং তার প্রেক্ষিতে সরকার কোনও ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।’
আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার ‘পরিবার’ এখনও বিচার পায়নি। আন্দোলনরত ডাক্তারদের একাধিক দাবিও হয়তো অপূর্ণ রয়েছে। এই দিকগুলি দ্রুততার সঙ্গেই দেখার ব্যাপারে দেশের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষতম স্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকেই আশ্বস্ত করা হয়েছে। এখন আমাদের সকলেরই আর একটু অপেক্ষা করা এবং সুপ্রিম কোর্টের উপর ভরসা রাখার বিকল্প তো কিছু নেই। যতদিন সম্পূর্ণ ফয়সালা না হবে, ততদিন কাজই করব না, এমন জেদ ধরে থাকা চলে না আর। এই জেদাজেদি চিকিৎসা প্রত্যাশী অসংখ্য অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলারই শামিল। আবেগের পর্ব অতিক্রান্ত হলে এই সমাজই কিন্তু ব্যাপারটাকে মোটেই মেনে নিতে পারবে না। কেননা, চিকিৎসা-বঞ্চনার মতো অবিচার এরপর ঢুকে পড়তে পারে ঘরে ঘরে! তখন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বা ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ডগুলি দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে আরও প্রকাণ্ড আকারে!
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা