বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

বাড়বে কুসংস্কারে ভরসা

চিত্র ১: এসএসকেএম হাসপাতালে স্ত্রীর গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। দু’দিন ধরে ভর্তি তিনি। ওষুধ দিতে মাঝেমধ্যেই উপরে গিয়ে তাঁর স্বামী দেখছেন, কোনও ডাক্তার নেই। তাঁদের কাজ করছেন কোনও নার্স। অপারেশন থিয়েটারেও একই অবস্থা। স্ত্রীর কাছে শুনেছেন, অপারেশনের সময় সিনিয়র ডাক্তারকে সাহায্য করছিলেন শুধু নার্সরাই। অপারেশনের পরেও কোনও জুনিয়র ডাক্তার তাঁর স্ত্রীকে দেখেননি। সিনিয়র ডাক্তার বস্তুত সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন নার্সদের উপর! হতাশ মুখে জানালেন অশোকনগরের বাসিন্দা কাজি মফিজুল ইসলাম। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য পিজিতে তাঁদের চক্কর কাটতে হয়েছে পাঁচদিন। তাঁরা দেখেছেন, বহু বেড ফাঁকা। কিন্তু রোগী কম বলে ভালো চিকিৎসাও মেলেনি। মফিজুলের বক্তব্য, এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের আগে হয়নি। চিত্র ২: পূর্বস্থলীর গরিব মহিলা পার্বতী দাসের তিনমাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে। স্থানীয় হাসপাতাল তাঁকে রেফার করে আর জি করে। সেখানে টেস্টের দিন ধার্য হয় ছ’মাস পর। ততদিনে অবস্থার আরও অবনতি হতোই। তাই পরিবারটি ধারদেনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ওই টেস্ট করিয়ে আনে। তার ভিত্তিতে আর জি কর অপারেশনের দিন দিয়েছিল ১২ আগস্ট। কিন্তু তার আগেই সেখানে চূড়ান্ত অব্যবস্থা সৃষ্টি হল। রোগিণীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়নি। পরিবারটি ভেবেছিল, পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে। সেইমতো পরপর দু’দিন পার্বতী দেবীকে আর জি করে আনেন তাঁর ছেলে ভগীরথ। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। সোমবার সিনিয়র ডাক্তার ভগীরথকে বলেছেন, ফের আসতে পরের সোমবার। ডাক্তারের বক্তব্য, ‘সকলের সহযোগিতা’ না-পেলে অপারেশন সম্ভব নয়। ভগীরথ জানান, সামান্য রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে  তিনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য তাঁর রুটিরুজি বন্ধ টানা তিনমাস। হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন তিনি গলা পর্যন্ত ধারদেনায় ডুবে গিয়ে। তবু তাঁর মায়ের চিকিৎসা অধরা!
এই দুটি নমুনা মাত্র। টানা ২০ দিন যাবৎ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির এটাই সাধারণ এবং অতিকরুণ ছবি। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনে রাজ্যে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ। সাধারণ সময়ে ২৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে ১৫ দিনে ১০ লক্ষাধিক রোগী পরিষেবা পান। সেখানে কর্মবিরতির প্রথম এক পক্ষকালে আউটডোর পরিষেবা পেয়েছেন তার অর্ধেকেরও কম মানুষ। সাধারণ দিনে গড়ে সাড়ে ছ’হাজার মানুষ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি হন। তা এখন মাত্র চার হাজারে নেমে এসেছে। সেই হিসেবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ। এমনকী, ইমার্জেন্সিতেও ২৫ হাজার রোগী কম হয়েছে। অপারেশন কমেছে অন্তত আড়াই হাজার। রাজ্যের বড় সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোজ গড়ে ৫৭ হাজার জনের ল্যাব টেস্ট হয়। নিখরচার সেই সুবিধালাভও কমে অর্ধেক এখন। ভাটা পড়েছে রক্ত সংগ্রহেও।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ডাক্তারদের কর্মবিরতির শুরু ৯ আগস্ট। আজ, বুধবার এই অব্যবস্থার ২০ দিন। স্মরণকালের মধ্যে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা এইভাবে নস্যাৎ হওয়ার দৃষ্টান্ত বেনজির। শুরুর দিকে তাঁদের সমর্থন করছিলেন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ। এমনকী, ভোগান্তি সত্ত্বেও বহু রোগীর পরিজনও এই লড়াইয়ের পাশে ছিলেন। কিন্তু আজ বেশিরভাগ মানুষই বিরক্ত। ডাক্তার, হাসপাতাল, চিকিৎসা প্রভৃতির মূল লক্ষ্য মানুষ। হালফিল আন্দোলনের ফলে সেটাই বহুলাংশে নস্যাৎ হতে বসেছে। মানুষ আজ বড় অসহায়। তরুণী মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে নৃশংসতার ঘটনার সুবিচার সকলেই চান। প্রত্যেকেই চান দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই চলবে। এগুলি শেষও করতে হবে অতিদ্রুত। এই দাবির সঙ্গে সহমত সকলেই। পাশাপাশি, চিকিৎসা পরিষেবাও স্বাভাবিক রাখার পক্ষে তাঁরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ইতিমধ্যেই বিষয়টিতে মত প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও। বিচারের সর্বোচ্চ আসন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, ডাক্তাররা যেন অবিলম্বে তাঁদের কাজে ফিরে যান। রাজ্য সরকার তো বটেই, কেন্দ্রও একই আবেদন রেখেছে। কিন্তু কারও কথাতেই কর্ণপাত করছেন না আন্দোলনরত ডাক্তাররা। এমনিতেই আমাদের দেশে ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য এবং সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। ফলে গরিব এবং প্রান্তিক মানুষজন সাধারণভাবেই উপযুক্ত চিকিৎসা পান না। ‘বিকল্প’ চিকিৎসার নামে বহু গরিব লোক আঁকড়ে রয়েছেন ঝাড়ফুঁক বা ওঝা-গুনিনের কেরামতি। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুবিধা বঞ্চিত বহু মা। ডাইনি প্রথা থেকেও মুক্ত নয় সমাজ। এমনই এক করুণ পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের একাংশের অবিবেচক ভূমিকায় রাজ্যের বিনামূল্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা অনেকাংশেই নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। সচেতন, সংবেদনশীল মানুষের প্রশ্ন, আন্দোলনকারীরা কী চান? গরিব প্রান্তিক মানুষজন কি ফের কুসংস্কারের অন্ধকার আবর্তে ফিরে যাবেন? এই অপরাধের দায় তাঁরা নেবেন তো?
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা