শরীর ও স্বাস্থ্য

পলিগ্রাফ ও নারকো টেস্টের খুঁটিনাটি

কে করল অপরাধ? দোষীকে খুঁজতে তদন্তকারী অফিসাররা প্রায়ই করেন এই দুই পরীক্ষা। কেমন করে হয় এই পরীক্ষাগুলি? বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়রঞ্জন রাম।

সাল ১৯২১। ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিস অফিসার তথা মনোবিদ জন লারসান পড়েছেন মহা ফাঁপরে। একটি কঠিন কেস হাতে এসেছে। এদিকে অভিযুক্তরা সত্যি বলছেন কি না তা বোঝার উপায় নেই। তবে সন্দেহ আছে ষোলো আনা। তখন অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের রক্তচাপের পরিবর্তন মাপার জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে ওটিই প্রথম পলিগ্রাফ টেস্ট। এরপর বিশ্বের বহু তাবড় কেসে এই ধরনের টেস্ট ব্যবহৃত হয়েছে। 
সত্য নাকি মিথ্যা? হাতে পাওয়া তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা কতখানি? মূলত এসব প্রশ্নের উত্তর জানতেই পলিগ্রাফ ও নারকো টেস্টের শরণ নিতে হয় তদন্তকারী অফিসারদের।

পলিগ্রাফ কী
মূলত লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা। মিথ্যে বলার সময় মানুষের অভ্যন্তরীণ শারীরিক নানা অবস্থার পরিবর্তন হয়। সেগুলি মেপে, বুঝে জানা যায় অভিযুক্ত সত্যি বলছেন কি না। ‘পলি’ কথার অর্থ ‘একাধিক’। অর্থাৎ এই পরীক্ষায় একাধিক গ্রাফ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত মানুষ মিথ্যে বললে তার শরীরে রক্তচাপের পরিবর্তন হয়। কারও বুক ধড়ফড় করে, কারও বা ঘাম হয়। কারও শারীরিক নড়াচড়া একটু বেশি হয়। একটা সময় পলিগ্রাফ পরীক্ষা শুধুই রক্তচাপ মাপার গ্রাফের উপর ভিত্তি করে শুরু হলেও বর্তমানে মূলত চারটি গ্রাফ খতিয়ে দেখা হয়। ১) হার্ট রেট, ২) ব্লাড প্রেশার রেট, ৩) রেসপিরেশন রেট, ৪) গ্যালভ্যানিক স্কিন রেসপন্স (ভয়ের সময় ঘাম হলে তা ধরা পড়বে)। এই চারটি গ্রাফ ধরা পড়ে বায়োফিড মেশিনের দ্বারা। প্রতিটি গ্রাফ দেখার জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ড ও যন্ত্র আছে। আজকাল আরও উন্নত মানের পলিগ্রাফে মানবমস্তিষ্কের তরঙ্গদেরও স্ক্যান করা হয়। মানুষের ব্রেনে আলফা, বিটা, গামা, থিটা এই চার রকমের তরঙ্গ রয়েছে। কেউ মিথ্যে বললে বিটা তরঙ্গ অধিক সক্রিয় হয়ে যায়। এই চার-পাঁচটি গ্রাফের তার একটি মেশিনের মাধ্যমে কম্পিউটারে যোগ করা হয় ও সব গ্রাফ কম্পিউটার স্ক্রিনে ধরা পড়ে। 

পলিগ্রাফ করার নিয়ম
প্রাথমিকভাবে যাঁর পলিগ্রাফ করা হবে, তাঁকে খুব সাধারণ গোছের কিছু প্রশ্ন করা হয়। যেমন: আপনার নাম কী, আপনার বাড়ি কোথায়, আপনার বাবার নাম কী ইত্যাদি। এসব তথ্য আগে থেকেই তদন্তকারী অফিসারদের কাছে থাকে। 
তাঁরা এসব প্রশ্নের উত্তরের সময় দেখে রাখেন স্বাভাবিক সময়ে সত্য বলার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের শারীরিক গ্রাফের ওঠাপড়া ও আঙ্কিক মান কী থাকছে। মূলত এই ‘নিউমারিক্যাল কোয়ান্টিফিকেশন’-এর উপর ভিত্তি করে অভিযুক্তের দেওয়া উত্তরগুলি যাচাই করা হয়। একই প্রশ্নে অন্তত তিনবার করে করা হয়। 

এই টেস্ট কতটা নিখুঁত
তবে এই টেস্ট নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরীক্ষা ফলপ্রসূ হলেও অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, সাইকোপ্যাথ, স্বভাববশে যে অপরাধী কিংবা সচরাচর মাথা ঠান্ডা রেখে মিথ্যে বলাকে অভ্যেসে পরিণত করে নিয়েছেন— এমন মানুষজনের ক্ষেত্রে এই টেস্টের রিপোর্ট সবসময় নির্ভুল আসে না। 
পলিগ্রাফ হবে এমন আগাম জানিয়ে দেওয়া হলে অভিযুক্ত যদি অ্যাংজাইটি কমানোর ওষুধ খেয়ে নেন বা এই শারীরিক পরিবর্তন প্রতিরোধের জন্য যেসব ওষুধ আছে, সেগুলি সেবন করা হয়, তাহলে পলিগ্রাফ টেস্ট নির্ভুল হয় না। আবার অভিযুক্তকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করার পর পলিগ্রাফে বসালে সেই রিপোর্টও ঠিক আসবে না। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই টেস্ট মূলত নির্ভুল। এই টেস্ট কতটা নির্ভুল, তা নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব থাকায় আদালতের কাছে এর গুরুত্ব খুব একটা নেই। এটি শুধুই তদন্তের গতিপ্রকৃতি এগতে পুলিস বা তদন্তকারী সংস্থা ব্যবহার করে।

নারকো কী?
নারকো টেস্টও অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি পরীক্ষা। অভিযুক্ত মিথ্যে বলছে কি না তা দেখতেই এই পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে যাঁর পরীক্ষা হচ্ছে, তাঁর শিরার ভিতর (ইন্ট্রাভেনাস) স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে বার্বিচুরেট গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এতে তাঁর মানসিক নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় কৌশল নষ্ট হয়ে যায়। এই ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশনের ফলে তাঁর আচ্ছন্নভাব আসে। অনেক ক্ষেত্রে কোনও আঘাত বা শক থেকে কিংবা মানসিক সমস্যা থেকে রোগী মনোরোগ চিকিৎসকের সামনেও মুখ খুলছেন না। এমন হলে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় বিধি মেনে রোগীর সম্মতিতে তাঁর মনের কথা ও সমস্যা জানতে নারকো টেস্ট করতে পারেন। 

নারকো কতটা নিখুঁত
নারকো টেস্টও পরীক্ষার ঊর্ধ্বে নয়। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম রয়েছে নারকো টেস্ট যাঁর উপর হচ্ছে, তাঁর অনুমতি প্রয়োজন। তবে এই পদ্ধতি খুবই প্রাচীন ও অতীত নানা অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, এটি আখেরে খুব একটা ফলদায়ক নয়। একজন ব্যক্তি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেই তাঁর সব মনের কথা খুলে বলে দেবেন, এমনটা সচরাচর হয় না। আবার পোড় খাওয়া অপরাধী শক্ত মনের হলে নারকো টেস্ট সফল নাও হতে পারে। 
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা