সম্পাদকীয়

হরিয়ানায় সিঁদুরে মেঘ

হরিয়ানায় লোকসভার আসন ১০টি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি তার সবক’টিতেই জয়ী হয়। ওই রাজ্যে বিজেপির চমকপ্রদ উত্থান তার আগের বিধানসভা নির্বাচনে। ২০১৪ সালে হরিয়ানায় রাজ্য ক্ষমতা কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন মনোহরলাল খট্টর। ওই ভোটে দলগত সংগ্রহের তালিকা ছিল এইরকম: বিজেপি ৪৭ (বৃদ্ধি ৪৩), এসএডি ১ এবং কংগ্রেস ১৫ (হ্রাস ২৫), আইএনএলডি ১৯ (হ্রাস ১২), বিএসপি ১, এইচজেসি (বিএল) ২, নির্দল ৫। পরবর্তী নির্বাচনে, ৯০ আসনের বিধানসভায় একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও শুরু হয় বিজেপির পতনের পালা। ২০১৯-এ তাদের সংগ্রহ ছিল ৪০, অর্থাৎ একার পক্ষে সরকার গঠনের জন্য বিধায়ক ঘাটতি ছিল ৬ জনের। ওই বিধানসভায় কংগ্রসের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩১। অন্যদিকে জননায়ক জনতা দল (জেজেপি) দখল করেছিল ১০টি আসন। এছাড়া ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল (আইএনএলডি) এবং হরিয়ানা লোকহিত পার্টি (এইচএলপি) জিতেছিল একটি করে কেন্দ্রে। নির্দল হিসেবে জয়ী হন তিনজন। পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভার ১০ জন ছিলেন লড়াইতে। তাঁদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী-সহ দু’জন গড় রক্ষা করতে সমর্থ হলেও বাকি আটজন হন ধরাশায়ী! উনিশের ভোটে মনোহরলালের জয়ের মার্জিনও কমে যায় অনেকটাই। সব মিলিয়ে গতবার ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হয়। দুষ্যন্ত চৌতালার জেজেপির সঙ্গে জোট গড়ে সরকার তৈরি করে বিজেপি। দল মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ফিরিয়ে দেয় মনোহরলালকেই। 
লোকসভায় ঢুকবেন জানিয়ে গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রী পদে মনোহরলালের ইস্তফা নেওয়া হয়। একাদশ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন বিজেপির তরুণ এমপি নায়েব সিং সাইনি। ইতিমধ্যেই বিধানসভায় বিজেপি-জেজেপি দোস্তিতে ইতি পড়ে গিয়েছে। ২০১৯-এ নির্বাচন-পূর্ব জোট তাদের ছিল না। ভোটের পর বিজেপির যখন খেয়াঘাটে গড়াগড়ি দশা তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দুষ্যন্ত। কিন্তু সেই করমর্দন পুরো পাঁচবছর টেকেনি। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগেই তা ভেঙে যায়। সরকার গড়ার জন্য নায়েব সিংকে প্রয়োজনীয় সংখ্যার ঘাটতি পূরণ করেন ছ’জন নির্দল এবং একজন এইচএলপি সদস্য। তবু শেষরক্ষা হয়নি বিজেপির। গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানার পাঁচটি আসন খোয়াল কেন্দ্রের শাসক দল। উনিশের পুরো ১০ থেকে অর্ধেক হয়ে গেল তারা। বাকি ৫টি আসন জিতে নিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। এবার লোকসভার ফল প্রকাশের পর দুষ্যন্ত চৌতালা সোশ্যাল মিডিয়ায় (এক্স) মন্তব্য করেন, ‘ভারতের ভোটদাতাদের নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। কেননা দেশ, দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্যই তাঁরা তাঁদের মতদান করে থাকেন সবসময়।’ তাঁর আরও তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, ‘একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী এই কারণে যে, সরকারে (বিজেপির সঙ্গে জেজেপি জোট) থেকেও তাঁদের প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারিনি।’   
আর একমাস পরেই হরিয়ানায় বিধানসভার ভোট। দিন যত এগিয়ে আসছে তত চাপ বাড়ছে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের উপর। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসের পর থেকে কী এমন হল যে হরিয়ানার লক্ষ লক্ষ মানুষের মন উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করল? ব্যাপারটা একদিনে ঘটেনি। মেয়েদের স্বাধীনতা এবং সম্ভ্রমের প্রশ্নে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। ২০১৪ সালে দলও ভেবেছে বিজেপি ‘অপরাজেয়’। তাই কোনও সমালোচনাকে আমল দেয়নি। মনোহরলালও চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য। এরপর দেশজুড়ে বিরূপ হল কৃষক শ্রেণি। প্রতিবাদ আন্দোলন ধ্বনিত হল পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি। একগুচ্ছ দাবি জানাতে গিয়ে সরকারের ভয়াবহ রোষের মুখে পড়লেন দেশের ‘অন্নদাতারা’। সরকার এবং শাসক দল সমালোচিত, নিন্দিত হল দুনিয়া জুড়ে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জুটল মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে অন্যায় কাণ্ড এবং জাতিগত সংরক্ষণ বা কোটা আন্দোলন। কৃষক এবং মহিলাদের ক্ষোভ প্রশমনের বিষয়টি গুরুত্ব পেল না। শাসক চিন্তিত হল কেবল মুখ্যমন্ত্রীর একার ভাবমূর্তি এবং কোটা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বদলে ফেলা হল। মনোহরলালের জায়গায় যাঁকে আনা হল সেই নায়েব সিং সাইনি হলেন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) প্রতিনিধি। হরিয়ানার মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ওবিসি। কিন্তু এই গেরুয়া চাল যে পাবলিক খায়নি, তার প্রমাণ এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল। তার উপর ফের আন্দোলনে কৃষকরা। হরিয়ানা-পাঞ্জাবের শম্ভু সীমানায় দ্বিতীয় দফার আন্দোলনের ২০০তম দিন ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। এবার সেই মঞ্চেই হাজির হরিয়ানার ‘সোনার মেয়ে’ ভিনেশ ফোগাট! বিজেপিকে গোহারা করার ডাক দিয়েছেন যাঁরা, সেই কৃষকেদরই সঙ্গে থাকার স্পষ্ট বার্তা তাঁর মুখে। বিধানসভা ভোটের আগে স্বভাবতই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা