শরীর ও স্বাস্থ্য

লিভারের  সুরক্ষায় হোমিওপ্যাথি
ডাঃ আশীষ শাসমল

লিভার হল শরীরের রান্নাঘর, এখানেই খাদ্যের বিপাকক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান সঞ্চয়, ওষুধ, মদ এবং বিপাকের সময় ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থগুলির বিষনাশ আর বিশেষ প্রোটিন ও রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানও তৈরি করে। লিভার যেহেতু নানারকমের কাজ করে তাই এর বিভিন্ন রোগের লক্ষণ নানারকম।

তবে লিভারের অসুখ— সর্বনাশ! শুয়ে পড়ুন এক্ষুনি বিছানায়, এইসব ভয় পাওয়ার থেকে দূরে থাকুন। আবার আমরা লিভারকে দেখতে পাই না কিন্তু টাক পড়া থেকে নাক দিয়ে জল পড়া সবকিছুতেই লিভারের ছাপ দেখার ঐতিহ্য আমাদের ঘিরে থাকে প্রতি মুহূর্তে।

কারণ যদি ঠিক করা যায়— তাহলে লিভারের অসুখ যত জটিলই হোক না কেন— হোমিওপ্যাথি ওষুধে ধীরে ধীরে ভালো হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে।

জন্ডিস : কোনও কারণে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় বেড়ে গেলে তাকে জন্ডিস বলে।

লক্ষণ : বমিভাব, খিদে কম, হালকা জ্বর, রোগী দুর্বল হয়ে যায়। চোখ ও ইউরিন হলুদ এবং হলুদভাব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, বাড়াবাড়ি হলে পেটে জলও জমতে পারে। মনে রাখতে হবে জন্ডিস কোনও রোগ নয় রোগের লক্ষণমাত্র।

কেন হয় : রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হল হেপাটাইটিস অর্থাৎ লিভারের প্রদাহ পিত্তনালীর সমস্যা, গিলবার্টস সিনড্রোম, ডুবিন জনসন সিনড্রোম ইত্যাদি। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া, হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

চিকিৎসা : হোমিওপ্যাথিতে আছে খুবই কার্যকরী ওষুধ— চেলিডোনিয়াম, কালমেঘ, লাইকোপোডিয়াম, চায়না, মাইরিকা, চিত্তনানথাল, ন্যাট্রাম সালফ। তবে চেলিডোনিয়াম ওষুধটি সাধারণভাবে ব্যবহার করতে পারেন। সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রে লুপুলাস খুবই কার্যকরী।

হেপাটাইটিস : এর অর্থ হল লিভারে প্রদাহ। এটি দুই ধরনের— ইনফেকটিভ বা সংক্রামক হেপাটাইটিস এবং অটোইমিউন হেপাটাইটিস।
ইনফেকটিভ হেপাটাইটিস : এই সমস্যারও দুটি ভাগ আছে। জলবাহিত ও রক্তবাহিত। জলবাহিত হেপাটাইটিস হল হেপাটাইটিস এ এবং ই। রক্তবাহিত হেপাটাইটিস হল হেপাটাইটিস বি এবং সি। এদের মধ্যে এ এবং ই খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়, তবে বি এবং সি বেশি ভোগায়।

কেন হয়?
হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাল জনিত কারণে হয় মূলত অপরিশোধিত জল, বাইরের জল, শরবত, কাটা ফল, স্যালাড, রান্না না করা খাবারে এই ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
হেপাটাইটিস বি এবং সি এটি রক্তবাহিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ফ্লুইড থেকেও আসতে পারে। তাই যাদের ঘনঘন রক্ত নিতে হয় যেমন থ্যালাসেমিয়া রোগীর, এমনকী ডাক্তার এবং নার্সরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

লক্ষণ : দুর্বলতা, খিদে না পাওয়া, বমি বমি ভাব, ধীরে ধীরে শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। অনেকসময় রোগী উপসর্গগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যান। ফলে পরে স্প্লিন বড় হওয়ায় লিভার সিরোসিস, পেটে জল জমা ইত্যাদি হতে পারে।

চিকিৎসা : হেপাটাইটিস-এর চিকিৎসা আছে হোমিওপ্যাথিতে। চেলিডোনিয়াম, লাইকোপোডিয়াম, সালফার, সিফিলিয়াম, নাক্স ভম, লেপ঩টেন্ড্রা, হাইড্রাসট্রিস ইত্যাদি খুব ভালো কাজ দেয়।

ফ্যাটি লিভার : সোজা কথায় লিভারের ভেতরে ফ্যাট জমাকেই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়। এই রোগটি দু’ধরনের হয়— অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়। কিন্তু বর্তমানে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের তুলনায় নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বাড়ছে।

কেন বাড়ছে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার?
আমাদের জীবনযাত্রা এক্ষেত্রে মূল কারণ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি, কিন্তু কোনও শারীরিক পরিশ্রম নেই। আর সঙ্গে ফাস্টফুড খাই। সঙ্গে রয়েছে মানসিক দুশ্চিন্তা, সব বিষয়গুলি একত্রে তৈরি করছে সমস্যা।

লক্ষণ : সাধারণত কোনও উপসর্গ থাকে না। তবে যখন লক্ষণ আসে তখন রোগটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সারাদিন ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি।
চিকিৎসা : লক্ষণ অনুযায়ী নাক্স ভম, ক্যালকেরিয়া কার্ব ভ্যানাডিয়াম, ন্যাট্রাম সালফ ইত্যাদি ওষুধ খুব ভালো কাজ দেয়। তবে ওষুধের সঙ্গে জীবনযাত্রার পরিবর্তন খুবই জরুরি।

 ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন  মদ্যপান করা যাবে না  নিয়মিত ব্যায়াম করুন  কমাতে হবে ভুঁড়ি  সুগার, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

লিভার সিরোসিস
এই রোগে লিভারের কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লিভারে স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।

কেন হয়?
শরীরে অতিরিক্ত ওজন এবং লিভারে ফ্যাট জমলে, অতিরিক্ত মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থেকে সিরোসিস হতে পারে।

লক্ষণ : জন্ডিস, পা ফুলে যাওয়া, কালো পায়খানা, রক্তবমি ইত্যাদি। আসলে কোনও ব্যক্তি যদি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। হঠাৎ রক্তে লিভার এনজাইম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া এবং ইউএসজি করতে গিয়ে ধরা পড়ে সিরোসিস।

চিকিৎসা : হোমিওপ্যাথিতে খুবই ভালো চিকিৎসা আছে। কিন্তু এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি; আর্স অ্যাল্‌ব, হাইড্রাসটিস, কার্ডুয়াস, নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফার, লাইকো ইত্যাদি ভালো কাজ দেয়।

লিভার অ্যাবসেস : এর মানে হল লিভারের মধ্যে কোনও জায়গাতে পাস জমে যায়। কারণ— লিভারের ইনজুরি বা পেটের মধ্যে কোনও ইনফেকশন থাকলে। Entamoeba histolytica থেকেও হয়।

চিকিৎসা : স্ট্যাকাইলোক্সিন, মার্কসল, হিপার সালফ ইত্যাদি ওষুধ ভালো কাজ দেয়।

লিভার ক্যান্সার : নানা কারণে লিভারের কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে, তা থেকে টিউমারের জন্ম হয়। এর মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই লিভার ক্যান্সার বলে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে লিভারে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে তাকে মেটাস্ট্যাটিভ ক্যান্সার বলে, লিভার ক্যান্সারের মধ্যে হেপাটো সুলিনার কার্সিনোনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ : কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমা  বমি  খিদে কমা  শারীরিক দুর্বলতা  পেট ফুলে গিয়ে ব্যথা  জন্ডিস।

চিকিৎসা : হাইড্রাসটিস, ক্লোস্টিরিনাম, ফসফরাস, আর্সেনিক ইত্যাদি ওষুধ লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে রোগীদেরকে ভালোভাবে রাখা যায়।

লিভার ভালো রাখতে কী করবেন?
 অযথা লিভার নিয়ে প্যানিক করবেন না। আর সব অসুখের সঙ্গে লিভারকে গুলিয়ে ফেলবেন না।  মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।  ধূমপান বর্জন করুন।  ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল, ঘি, মাখন এড়িয়ে চলুন।  অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।  নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।  নিজে কোনও ওষুধ টপাটপ খাবেন না। 
সবশেষে বলি, লিভারের যে কোনও অসুখে হোমিওপ্যাথি ওষুধের ভাণ্ডার বিশাল। কিন্তু ওষুধ খেতে হবে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ অনুযায়ী। কারণ তিনি রোগীর রোগ লক্ষণ ও ধাত ইত্যাদি বিচার করে ওষুধ ও তার সঠিক মাত্রা নির্বাচন করেন।
লেখক : অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পিসিএম হোমিওপ্যাথি কলেজ ও হাসপাতাল
10d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা