শরীর ও স্বাস্থ্য

ডুয়াল পার্সোনালিটি হয় কেন

দ্বৈত সত্তা! কাদের থাকে, কেন হয়? এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ই বা কী? জানালেন মনোবিদ ডঃ অমিত চক্রবর্তী।

গোলোক দারোগার নামে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। দুঁদে পুলিশ অফিসার হিসেবে নাম বলুন বা দুর্নাম, দুই-ই আছে। ডিপার্টমেন্টের লোকজন আড়ালে আবডালে ‘হিটলার’ বলে ডাকে। এহেন গোলোকবাবুই আবার বাড়িতে একেবারে মাটির মানুষ, শুধু তা-ই নয়, ‘দুনিয়ার কাউকে না-ডরাই’ গোলোক মজুমদার বিস্তর ভয় পায় তার বউ জয়াকে! বাড়িতে বউ ও ছেলেমেয়েদের কাছে গোলোকবাবু ছাপোষা নিরীহ! 
শুধু গোলাকবাবুই বা বলছি কেন? পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুসারে কখনও না কখনও, কোনও না কোনওদিন আপনি নিজেও কি আপনার সত্তার একেবারে ভিন্ন একটি দিক দেখে নিজেই মনে মনে চমকে ওঠেননি? ‘জ্যাকেল আর মিস্টার হাইড’ কিংবা সুকুমার রয়ের ‘হেড অফিসের বড়বাবু’-র গল্পও তো অনেকেই জানেন! মনোবিজ্ঞান বলছে, আমাদের মনের ভিতর একইসঙ্গে নানা সত্তা অবস্থান করে। দ্বৈত সত্তা বলতে সাধারণত একই সময়কালে একজন মানুষের মনের পরস্পরবিরোধী দুই সত্তাকেই বোঝায়। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পারিবারিক ক্ষেত্রে অত্যাচারী, হিংস্র এক ব্যক্তি বাইরের মানুষের কাছে খুব দয়ালু। 

দ্বৈত সত্তা কি স্বাভাবিক?
কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে বা পারিপার্শ্বিক চাপে অনেক সময় অনেকের দু’রকম ব্যক্তিত্ব প্রাকাশ হয়ে যায়। কিন্ত সামগ্রিকভাবে দিনের পর দিন একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব এক একটি জায়গায় এক একরকম হয়ে দেখা দিচ্ছে— এমনটা খুব স্বাভাবিক নয়। যাঁরা দিনের পর দিন এই দুই ধরনের ব্যক্তিত্ব নিয়ে জীবনধারণ করেন তাঁদের এটি মানসিক সমস্যা। এঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি ব্যক্তিত্ব আদৌ আর একটি ব্যক্তিত্বের উপস্থিতির কথা জানেই না। অর্থাৎ মানুষটি নিজেও বুঝতে পারেন না তাঁর মধ্যে দু’রকম স্বভাব একইসঙ্গে বিরাজ করছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডার। দেখা গিয়েছে, উৎকণ্ঠা বা উদ্বেগজনিত কারণে এই অসুখ হয়। এর আর এক লক্ষণ ‘ভর হওয়া’। হঠাৎই পুজো মণ্ডপে বা পুজোর আসরে কেউ দেবতাস্বরূপ আচরণ শুরু করলেন, অন্যরা ভাবল ‘ঠাকুর ভর করেছে’। এই ধরনের ব্যক্তিত্বও হিস্টিরিয়া বা উদ্বেগজনিত অসুখের ফল। বহুক্ষেত্রেই এই ধরনের ব্যক্তিত্ব অজ্ঞান ও অচেতন মনন থেকে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অবশ্য তা সজ্ঞান অভিনয়ও হতে পারে।  

কেন হয়
অনেক সময় দেখা যায়, একজন মানুষ যে পরিবশে থাকছেন, তা তাঁর অনুকূল নয়। কিংবা তিনি হয়তো মানসিকভাবে বঞ্চিত ও অত্যাচারিত। সেসেব ক্ষেত্রে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা বেশি থাকে। ফলে সেই ঘটনা তিনি ভুলে থাকতে চান ও নিজের এমন এক ‘নকল’ ব্যক্তিত্ব তৈরি করেন, যা তাঁকে সুরক্ষা দিতে পারে। অনেক সময় আরও নানা উদ্বেগজনিত কারণেও নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা কোনও মানুষে পরিণত করতে চান তাঁরা। এতে যে মানসিক চাপ থেকে নিস্তার মেলে তা সাময়িক। 

ভুলে যাওয়া জীবন
দ্বৈত সত্তা নিয়ে কথা বলতে গেলে একটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়! রোগী হিসেবে এমন একজনকে চিনি যাঁর বাবা-মা ও সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এই মেয়েটি সেই মানসিক চাপ নিতে না পেরে ধীরে ধীরে তার কলেজ জীবনের দিনযাপনে ফিরে গিয়েছেন। ভুলে যেতে চেয়েছেন তাঁর মা-বাবা ছিলেন এবং কখনও বিয়ে ও সন্তান হয়েছিল। বরং একেবারে স্বাধীন ও তরুণী সময়কালকে আঁকড়েই তিনি শোক ভুলতে চেয়েছেন। এতে তিনি তাঁর চরম শোক ও দুঃখকে এড়িয়ে বাঁচতে পারেন। আপাতভাবে তা উপকারী বলে মনে হলেও একটি গোটা জীবনের নিরিখে এই ভাবনা চিরস্থায়ী হয় না। বরং প্রকৃত বাস্তবকে সামলানোর মতো মন তৈরি না হলে এই দ্বৈত সত্তার ঘোর কাটলেই ফের শোকে নার্ভাস ব্রেক ডাউন হতে পারে। এই মানুষদের মনের মধ্যে পরস্পরবিরোধী মনোভাব থাকে বলে তাঁরা মনস্তত্ত্বগতভাবে জটিল হন।

তাহলে উপায়?
এই ধরনের মানুষেকে ধৈর্য ধরে কাউন্সেলিং করালে, প্রয়োজন পড়লে মনোবিদের পরামর্শে উদ্বেগ কমানোর ওষুধ দিলে তাঁরা ভালো হয়ে যান। তবে সবসময় চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। মানুষ চেতনে-অবচেতনে নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সেই যুদ্ধে একসময় সে বুঝতে পারে, আসল বাস্তব কী। সে বোঝে, এই দ্বৈত সত্তা ধারণ করে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। তখন তা কেটেও যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাড়াবাড়ি রকমের দ্বৈত সত্তার অধিকারী হলে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 
লিখেছেন  মনীষা মুখোপাধ্যায়
 
28d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা