সম্পাদকীয়

খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি

সল্টলেকে  স্বাস্থ্যভবনের সামনে পাঁচ দফা দাবিতে ধর্নায় বসেছেন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। অথচ সেই দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত দিয়ে বৈঠক ভেস্তে দিলেন আন্দোলনকারীরাই! এমন নজির এই বাংলায় তো বটেই ভূ-ভারতেও আছে কি না সন্দেহ। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনার পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনকারীরা কি নিজেদের তোলা দাবি নিয়ে আলোচনায় আদৌ আগ্রহী ছিলেন? নাকি, ‘অযৌক্তিক’ শর্তে অনড় থেকে আসলে বৈঠক ভেস্তে দিতে নবান্নে গিয়েছিলেন? তাঁদের এই আচরণ অনেকটা ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’ হয়ে গেল না! জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেছেন, বৈঠকের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য তাঁরা এই শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু যে মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, কথা প্রসঙ্গে যদি অসতর্কতাবশতও সেই বিষয়টি এসে পড়ে, কোনও সরকারকে তা সরাসরি সম্প্রচার করতে বলা কি আদালত অবমাননার শামিল নয়? জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁরা শুধু পাঁচ দফা দাবি নিয়েই আলোচনা করতেন, মামলার বিষয় নিয়ে কথা বলতেন না। এই কথা বলার অর্থ হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গত দু’দিনের শুনানিতে কলকাতা পুলিস ও স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে একাধিক অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে। কখনও সিবিআইয়ের আইনজীবী, কখনও বিচারপতিরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে, প্রায় একই ধরনের অভিযোগ ও প্রশ্ন তুলে কলকাতার পুলিস কমিশনার ও রাজ্যের তিন স্বাস্থ্যকর্তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারীদের অন্যান্য দাবির মধ্যেও যা বলা হয়েছে, সেসবও শুনানির বিষয়ের মধ্যেই পড়ে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত প্রমাণ নষ্ট ও লোপাটের মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। ফলে কাঠগড়ায় রয়েছে সরকারের দুই দপ্তর। পুলিস ও স্বাস্থ্যকর্তাদের কারও কারও পদত্যাগ চাইতে গিয়ে এই অভিযোগগুলিই তুলে ধরছেন আন্দোলনকারীরা, যা আসলে বিচারাধীন। এই সঙ্গত কারণে সরাসরি সম্প্রচারে আপত্তি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার। এর সঙ্গে অতীতের প্রসঙ্গ টানা ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা নয় তো? 
চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ৩৫ দিন ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। তাঁরা ন্যায়বিচার চাইছেন। জাস্টিস চাইছেন দলমত নির্বিশেষে সকলে। আন্দোলনকারীরা অস্বীকার করলেও ঘটনা হল, আর জি কর কাণ্ডের কারণে অচলাবস্থার জেরে কলকাতা ও জেলার মূল সরকারি হাসপাতাল, যেখানে রোগীর চাপ সর্বাধিক, সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা চূড়ান্তভাবে অবহেলিত হচ্ছে। কোনও সভ্য সমাজে দিনের পর দিন এটা কি চলতে পারে? দাবি সঙ্গত হলেও পারে না। কারণ পুলিস, দমকল, পানীয় জল সরবরাহের মতো চিকিৎসা পরিষেবাও ‘জরুরি’ ক্ষেত্র বলে চিহ্নিত। স্বভাবতই কর্মবিরতি তুলতে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলে অনুমতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ব্যবস্থা মানে, কর্মবিরতি যাঁরা করছেন আইনের পথে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। অন্য রাজ্যে তো বটেই, এ রাজ্যেও ১৯৮৩ সালে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ভাঙতে পুলিসি দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু। ৪০ বছর আগের সেই জনস্বার্থবাহী আন্দোলন নিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আপনাদের থেকে জনস্বার্থ শিখব? আগে স্ট্রাইক তুলুন, দাবি নিয়ে পরে ভাবব। সীমা ছাড়াচ্ছেন, বিপদে পড়বেন।’ সত্যিই বিপদে পড়েছিলেন ডাক্তাররা। সেবার পুলিসের বেপরোয়া আক্রমণে আন্দোলন ভেঙে ছত্রাখান হয়ে গিয়েছিল। এটা ঠিক, সেইসময়ে অবশ্য আর জি কর কাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক পৈশাচিক ঘটনা ঘটেনি।
বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন ভাঙার সেই সুযোগ এখনও হয়তো আছে। কিন্তু আজকের মুখ্যমন্ত্রী তা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বরং তিনি চান, ছোট ছোট ভাইবোনের মতো জুনিয়র ডাক্তাররা খোলা মনে তাঁদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসুন। সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও তাঁদের নিরাপত্তা বাড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ঘটনা হল, এই আর্জি নিয়ে আন্দোলনকারীদের পথ চেয়ে দু’দিন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় নবান্নে অপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাক্তাররাও তো সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত প্রত্যাহার করে নিজেদের দাবিকেই ফোকাস করতে পারতেন। মনে রাখতে হবে যে, জাস্টিসের দাবিতেই তাঁদের আন্দোলন চলছে এবং তা জনসমর্থনও পাচ্ছে। এখন শর্তের আড়ালে আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরে গেলে মানুষ তা ভালোভাবে নেবেন তো? এটাও তাঁদের মনে রাখা দরকার। কোনও আন্দোলনই অনন্তকাল একইভাবে চলতে পারে না। সরকার সদিচ্ছা দেখিয়েছে, আপনারাও দেখান। 
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা