সম্পাদকীয়

শূন্য কলসি বাজে বেশি

ভারতীয় সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃত। মুশকিল হল, সেই অধিকার বলে কোনও নাগরিক শাসকের বিরুদ্ধে মুখ খুললে অনেকসময় শাস্তিস্বরূপ তাকে জেলের ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার। নিদেনপক্ষে হেনস্তা নিশ্চিত। কিন্তু ক্রমাগত অসত্য দাবি বা ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গায়ে আঁচড় পড়ে না। দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাঁকে কখনও অনুশোচনা করতেও দেখা যায় না। বরং এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্বিকার থাকার নজিরও রয়েছে। দশ বছর আগে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মোদির সদম্ভ ঘোষণা ছিল, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। সহজ কথায় বাংলা করলে দাঁড়ায়, নিজে দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতেও দেব না। মনমোহন জমানার শেষের দিকে ওঠা একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদির এই হুঙ্কার তখন ‘সুপারহিট’ করেছিল। দেশবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল, সরকারি অর্থের সীমাহীন নয়ছয় বন্ধ হলে আখেরে লাভ হবে আম জনতার। তারপরের দশ বছরে প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই হুঙ্কার বারবার শোনা গিয়েছে। এমনকী শেষ লোকসভা ভোটের প্রচারেও বিরোধী শাসিত রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এই দুর্নীতির  অভিযোগে বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে জেলে পুরেছে মোদি সরকার। এঁদের মধ্যে কোনও কোনও মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন। কিন্তু ঘটনা হল, এই সময়ের মধ্যেই দুর্নীতি ও দ্বিচারিতার সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধেই। দেখা গিয়েছে, বিরোধীদের ঘর ভেঙে যাঁদের দলে নিয়েছে পদ্মশিবির, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। দল বদলে এমন অনেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করেছে সিবিআই বা ইডি। নিজেদের ঘরের মধ্যেই এমন কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কার বন্ধ নেই!
মোদি জমানায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাঁর সরকারেরই আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন বা সিভিসি একটি রিপোর্ট পেশ করে সরকারের কাছে। তাতে জানানো হয়, ২০২২ সালে সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২০৩টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৬ হাজার ৬৪৩টি অভিযোগ উঠেছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিরুদ্ধে। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে রেল ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সে বছর রেলে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি, ব্যাঙ্কে ৮ হাজারের বেশি। তারপর গত দু’বছরে অভিযোগের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এই বিপুল অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক কিছু কিছু তদন্ত করেছে। কিন্তু সব কটি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে কি না, কোনও ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তার পরিষ্কার ছবি নেই। আসলে মোদি জমানায় একাধিক দপ্তরেই হয়েছে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি। তবু ‘দুর্নীতি মুক্ত’ ভারত গঠনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জনমানসে ইমেজ গড়তে।
সরকারের ঘরেই দুর্নীতির এমন বহর দেখেও মোদি প্রশাসন যে কার্যত কিছুই করেনি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ রেল মন্ত্রক। সম্প্রতি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ) দ্বিতীয় মোদি সরকারের (২০১৯-২০২৪ মার্চ) পাঁচ বছরে রেলে দুর্নীতির যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে ‘রেল-মদত’ প্ল্যাটফর্মে। এই ‘রেল-মদত’ ছাড়াও রেলে সরকারি নম্বরে ফোন করে, ই-মেল করে কিংবা ডাকযোগেও অভিযোগ জমা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে নথিভুক্ত অভিযোগের আসল সংখ্যা কত তা জানায়নি রেল মন্ত্রক। ঠিক যেমন কতগুলি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে তাও জানা যায়নি। বছর তিনেক আগে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেছিলেন, প্রতি তিনদিনে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই হিসেব মানলে পাঁচ বছরে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৬০০-র কাছাকাছি। ৩০ হাজারের বেশি দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, দুর্নীতি মোকাবিলায় সরকারের সক্রিয়তার বহর! বুঝিয়ে দেয় মোদির হুঙ্কার কতটা অন্তঃসারশূন্য। আসলে ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি।
9d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা