সম্পাদকীয়

রোগীরাও ‘জাস্টিস’ পাক

আশঙ্কাই সত্যি হল। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রায় এক মাস ধরে চলা কর্মবিরতির জেরে প্রতিদিন শত শত রোগীর চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এবার প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে খোদ আর জি কর হাসপাতালে! শুক্রবার কোন্নগরের এক ২৭ বছরের যুবককে মাথা ও পায়ে গুরুতর জখম অবস্থায় আর জি করে আনা হয় সকাল ৯টা নাগাদ। অভিযোগ, ১২টা নাগাদ মৃত্যুর আগের তিন ঘণ্টা কার্যত কোনও চিকিৎসাই পায়নি সেই যুবক। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা অবশ্য যুবকের চিকিৎসায় ত্রুটির কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, প্রচুর রক্তক্ষরণেই ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, এই সরকারি হাসপাতালের কর্তারা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করলেও ছেলেটির পরিবারের মতো শাসকদলের সেকেন্ড ইন কমান্ড তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘পথ দুর্ঘটনায় জখম কোন্নগর থেকে আসা এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় প্রায় তিন ঘণ্টা পড়ে থেকে মারা গিয়েছেন। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ডাক্তারদের যে আন্দোলন চলছে এটা তারই ফলশ্রুতি।’ স্পষ্টতই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্যের সঙ্গে শাসকদলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও নিহতের পরিবারের বক্তব্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হলে এই যুবকের মর্মান্তিক পরিণতির অভিযোগ নিয়ে কি তদন্ত হওয়া উচিত নয়? কয়েকটি প্রাসঙ্গিক দাবিতে ডাক্তাররা যে আন্দোলন করছেন, তাকে দু’হাত তুলে সমর্থন জানাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা যাঁদের উপর অনেকাংশ নির্ভরশীল, গরিব নিম্নবিত্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের থেকে তাঁদের মুখ ফিরিয়ে থাকাটা কোনও সুস্থ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ হতে পারে কি? ওই গরিব মানুষগুলো তো ডাক্তারবাবুদের ভগবানতুল্য জ্ঞান করেন। এই রোগীরা কি একটু ‘জাস্টিস’ চাইতে পারেন না?
একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, এই আন্দোলনে চিকিৎসা পরিষেবা নাকি তেমন ব্যাহত হচ্ছে না। জুনিয়র ডাক্তারদের ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছেন সিনিয়র ডাক্তাররা, যাঁরা কর্মবিরতিতে শামিল নন। মূলত এঁদের নিরলস প্রচেষ্টাতেই আউটডোর ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক গতিতে চলছে। এর সঙ্গে রয়েছে ‘অভয়া ক্লিনিক’। যে সরকারি ডাক্তাররা এই দাবি করছেন সেই সরকারেরই শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, আন্দোলনের জেরে সরকারি হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা ও অস্ত্রোপচার কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। রোগী ভর্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, চিকিৎসা না পেয়ে বহু রোগী বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ভিড় করছেন, যার জেরে সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের দৈনিক খরচ এক ধাক্কায় ৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ঘটনা হল, সরকারি ডাক্তাররা যে দাবিই করুন, বাস্তব সত্যটা হল একশো জনের কাজ কখনও তিরিশ জনকে দিয়ে করা যায় না। তাই সিনিয়র ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল সচল, স্বাভাবিক রাখার কথা তত্ত্বগতভাবে ঠিক হলেও তথ্যগতভাবে তার তেমন কোনও ভিত্তি নেই। সেই কারণেই জেলা থেকে শহরে প্রতিদিন চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়া বা মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। কোনও কুযুক্তি দিয়ে একে অসত্য প্রমাণ করার চেষ্টা না করাই শ্রেয়। জুনিয়র ডাক্তার ও নাগরিক আন্দালনের জেরে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা রোগী, নিত্যযাত্রী, পথ চলতি মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সব অংশের মানুষ যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে এই অসুবিধা মানিয়ে নেওয়া গেলেও একজন অসুস্থ মানুষ তাঁর রোগের সঙ্গে কীভাবে আপস করবেন? তেমনটা করতে বাধ্য করা তো অপরাধের শামিল।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। একই আর্জি জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও। তবু ডাক্তাররা অনড়! প্রশ্ন উঠেছে, আবেদনের আড়ালে আদালতের বক্তব্য অমান্য করা কি উচিত কাজ হচ্ছে? নাকি প্রতিবাদ আন্দোলনের পাশাপাশি স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা চালু করাটাই সঠিক দয়িত্ব পালন করা হবে? ওই ডাক্তার-পড়ুয়া তরুণীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। তারা এই তদন্তের কিনারা করতে আর কত সময় নেবে সেই উত্তর পেতে উদগ্রীব সমাজ। একইভাবে ডাক্তাররা আর কতদিন কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন সেই উত্তরও সমানভাবে জানতে আগ্রহী ভুক্তভোগী মানুষ। কারণ দুটোই সমাজের জন্য সমান জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলনকারী ডাক্তাররা তা অনুধাবন করে দ্রুত কাজে ফিরবেন, এটাই এখন সময়ের দাবি।
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা