প্রচ্ছদ নিবন্ধ

রং কই রং দাও? গুরুর আদেশ! রং তুলি নিয়ে বসলেন নন্দলাল। তারপর..? 
সুশোভন অধিকারী, প্রাক্তন কিউরেটর নন্দন, কলাভবন বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন 

শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক সত্ত্বা ছিল। তিনি যেমন কড়া শিক্ষক, তেমনই ছিলেন ছাত্র অন্তঃপ্রাণ। শিল্পের জন্যই তিনি নিবেদিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক। বয়সের ব্যবধান মাত্র ১০ বছর। কিন্তু, লেখায় রবীন্দ্রনাথ, আঁকায় অবন ঠাকুর, এ এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। তাদের সেতু হয়ে উঠেছিল শান্তিনিকেতন। অথচ কী অদ্ভুত সমাপতন। ৭ আগস্ট, ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর মৃত্যু দিবস, আর সেদিনই জন্ম মহান এই মনীষীর। তাইতো বিশ্বভারতীর এই শোকের দিনে জন্মদিন পালন হয় না অবন ঠাকুরের। কিন্তু কলাভবন এখনও মাস্টারমশাইয়ের গুরু অবন ঠাকুরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
কলাভবনের মাস্টারমশাই একজনই, আচার্য নন্দলাল বসু। এই নন্দলাল বসুই ছিলেন অবন ঠাকুরের প্রিয় ছাত্র। যাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ- অবনীন্দ্রনাথের মধ্যে দড়ি টানাটানি কম হয়নি। পরে অবশ্য বৃহৎ স্বার্থে অবন ঠাকুরই নন্দলালকে পাঠিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে, রবীন্দ্রনাথের আশ্রম বিদ্যালয়ে।‌ শুরু থেকেই শুরু করা যাক…। 
ছাত্রাবস্থায় নন্দলাল বুঝে গিয়েছিলেন পড়াশুনা তাঁর কম্ম নয়। ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। পরাধীন ভারতের তৎকালীন প্রবাসী পত্রিকায় অবন ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখেন। তখনই তাঁকে নিজের গুরু বলে মেনে নিয়েছিলেন। আঁকা শিখলে অবন ঠাকুরের কাছেই শিখব…। ১৯০৫ সাল, কলকাতার গর্ভর্মেন্ট আর্ট কলেজে অবন ঠাকুর তখন ভাইস প্রিন্সিপাল। নন্দলাল গেলেন তাঁর কাছে ছবি আঁকা শিখতে। আঁকার ধরণ দেখে নন্দলালকে অবন ঠাকুরের পছন্দ হয়। শিখলেন ওয়াশ পেন্টিং। গুরু চোখ দিয়ে দেখা সেই শুরু, খুলে গেল শিল্প চেতনার চোখ। আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাণীপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকতে নন্দলাল আঁকলেন “উমার তপস্যা”। গুরুকে দেখাতে গেলেন জোড়াসাঁকোয়। ছবি দেখে অবন ঠাকুর বললেন “খুব ভালো এঁকেছো কিন্তু রং কই? আরও রং দাও…” বাড়ি ফিরে পরদিন ভোরবেলা অনেক রঙের শিশি নিয়ে “উমার তপস্যা” রাঙাতে বসলেন। কোথায় রং দেবেন ভাবছেন। এমন সময় বাড়ির সামনে মোটর গাড়ির আওয়াজ। তারপরেই দরজায় খটখট শব্দ। ‌নন্দলাল, নন্দলাল ডাক। দরজা খুলতেই দেখলেন ভোরবেলায় স্বয়ং গুরু হাজির। “তুমি ওই ছবিতে রং দাও নি তো? একদম দিও না। এখানে তো উমাই তপস্বিনী, তার গায়ে রং থাকবে কেন। ওই কথা বলার পর, দুশ্চিন্তায় আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। রং দিলেই ছবিটা নষ্ট হয়ে যেত…।” ফিরে গেলেন অবন ঠাকুর। কিন্তু গুরুর আদেশ, রং তো দিতেই হবে। একটুখানি সবুজ রং গুলে উমার আঙুলে পরিয়ে দিলেন ঘাসের আংটি। অর্থাৎ গুরুর আদেশ রক্ষা করা হলো। এমন ছিল গুরু- শিষ্যের অমর সম্পর্ক। 
রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ এই দুই ঠাকুরের সত্ত্বায় পেয়েছিলেন নন্দলাল। ১৯২৩ সালে পাকাপাকিভাবে শান্তিনিকেতনে এসে কলাভবনের
অধ্যক্ষ পদে বসলেন। রবীন্দ্রনাথকে পেয়ে কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে মাটিতে পা দিলেন নন্দলাল। রবীন্দ্রনাথের চোখ দিয়ে দেখলেন বীরভূমের রুক্ষ মাটির প্রকৃতি…। ছাত্র কেমন শিক্ষাদান করছে, তা দেখতে সে বছরই অবন ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এলেন। আম্রকুঞ্জে ঘটা করে তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। বলেছিলেন আমার পর তুমিই বিশ্বভারতীর দায়িত্ব নিও। কাকার সে কথা ভাইপো ফেলতে পারেননি। কবিগুরুর মৃত্যুর পর বিশ্বভারতীর আচার্য হয়ে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলে ছিলেন অবন ঠাকুর। তাঁকে শিক্ষক হিসেবে যারা কাছে পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ সত্যজিৎ রায়, দিনকর কৌশিক, কে. জি. সুব্রহ্মণিয়ম, জয়া আপ্পাস্বামী প্রমূখ। প্রকৃতই জহুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই তো, অবন ঠাকুরের কাছে অনেক মান-অভিমান করে চিঠি লিখেও নন্দলালকে শান্তিনিকেতনে আনতে পেরেছিলেন। ‌ভাগ্যিস এনেছিলেন। আজকের কলাভবন, তারই ফসল…। 
অনুলিখন ইন্দ্রজিৎ রায়
 গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় : সত্যেন্দ্র পাত্র
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

হঠকারী সিদ্ধান্ত ও দাম্ভিক আচরণে শত্রু সংখ্যা বাড়বে। কাজকর্মে শুভ। অর্থাগম যোগ আছে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৪ টাকা১১১.৫৮ টাকা
ইউরো৯১.১৩ টাকা৯৪.৩৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা