বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

কুম্ভীরাশ্রু নয় তো?

ব্যবধান দু’বছরের বেশি। কিন্তু ছবিটা হুবহু এক! গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনের যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ ফুরনোর আগেই মুক্তি। তারপর সেই অপরাধীদের ‘বীরের’ সম্মান দিয়ে ফুল-মালা-মিষ্টিতে সংবর্ধনা জানানো। ঘটনাস্থল গুজরাত, দিনটি ছিল ২০২২-এর স্বাধীনতা দিবস। পরের ঘটনা আগস্টের শেষ সপ্তাহে। গণধর্ষণের ঘটনায় মাত্র সাত মাস জেলবন্দি তিনজনের মধ্যে দু’জনকে জামিনে মুক্তি দিল আদালত। বারাণসীর এই ঘটনায় জামিনপ্রাপ্তদের জেলমুক্তির পরেই বিপুল সংবর্ধনা জানানো হল! দুই অভিযুক্তকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হল। দুটি ঘটনাতেই কাঠগড়ায় বিজেপি তথা হিন্দুত্ববাদীদের কেউ কেউ। এবং দুটি ঘটনাতেই মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী! অথচ আর জি কর হাসপাতালের পৈশাচিক ঘটনার পর নারী নির্যাতন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খুব সম্প্রতি তিন তিনবার মুখ খুলেছেন নরেন্দ্র মোদি। সর্বশেষ গত শনিবার মহিলাদের উপর যৌন হেনস্তার মামলাগুলিতে ‘দ্রুত বিচার’ চেয়ে সরবও হন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই দু’মুখো মনোভাবকে ‘দ্বিচারিতা’ বলে মনে করছে বিরোধীরা। এই মনে হওয়া একেবারেই অমূলক নয়। বরং একে প্রহসন, ভণ্ডামি বললেও বোধহয় অত্যুক্তি করা হবে না। পরিসংখ্যান বলছে, মোদি জমানায় ধর্ষণ প্রায় জলভাত হয়ে গিয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুসারে দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩১ হাজার ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ৪.৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ হল নথিভুক্ত সংখ্যা। এর বাইরে সামাজিক কারণে আরও হাজার হাজার যৌন নির্যাতনের কাহিনি যে প্রকাশ্যে আসে না, তা বলাই বাহুল্য। এর পরেও যখন দেখা যায়, সরকার কিংবা পুলিস প্রশাসনের বদান্যতায় অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে প্রকাশ্যে মাতামাতি করছে শাসকপক্ষ, আর ‘নিজেদের’ লোক বলে এসব দেখেশুনেও চোখ বুজে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী— তখন তাঁর উদ্বেগ প্রকাশকে ‘মেকি’ মনে করে প্রশ্ন তো উঠবেই।
বিলকিস বানো নামটা বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদির রাজত্বেই পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। তাঁর চোখের সামনেই প্রায় গোটা পরিবারকে নিকেশ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট গুজরাতের বিজেপি সরকার ‘জেলে ভালো ব্যবহার’-এর তকমা দিয়ে ১১ জনকেই মুক্তি দেয়। জেলমুক্তির পরেই এই ঘৃণ্য অপরাধীদের সংবর্ধনা দেয় উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা। এদের ‘ব্রাহ্মণ ও সংস্কারি’ বলে গর্বিত প্রচার হয়। এনিয়ে দেশ তোলপাড় হওয়ায় শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফের জেলে ঠাঁই হয় ওই ১১ জনেরই। গুজরাত মোদির মাতৃভূমি হলে বারাণসী তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশের যোগীরাজ্যের এই মন্দির শহরের গর্ব আইআইটি’র বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই ২০২৩ সালের নভেম্বরে ঘটে যায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। সেই সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের মধ্যে নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় ২০ বছরের বিটেক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল যে ‘পশুরা’ তারা তিনজনই বিজেপি’র আইটি সেলের অন্যতম মাথা। পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। বাইক-ফোন বাজেয়াপ্ত করে। অভিযুক্তরা নাকি অপরাধের কথা স্বীকারও করে। তবু দেখা যায়, আগস্ট মাসের শুনানিতে দু’জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আরেকজনের ক্ষেত্রে শুনানি হবে চলতি মাসের শেষে। একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, এই মামলায় সরকারের আইনজীবী নাকি ধর্ষণের উপযুক্ত প্রমাণই দিতে পারেননি। তাঁর সওয়ালেও কোনও ঝাঁঝ ছিল না। এই অভিযুক্তরা কতটা প্রভাবশালী তা বোঝা যায় যখন দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা জেপি নাড্ডার মতো বিজেপি’র সর্বভারতীয় নেতাদের সঙ্গে একফ্রেমে তাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে! মধ্যপ্রদেশের গত বিধানসভা ভোটে তাদের প্রচার করতেও দেখা গিয়েছিল।
আসলে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কোনও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলে দেখা যায় কেন্দ্রের শাসক দল তা ইস্যু করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে থাকে নীরব। জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া থেকে গুজরাত, মণিপুর থেকে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, হাতরাস— দেশে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সোনার মেয়ে মহিলা কুস্তিগীরদের কেউ কেউ  হয়েছেন বিজেপির এক গুণধর সাংসদের লালসার শিকার। স্বঘোষিত ‘ধর্মগুরু’ আশারাম বাপু, রাম-রহিমের কুকীর্তির কথা কারও অজানা নয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে এমন উদ্বেগ ধরা পড়েনি। আর জি করের ঘটনার পর এখন মেয়েদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, কড়া আইন, দ্রুত সাজা, কঠোরতম শাস্তি—প্রধানমন্ত্রীর মুখে গত কয়েকদিন এইসব শব্দবন্ধ শুনে তাই মনে হতেই পারে তিনি কি এসব কথা  বলছেন শুধুই বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলির ঘটনার দিকে তাকিয়ে? মোদি রাজত্বে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর গালভরা স্লোগান থাকলেও একের পর এক ঘটনা প্রমাণ করছে এই জমানায় ‘বেটিরা’ সুরক্ষিত নয়। আর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে নীরব থেকে মোদির সরকার কার্যত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টাই করেছে। তাই প্রশ্ন, শাসকের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতা কই? কোথায় ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা!
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা