সম্পাদকীয়

চিকিৎসা-বঞ্চনা চলছেই

২৮ আগস্ট প্রকাশিত খবরে দুটি মর্মান্তিক চিত্র ছিল এইরকম—(এক): পিজিতে স্ত্রীর গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। ওয়ার্ডে ওষুধ দিতে গিয়ে তাঁর স্বামী দেখছেন, ডাক্তার নেই। সবটাই করছেন নার্স। ওটিতেও একই অবস্থা। স্ত্রীর কাছে শুনেছেন, অপারেশনের সময় সিনিয়র ডাক্তারকে সাহায্য করছিলেন শুধু নার্সরাই। অপারেশনের পরেও কোনও জুনিয়র ডাক্তার তাঁর স্ত্রীকে দেখেননি। সিনিয়র ডাক্তার বস্তুত সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন নার্সদের উপর! হতাশ মুখে জানালেন অশোকনগরের বাসিন্দা কাজি মফিজুর ইসলাম। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য পিজিতে তাঁদের চক্কর কাটতে হয়েছে পাঁচদিন। তাঁরা দেখেছেন, বহু বেড ফাঁকা। তবে রোগী কম হওয়ার সুবাদেও ভালো চিকিৎসা মেলেনি। (দুই): পূর্বস্থলীর গরিব মহিলা পার্বতী দাসের তিনমাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে। স্থানীয় হাসপাতাল তাঁকে রেফার করে আর জি করে। সেখানে টেস্টের দিন ধার্য হয় ছ’মাস পর। ততদিনে অবস্থার আরও অবনতি হতোই। তাই পরিবারটি ধারদেনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ওই টেস্ট করিয়ে আনে। তার ভিত্তিতে অপারেশনের দিন পড়ে ১২ আগস্ট। কিন্তু তার আগেই সেখানে চূড়ান্ত অব্যবস্থা সৃষ্টি হল। রোগিণীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়নি। পরিবারটি ভেবেছিল, পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে। সেইমতো পরপর দু’দিন পার্বতী দেবীকে আর জি করে আনেন তাঁর ছেলে ভগীরথ। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। সোমবার সিনিয়র ডাক্তার ভগীরথকে বলেন, ফের পরের সোমবার আসতে। ডাক্তারের বক্তব্য, ‘সকলের সহযোগিতা’ না-পেলে অপারেশন সম্ভব নয়। ভগীরথ জানান, সামান্য রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে তিনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য তাঁর রুটিরুজি বন্ধ টানা তিনমাস। হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন তিনি গলা পর্যন্ত ধারদেনায় ডুবে গিয়ে। তবু তাঁর মায়ের চিকিৎসা অধরা!
হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উপর্যুপরি অনুরোধ করার পরেও কি পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন কিছু ঘটেছে? বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ছবিতেই মেলে জবাবটা। পড়ে গিয়ে ষাটোর্ধ্ব যুগল প্রসাদ হাতে-পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছেন। বউমা সুস্মিতা বুধবার দুপুরে তাঁকে এনেছিলেন আর জি করের ইমার্জেন্সিতে। এক্স-রে’তে ধরা পড়েছে হাত ভেঙে গিয়েছে তাঁর। অপারেশন জরুরি। ভর্তি করাতেই চান সুস্মিতা। কিন্তু চটপট উত্তর পেলেন, ‘অপারেশন করার ডাক্তার কোথায়?’ কান্না জড়ানো গলায় সুস্মিতা বলেন, ‘আমরা কোথায় যাব? প্রাইভেটে চিকিৎসার সামর্থ্য নেই।’ অগত্যা আলমবাজারের বাড়িতেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যুগল প্রসাদ! রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা-বঞ্চিত গরিব মানুষ এমন হাজার হাজার। পথ দুর্ঘটনা, হার্টের অপারেশন, ব্রেন টিউমার, ক্যান্সার গ্রোথ প্রভৃতি হাজারো সমস্যায় জেরবার তাঁরা। অন্যদিকে, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করে চলেছেন, ‘সব ঠিক হ্যায়!’ তাঁরা গলা উঁচিয়েই বলছেন, ‘সিনিয়র ডাক্তাররা তো আউটডোর, ইন্ডোর, ইমার্জেন্সি সর্বত্র চিকিৎসা করছেন। তবু আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।’ স্বভাবতই জনমানসে এই প্রশ্নই জোরালো হচ্ছে: তাহলে কি চিকিৎসা বঞ্চনার প্রসঙ্গ তোলা যাবে না? কিল খেয়েই কিল হজম করতে হবে? বলতে হবে, ‘আমরা ভালো আছি!’
জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতির জেরে ৯-২৩ আগস্ট, প্রথম ১৫ দিনে রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ডাক্তারদের একাংশের কর্মবিরতির ২৭তম দিন গেল বুধবার! বাতিল কিংবা পিছনো অপারেশনের সংখ্যা সেদিন পর্যন্ত ছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। পিজিতে ১-৮ আগস্ট পর্যন্ত সব বিভাগ মিলিয়ে ৯১০টি বড় অপারেশন হয়েছে। সেখানে ৯-২০ আগস্টের মধ্যে অপারেশন নেমে গিয়েছে অর্ধেকের নীচে। আন্দোলনের ভরকেন্দ্র আর জি করে ৯ তারিখের আগে ট্রমা কেয়ার ওটি, ইএনটি ওটি, বার্ন ওটি, এসওটি, নিউরো ওটি, আই ওটি, গাইনি ওটি মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ৮৫টি বড় অপারেশন হতো। সংখ্যাটি এখন দশও কি না সংশয় রয়েছে। আর জি করে সাম্প্রতিক চিকিৎসা খতিয়ান এইরকম: ৯ আগস্ট মোট অপারেশন হয়েছে ৮৪টি। ১০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮৪টি অপারেশন হয়েছে। তার মধ্যে ১৬, ১৭, ১৮ আগস্ট একটিও অস্ত্রোপচার হয়নি! মোটামুটি একই ছবি মহানগরের বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও। এই আবহে বুধবার ডাক্তারদেরই সর্বভারতীয় সংগঠন আইএমএ ফের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু বৃহস্পিতবার ২৮তম দিনেও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের কাছ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ইতিমধ্যে চিকিৎসা-বঞ্চিত কিছু মানুষের মৃত্যুর মতো দুঃসংবাদও সামনে এসেছে। মানুষকে বাঁচাবার শপথ নিয়ে এই মহান পেশায় যাঁরা প্রবেশ করেছেন, এতে তাঁদের মানবিক মূল্যবোধ প্রশ্নের মুখে পড়বেই। তাঁদের অবিবেচক ভূমিকায় নিরীহ নিরপরাধ মানুষের অকালমৃত্যুর জন্যও হাতে হাতে উঁচু হয়ে ঘুরতে পারে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্ল্যাকার্ড! এই পরিস্থিতি কিন্তু অবাঞ্ছিত, আমরা কেউই তা চাই না।
10d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা