শরীর ও স্বাস্থ্য

লিভার ভালো রাখতে খাবেন কী?
মীনাক্ষী মজুমদার

শরীরে লিভার হল অন্যতম বৃহৎ অঙ্গ। শরীরের মোট ওজনের প্রায় ৩ শতাংশ জায়গা দখল করে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে লিভার ঠিক কতটা জরুরি অঙ্গ। এই যে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট জাতীয় খাদ্য আমরা খাই, সেই সব খাদ্যের বিপাক ক্রিয়া হয় লিভারে। অতএব লিভারে কোনও অসুখ দানা বাঁধলে গোটা শরীরটাই কাবু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। লিভার ভালো রাখার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় কাজ হল প্রতিদিন সুষম খাদ্য খাওয়া। সুষম খাদ্য বলতে যে খাদ্যে, কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও ফ্যাট সঠিক মাত্রায় রয়েছে, সেই ধরনের খাদ্যের কথা বলা হচ্ছে। 
মনে রাখতে হবে, এই খাদ্যের মধ্যেই ভিটামিন ও মিনারেলস থাকা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া খাবার খাওয়ার সময়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে খাদ্যগ্রহণ করা দরকার। দুটি খাবার খাওয়ার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি না হওয়াই উচিত। এছাড়া সঠিক সময়ে খেতে হবে স্ন্যাকস। 

তিনবেলার প্রধান খাদ্য ও টিফিন
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনারে ভারী খাবার খেতেই হবে। তবে প্রতিবারেই খাবেন একটু পেটে জায়গা রেখে বা অল্প খিদে রেখে। তবে এই ধরনের মিলগুলি ছাড়াও প্রাতরাশের আগে সকালে একবার চা বিস্কুট অবশ্যই খাওয়া যায়। আবার ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের মাঝে একটা ফল খান। বিকেলে খান হালকা টিফিন, সঙ্গে চা বিস্কুট। 
এরপর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই ডিনার সেরে নিন। কারণ রাত হলে আমাদের বিপাকক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে। তাই যত দেরি করে খাবেন ততই বিপাকক্রিয়া মন্থর হবে ও লিভারের উপর চাপ পড়বে।

ফল ও শাকসব্জি গুরুত্বপূর্ণ
• লিভার ভালো রাখতে কেমন ডায়েট হওয়া উচিত তা বোঝানোর সহজ উপায় হল— একটা প্লেট কল্পনা করুন, যে প্লেটের অর্ধেক পূর্ণ হয়ে থাকবে শাকসব্জি দিয়ে। মনে রাখতে হবে—ফল, শাকসব্জি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলি আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতাকে সচল রাখে। এরপর বাকি অংশের তিন ভাগের একভাগ থাকবে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য যেমন ভাত বা রুটি। আর একভাগ থাকবে প্রোটিন অর্থাত্‍ মাছ, চিকেন বা ডিম দ্বারা। রান্নার সময় খানিকটা ফ্যাট তো শরীরে ঢোকেই। তবে তার পরেও অনেকখানি টক দই খাওয়া উচিত। মিষ্ট দই খাওয়া যাবে না কোনওমতেই। কারণ ওই দইয়ে ডালডা, চিনি, বাতাসা মেশানো থাকে। 
• এড়িয়ে চলা উচিত যে কোনও ধরনের জাঙ্কফুড, যে কোনও মশলাদার, ফ্যাটযুক্ত খাদ্য। অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানীয় যেমন এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করা ভালো নয়। লিভারের অসুখ এড়াতে চাইলে মাত্রাতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য খাওয়া যাবে না। খেতে হবে শস্যজাতীয় খাদ্য। যেমন রুটি, সব্জি, ডালিয়া, ওটস, মুষলির কথা বলা যায়। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে ডিম খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। 

খাবার খাওয়ার রুটিন করুন 
• ব্রেকফাস্টের ঘণ্টা দুই আড়াই বাদে একটা বা দুটো ফল খাওয়া যেতে পারে। যেমন পেঁপে, তরমুজ, আপেল, পেয়ারা কলা সবই খাওয়া যায়। আলাদা কোনও অসুখ না থাকলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যে কোনও মরশুমি ফল খেতে পারেন। এরপর দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ লাঞ্চ খান। লাঞ্চে অবশ্যই রাখুন স্যালাড। 
সন্ধ্যা ছটা-সাড়ে ছটা নাগাট চিকেন স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। এই স্যুপে থাকুক সামান্য টস করে রাখা ব্রকোলি, বিনস, গাজর ইত্যাদি। 
এছাড়া কাবলি ছোলার ঘুগনি, অঙ্কুরিত মুগডালও খেতে পারেন শসা, পিঁয়াজ, টম্যাটোকুচি দিয়ে। গরমকালে ইচ্ছে হলে লস্যিও খেতে পারেন। স্মুদিও খাওয়া যায় নিশ্চিন্তে।
আর রাতে ডিনারে রুটি বা ভাতের সঙ্গে ডাল, সব্জি, মাছ খান নিশ্চিন্তে। নিরামিষাশী হলে সয়াবিন বা পনির খাওয়া যায়। 
• পর্যাপ্ত মাত্রায় জল পান জরুরি। আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান করতেই হবে। আমাদের দেহ জলপ্রধান। ফলে জলগ্রহণের মাত্রা সঠিকভাবে না থাকলে সব অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

আপ্ত বাক্য
যে কোনও ভাজা খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত। খেতে হবে খাদ্যতন্তুপূর্ণ বা ফাইবার রিচ খাবার। এই হল শরীর সুস্থ রাখার মূল মন্ত্র।

জন্ডিসের জন্য আলাদা খাবার
• জন্ডিস হলে আগে যেমন জল ফুটিয়ে খেতে বলা হতো এখনকার দিনে তেমনটি বলা হয় না। বেশিরভাগ বাড়িতেই একটা বেসিক ওয়াটার পিউরিফায়ার আছে। ফলে জল থেকে সেই আগের মতো সংক্রমণ আর ছড়ায় না। খুব প্রান্তিক জায়গায় বাস করলে ও শুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকলে জল ফুটিয়ে পান করতে পারেন।
• আগেকার দিনে যেমন জন্ডিস হলে শুধু সেদ্ধ খেতে বলা হতো এখন আর তেমন বলা হয় না। এখন বাড়ির হালকা খাবার খেতে বলা হয়। 
তাই বলে জন্ডিসের রোগী জমিয়ে আলুভাজা-পটলভাজা খেতে শুরু করে দেবেন এমন নয়। তবে স্বাভাবিক অল্প তেলে রাঁধা হালকা খাবার খেতে হবে। আর অতিঅবশ্যই সঠিক সময় ধরে রুটিন বেঁধে খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ফ্যাটি লিভার
বহু রোগীই এখন ভোগেন ফ্যাটি লিভারের অসুখে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নানাভাবে হতে পারে। স্থূলত্ব থেকে ফ্যাটি লিভার হয়। এছাড়া যাঁদের দুটি খাবার খাওয়ার মধ্যে বিস্তর সময়ের ব্যবধান তৈরি হয় তাঁদের বিএমআর লো হয়ে যায়। তা থেকেও হতে পারে ফ্যাটি লিভার। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান থেকে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারও দেখা যায় অনেকের। আবার নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার দেখা যায় কারও কারও মধ্যে। বিশেষত যাঁদের ডায়াবেটিস থাকে তাঁদের এমন জটিলতা বেশি দেখা যেতে পারে। 
আসলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ঘনঘন গ্লুকোজের তারতম্য ঘটে। ফলে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হওয়ার আশঙ্কাও থাকে বারংবার। সেক্ষেত্রে লিভারে জমে থাকা গ্লাইকোজেন পরিণত হয় গ্লুকোজে। এভাবে বারংবার লিভারের উপর অহেতুক চাপ পড়তে থাকে। একসময় দেখা দেয় ফ্যাটি লিভার। সব মিলিয়ে খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন জীবনের নানা কুঅভ্যেস, অলস জীবনযাপন এসবই দায়ী থাকে ফ্যাটি লিভার হওয়ার পিছনে।
অতএব প্রতিদিন নিয়ম মেনে চললে অনেকাংশেই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ সারানো সম্ভব। অতি দ্রুতই তা করা যায়। আর তার জন্য যেতে হবে সঠিক পুষ্টিবিদের কাছে।
• দেখা গিয়েছে প্রতিদিন এক্সারসাইজ করলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা কমে অনেকাংশে। 
• এছাড়া প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। 
• প্রয়োজন স্ট্রেস ফ্রি থাকা। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা করলে রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামা করে, রক্তচাপের মাত্রারও ওঠানামা করে।
• স্ট্রেস ফ্রি থাকতে তাই ধ্যান করুন, সুন্দর গান শুনুন। বাংলা সোপ অপেরার বদলে প্রকৃতি সম্বন্ধীয় চ্যানেল দেখুন। তাতে মনে স্ট্রেস পড়বে না। রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামাও কম করবে।

সিরোসিস অব লিভারের ডায়েট
জন্ডিসে যা খাবেন, লিভারে ফাইব্রোসিস হতে শুরু করলেও সেই একই খাবার। তবে এই পর্যায়ে ডায়েটের সঙ্গে চিকিত্সক বেশ কিছু ওষুধও খেতে বলেন।
লেখক: ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস কলকাতার চিফ ডায়েটিশিয়ান। 
অনুলিখন: সুপ্রিয় নায়েক
10d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা