সম্পাদকীয়

কোথায় দায়িত্বশীল কেন্দ্র?

৩ সেপ্টেম্বর নৃশংস মারধরে ফেটে গিয়েছিল পেট, বেরিয়ে এসেছিল নাড়িভুঁড়ি! অপারেশন করেও বাঁচাতে পারেননি ডাক্তাররা। সহকর্মীদের বেদম প্রহারে ৬ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি মালদহে হরিশ্চন্দ্রপুরের মোতি আলি (৪২)। ঘট‍নাস্থল রাজস্থানের জয়পুর। এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে শিরোনাম দখল করে হরিয়ানা। ‘গোমাংস ভক্ষণ’ সন্দেহে বাংলারই এক পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। ২৭ আগস্টের ওই ঘটনায় মৃত যুবকের নাম সাবির মল্লিক। তিনি ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাসন্তীর বাসিন্দা। অভিযুক্তরা যথারীতি ‘গোরক্ষক’ বাহিনী। ফেরিওয়ালা সাবির সেখানে পুরনো লোহালক্কড় সংগ্রহ করে বেচতেন। স্ত্রী ও এক ছোট সন্তান নিয়ে তাঁর পরিবার। মাস ছয়েক ওখানে ছিলেন তাঁরা। ঘটনার দিন দুপুরে কয়েকজন যুবক সাবিরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি দীর্ঘক্ষণ না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান তাঁর স্ত্রী। এরপর সেদিনই বিকেলে অন্য এক জায়গায় সাবিরের নিথর দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবারের দাবি, তাঁর সারা শরীরে ছিল গুরুতর আঘাতের চিহ্ন। মৃতের দাদার অভিযোগ, লোহালক্কড় কেনার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর ভাইকে কিছু লোক ডেকে নিয়ে যায়। সেসব আনতে সাবির যে ভ্যানরিকশটি নিয়ে যান, সেটি পড়ে ছিল রাস্তার ধারে। সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে সাবিরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবিরের মৃতদেহের কিছুটা দূরেই নাকি পড়ে ছিল আরও দু’জনের দেহ! তাঁরা ছিলেন অসমের বাসিন্দা। পুলিস তদন্ত করে মৃতের পরিবারকে জানিয়েছে, ওই গ্রামে গোরুর হাড়গোড় উদ্ধার হয়। তার থেকেই সন্দেহ হয় যে, সেখানে কেউ গোমাংস খেয়েছে। অমনি সন্দেহের বশে সাবিরকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। এই ঘটনায় ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতের পরিবারের পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক-নির্যাতনে সম্প‍্রতি খাতা খুলেছে পড়শি রাজ্য ওড়িশা। নিপীড়নের শিকার গরিব মানুষগুলি মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে গিয়েছেন। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ দেগে দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে এবং দেওয়া হচ্ছে নানারকম হুমকি। বাংলাদেশে অস্থিরতা বৃদ্ধির পর দেশেই বহির্বঙ্গে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তা করার প্রবণতাটি বেড়েছে, মত রাজনৈতিক মহলের।
লক্ষণীয় যে, আলোচ্যমান তিন ক্ষেত্রেই অকুস্থল নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের সাধের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্য। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজস্থানের ক্ষমতা কংগ্রেসের কাছ থেকে ফের ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। এখন রাজ্যপাটে তরুণ তুর্কি ভজনলাল শর্মা। হরিয়ানা দীর্ঘদিন যাবৎ শাসন করছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের আগে মনোহরলাল খট্টরকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলেরই তরুণ নেতা নায়েব সিং সাইনিকে। অন্যদিকে, এবার সাধারণ নির্বাচনেই পালাবদল ঘটে গিয়েছে ভুবনেশ্বরে। নবীন পট্টনায়ককে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে এখন বিজেপি নেতা মোহন মাঝি। ওড়িশায় বিজেপির এটাই প্রথম ইনিংস। খেয়াল করার মতো ব্যাপার এই যে, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক নির্যাতনে বিতর্কের কেন্দ্রে সব ধরনের বিজেপি-শাসিত রাজ্য—পুরনো রাজ্য, বদলি মুখ্যমন্ত্রী কিংবা ফার্স্ট ইনিংসে কোনও ফারাক নেই। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি কিংবা তাদের শাসক দল একটি ঘটনাকেও নিন্দা করেছে বলে শোনা যায়নি। কঠোর পদক্ষেপের খবর তো নেইই। অভিযুক্ত ধর্মোন্মাদদের সতর্ক করার কোনও বার্তা দেননি—না নরেন্দ্র মোদি, না অমিত শাহ কিংবা জে  পি নাড্ডা। 
তাই ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই ‘কাকতালীয়’ বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে, এই ভয়াবহ সংস্কৃতির বিস্তারে গেরুয়া শিবিরের গুরুঠাকুরদের মৌনসম্মতি রয়েছে? এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলিতে ‘বিচার’ দাবি করে নাগরিক সমাজও কিন্তু টুঁ শব্দটি করছে না। কিন্তু কেন? উঠে গিয়েছে সেই সংগত প্রশ্নও। রাজস্থানের ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সবরকমে আছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, হরিয়ানার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ বলতে, সম্ভবত, বাংলার প্রশাসনের চাপেই পুলিস আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া কতদূর এগবে, সংশয় রয়েই যায়। ওড়িশার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে কিছু বার্তা দিয়েছেন। তবে তাতে পরিযায়ী শ্রমিক-নির্যাতন প্রসঙ্গের উল্লেখ নেই। বাংলার পরিষায়ী শ্রমিকরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে চাইলে নবান্ন প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে বলেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে, যে দেশের ভিত্তি ও সৌন্দর্য বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, সেখানে এ কোনও সমাধান নয়। কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দলের দায়িত্বশীল ভূমিকাই প্রত্যাশিত। না-হলে রাজ্যে রাজ্যে এই ধরনের অশান্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হতে পারে।
10d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা