প্রচ্ছদ নিবন্ধ

রথচক্র

রথের কাঠ
রথের জন্য চাই নিম ও হাঁসি গাছের কাঠ। মন্দির কমিটি প্রথমে বনদপ্তরের কাছে খবর পাঠায়। তারপর জঙ্গলে প্রবেশ করেন পুরোহিতরা। পুজো করা হয় নির্দিষ্ট গাছগুলিকে। সেই পর্ব শেষে সোনার কুড়ুল জগন্নাথদেবের চরণে স্পর্শ করিয়ে গাছ কাটার শুরু। এর জন্য ওড়িশা সরকার কোনও টাকা নেয় না। তিনটি রথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৮৮৪টি গাছের ১২ ফুটের কাণ্ড। এগুলি থেকেই তৈরি হয় রথের স্তম্ভগুলি। বসন্ত পঞ্চমীর দিন কাঠ পৌঁছে যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দির অফিসের বাইরে। পার্শ্ববর্তী জেলা দাসপাল্লা থেকেও কাঠ আসে। কাঠের গুঁড়ি ভাসিয়ে দেওয়া হয় মহানদীতে। পুরীর কাছাকাছি পৌঁছলে তা সংগ্রহ করা হয়। পরে সড়ক পথে সেই কাঠ পৌঁছয় মন্দিরের সামনে। তারপর অক্ষয় তৃতীয়ায় শ্রীমন্দিরের কাছে রয়্যাল প্যালেসের সামনে আরম্ভ হয় রথ নির্মাণ। 

রথের কারিগর
 ‘বিশ্বকর্মা সেবক’। এই নামেই পরিচিত রথের কারিগররা। বিশালাকার এই রথ ফুট-ইঞ্চির মাপ অনুযায়ী নির্মাণ হয় না। ‘হাত’ মেপে কাজ করেন শিল্পী বা মহারানারা। রথের মূল কাঠামো তৈরি করেন বঢ়েই মহারানা। চাকা তৈরি করেন পাহি মহারানারা। ওঝা মহারানারা হলেন কামার কাঁটা নায়ক। বড় বড় অংশগুলি জুড়ে দেওয়ার কাজ করেন ছন্দকররা। ছবি এঁকে রথ সাজান রূপকাররা। মূর্তিকাররা রথের কাঠ কুঁদে নানা নকশা খোদাই করেন। এঁরা কেউই প্রশিক্ষিত কারিগর নন। প্রায় ২০০ জন মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে ৫৮ দিনের মধ্যে তিনটি রথ নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন। ততদিন কারিগররা সেখানেই থাকেন এবং তাঁদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন, নির্দিষ্ট সময়ে আহার এবং সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজন। ব্রহ্মচর্য পালনও বাধ্যতামূলক। ‘সুতক’ বা ‘পাটক’ কারিগর সদস্যের পরিবারে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে কাজে হাত দিতে পারবেন না তিনি।  
রথ নির্মাণ আরম্ভ হওয়ার আগে একটি পবিত্র যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। তারপর জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার রথের নির্মাণ আরম্ভ হয় একযোগে এবং  সমাপ্তিও হয় একই ক্রমে। চাকা তৈরির মাধ্যমে নির্মাণের সূচনা করেন শিল্পীরা। গোল চাকা মনে করায় জগন্নাথের ‘চকানয়ন’। তিনটি রথের জন্য মোট ৪২টি চাকা তৈরি হয়। চন্দন-যাত্রার সমাপ্তি দিবসে সেগুলি রথের মূল কীল-এর সঙ্গে জোড়া হয়। ওই দিন প্রচুর ভক্ত জগন্নাথ দর্শনে আসেন।  

রথের দড়ি 
ভক্তদের কাছে রথের দড়ি অত্যন্ত পবিত্র। তা স্পর্শ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর পুরীতে আসেন। ভিড় করেন বাংলার মাহেশ, মহিষাদল, মায়াপুরে ইসকনের রথযাত্রা উৎসবেও। অনেকে দড়ির খানিকটা সুতো ছিঁড়ে ভগবানের আশীর্বাদস্বরূপ সঙ্গে নিয়ে যান। প্রতিটি রথের রশি ২২০ ফিট লম্বা এবং আট ইঞ্চি চওড়া। ১১৫ কেজি পাট দিয়ে তৈরি এই রশির জন্য প্রয়োজন হয় ৩০ লিটার মোবিল এবং ১৫ লিটার কেরোসিন তেলের। ১৫ জন শ্রমিক দু’দিন ধরে পরিশ্রম করেন সেই কাজে। পুরীর বীরপ্রতাপুর গ্রামে তৈরি হয় তিনটি রথের দড়ি। আগে তা আসত কেরল থেকে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে ওড়িশার চন্দনপুর এলাকার কোঅপারেটিভ কোয়্যার কর্পোরেশন লিমিটেড সংস্থার কারখানায় এই দড়ি তৈরি করা হচ্ছে। গত বছর রথগুলি টানার জন্য ১৪টি এবং ব্যারিকেডের জন্য আরও ১২টি দড়ি তৈরি করা হয়েছে। মহিলা এবং পুরুষ উভয় শ্রমিকরাই সেগুলি তৈরি করেন। তবে সেকাজে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান এবং হবিষ্যান্ন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তাঁদের সাহায্য করেন মন্দিরের স্থানীয় সেবায়েতরা। এক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের চিন্তা বড় হয়ে দাঁড়ায় না। স্বয়ং জগন্নাথদেবের কৃপায় এই সেবাধিকার পাওয়া যায় বলে মনে করেন শ্রমিকরা। 
পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার সঙ্গে আজও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পূর্ব বর্ধমানের কুলীন গ্রামের নাম। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ওই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমূল্য গ্রন্থ ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু। তাঁর পৌত্র লক্ষ্মীকান্ত বসু শ্রীচৈতন্য দেবের অন্যতম ভক্ত। ‘সত্যরাজ খান’ নামেও ভূষিত হয়েছিলেন। কুলীন গ্রামে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিল বসু পরিবারই। স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব এসেছিলেন এখানে। মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত কুলীন গ্রামের রথযাত্রা উৎসব প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। পুরীর জগন্নাথদেবের রথের জন্য সত্যরাজ খানকে কুলীন গ্রাম থেকে পট্টডোরী পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন চৈতন্যদেব। সেই আদেশ মেনে পুরীর জগন্নাথের রথের জন্য এই কুলীনগ্রাম থেকেই এককালে পাঠানো হত রেশমের পট্টডোরী। আজ আর এই প্রথা চালু নেই। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, কুলীন গ্রাম ও পুরীর রথ এক এবং অভিন্ন।

রথের সাজসজ্জা
অত্যন্ত যত্ন নিয়ে ও দক্ষতার সঙ্গে রথের সাজসজ্জা করা হয়। একটি প্রাচীন শ্লোক আছে, ‘কলায়াঃ দেশঃ যঃ সঃ উৎকলঃ’। অর্থাৎ শিল্পকলার দেশ হিসেবেই উৎকলের প্রসিদ্ধি। ওড়িশার শিল্পীদের সুন্দর হস্তশিল্পের নমুনা রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে সমগ্র বিশ্ব দেখার সুযোগ পায়। ওড়িশার প্রাচীন মন্দির নির্মাণ শৈলীর সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে রথের চাকাগুলি তৈরি করা হয়। চাকা এবং রথের কাঠামোর রংও ওড়িশার সনাতন ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই করা হয়। রথের উপর চন্দ্রাতপের আবরণ দিতে প্রায় ১২৫০ মিটার সবুজ, কালো আর লাল রঙের সূক্ষ্ম কারুকাজ করা কাপড় ব্যবহার করা হয়। দর্জিদের একটি বিশেষজ্ঞ দল রথকে কাপড়ে ঢেকে সাজিয়ে দেওয়ার কাজটি করেন। ত্রিমূর্তির বসার গদিওয়ালা আসনও তৈরি করেন সেই শিল্পীরাই।
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা