বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

স্বপ্ন হলেও সত্যি
কলহার মুখোপাধ্যায়

মামা বলল, ‘আগে ভালো করে লাটাই ধরতে শেখ, তারপর ঘুড়ি ওড়াবি।’ বাবা বলল, ‘আগে ভালো করে সিট বেল্ট বাঁধতে শেখ, তারপর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরবি।’   পাড়ার ন্যাপাদা বলল, ‘মাঠে ঠিকমতো দৌড়তে শেখ আগে, তারপর বলে পা দিবি।’ দিদি বলল, ‘ঠিকমতো পেন্সিল ধরতে শেখ, তারপর রং-তুলি কিনে দেব।’
ফলে না হল ফুটবল খেলা, না ছবি আঁকা। গাড়ি চালানোও না। সুতো ভর্তি লাটাই হাতেই রইল। ঘুড়ি আর ওড়ানো হল না জীবনে। ইচ্ছে বদলে গেল আফসোসে। তারপর হতাশা। ভাগের মায়ের গঙ্গা হয়ে হাতের ঘুড়ি কোনওদিনই আর আকাশ পেল না।
সে বছরটা সবথেকে কষ্টে কেটেছে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মামা এল। ভাইফোঁটা অবধি ছুটি নিয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর ক’দিন দিদির বাড়িতে থাকবে। মা ছুটি নিল। বাবাও অফিস যাবে না। ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া হবে। হেভি ফূর্তি সবার। মামা নিজেই মাঞ্জা দেবে। ডিম মাঞ্জা। শুধু টিউব গুঁড়ো করা ছাড়া বাদবাকি সব কাজ কে করল? ছুটোছুটির কাজ পুরোটা করতে হয়েছে কাকে? ওদের তো শুধু হুকুম, ‘ডিম নিয়ে আয়। অ্যারারুট গোলা নীচ থেকে ছুটে নিয়ে আয়। কাগজ পাত ছাদে। পাঁচিলে ইট পেতে দে। সুতো খোল। এত দেরি করছিস কেন? ভোঁদাই কোথাকার। নীচে যা। বাটিতে করে জল নিয়ে আয়। ওরে ওখানে রোদ পড়ে না। অন্যদিক দিয়ে সুতোটা ঘুরিয়ে বাঁধ। দেখিস পাঁচিল থেকে যেন পিঁপড়ে না আসে।’ সকাল সাতটা থেকে শুধু ছুট আর ছুট। তাও মামা সন্তুষ্ট হয় না। দুপুর রোদে মাঞ্জা শুকোবে। কোনওরকমে ভাত খেয়ে ছাদে উঠে ঠায় বসে থাক। কেন? না, বৃষ্টি আসবে আসবে করলেই খবর দিতে হবে। এই করতে করতে মাথা টিপটিপ করছে। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগলেই পাঁচিল থেকে সুতো গুটিয়ে তুলতে হবে। বৃষ্টি থামলে আবার মেলতে হবে। কে করবে এসব? সারাদিন এভাবে চলল ছুটোছুটি করে। তারপর হাজার মাঞ্জা গোটাতে হল লাটাইতে। হাত টনটন করছে। তারপরও বিকেলে শুনতে হল, ‘ঠিকমতো শুকোয়নি বুঝলি। কি করলি বলত, রোদ্দুর খাওয়াতে পারলি না তো। এটুকু এখনও শিখলি না। তাও তো দেখি ঘুড়ি ওড়ানোর বড় শখ! তুই ওড়াবি ঘুড়ি! ফুঃ। লাটাইটায় যাতে পিঁপড়ে না লাগে, খেয়াল রাখিস।’ সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে, এই আশায় যে, কাল দুপুরে যখন ভাত খেতে নামবে সবাই তখন ঘুড়ির সুতো হাতে ধরিয়ে যাবে। 
তখন পেটকাটি ফরফর করে উড়বে ওই-ই দূরে, শ্যামলদেরও বাড়ি ছাড়িয়ে বস্তি পর্যন্ত। দেখে হাঁ হয়ে যাবে সকলে। সন্টু, সন্টুর কাকা, দেবা, গনাই—সবাই চেঁচাবে, ‘এ তো পাকা খেলোয়াড় রে। কোথায় ছিলি এদ্দিন!’ তখন খুব ধরে ধরে খেলতে হবে প্যাঁচ। নিতাই, বুড়ো, পটু—সবার ঘুড়ি এক এক করে ঘ্যাচাং। মামা ছাদে এসে দেখে ট্যারা হয়ে যাবে। ‘করেছিস কি রে! তুই দেখছি ঝানু হয়ে উঠেছিস। শিখলি কোথায়?’ মামার কথার কোনও উত্তর দেওয়ার সময় নেই। তিতলি ছাদে উঠেছে। ওরও মামা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে চিলছাদ থেকে। এখন কম করে গোটা তিনেক না কাটলে ইজ্জত নেই। বুড়ো আর দেবার ঘুড়ি দুটো তো কাটতেই হবে। ক’দিন আগে টিভিতে শোলে দিয়েছিল। বাবা-মা অফিসে ছিল বলে পুরোটা দেখা শেষ। সেই ডায়ালগটা হঠাৎ মনে পড়ল, ‘চল ধন্নো আজ তেরি বসন্তি কা ইজ্জত কি সওয়াল হ্যায়’ এই ধরনের কি একটা যেন বলেছিল বসন্তি। তিতলির সামনে ইজ্জতটাই আসল। মা বিকেলে ছাদে এসে সব শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে হাঁ করে। ‘হ্যাঁ রে তুই এত বড় হয়ে গেলি কবে! এতগুলো ঘুড়ি কেটে দিলি। বাব্বা! বড় বীরপুরুষ দেখছি।’ তা কি হল? সাধে কি বলা, সে বছরটা কেটেছে সবথেকে কষ্টে।
সকাল থেকে বাড়িতে হুলস্থুল। দাদা-দিদি বন্ধুর বাড়ি যাবে। বেরিয়ে গেল। মামা চেঁচাচ্ছে, ‘চল রে, দেরি হয়ে গেল।’ মা চেঁচাচ্ছে, ‘না, না, শুরুতেই মুখপোড়া নয়। অমঙ্গল হবে। প্রথমে চাঁদিয়াল নে। তারপর পেটকাটি, তারপর মুখপোড়া।’ মায়ের কথা শুনে মামা তাই করলে। ছাদে যাওয়ার আগে বাবা রান্নার ঠাকুরদাকে বলে গেল, ‘চা আর জলটা বারবার দিও। ছাদে ওঠার পর ঢুকল বড় মাসি ও বোন টুন্নি। ঠিক হল, ও একবার লাটাই নেবে একবার আমি। তারপর হইহই কাণ্ড ছাদজুড়ে। ভাগ্যি টুন্নি এসেছিল, না হলে লাটাইয়ে সুতো গোটাতে হাতে নড়া খুলে যেত। 
খানিক পর দেখা গেল, মামার আর সে ধার নেই। মাঞ্জা সেভাবে টানতে পারল না। অনেকগুলো ঘুড়ি কাটা গেল। বাবাও দেখলাম ফেল। বেলাও হল অনেকটা। এবার খেতে যাবে সবাই। এই এতক্ষণের অপেক্ষা এবার পূর্ণ হবে। মুখ তুলে চাও ঠাকুর। কাল দানাদার ভোগ, শিওর! মামা তখন লাল-সবুজ মোমবাতিটা ওড়াচ্ছে। এবার মামা সুতো হাতে সবে বলতে শুরু করেছে, ‘নে ওড়া। সবসময় খেয়াল রাখবি ঘুড়ির মুখটা যেন উপরের দিকে থাকে। যদি ডানদিকে নিতে হয়, তাহলে হাতটা একটু ডানদিকে কাত করবি, তারপর হাল্কা হাল্কা টান দিবি সুতোয়। দেখবি ঘুড়ি তোর কথা শুনছে। প্যাঁচ লাগলে লাটাই মাটিতে ফেলে টানা শুরু করবি। দেখেছিস আমাকে, তোর বাবাকে, সেরকমই করবি, পারবি না?’ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলার আগেই, মোমবাতিটা কাটা পড়ল। মামা ‘ধুস’ বলে সুতো ছেড়ে দিল হাত থেকে। বলল, ‘গুটিয়ে নে পুরোটা।’ মা আর বড়মাসি শুনিয়ে দিল, ‘দুপুর অনেক হয়েছে। নীচে চল। খেয়ে শো একটু। বিকেলে আবার আসিস।’ ব্যস, সব আশা, ইচ্ছে, ইজ্জত জলাঞ্জলি গেল। সামান্য ঘুড়ি, তাও হাতে দিল না কেউ। চোখ ফেটে সত্যিই জল এল।
জীবনে কিছুই হল না। গাড়ি থেকে ঘুড়ি, কিছুই না।
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৯৮ টাকা৮৭.০৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.০০ টাকা
ইউরো৮৮.৭০ টাকা৯১.৩৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা