টেনশনে মিউজিক থেরাপি অনবদ্য, নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ইমন চক্রবর্তী।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমাদের মনখারাপ হয়, সেই থেকে একটা চাপা স্ট্রেসও তৈরি হয়। কিন্তু সেটা কেন হচ্ছে, সেই কারণটাই আমরা ধরতে পারি না। আর তখনই গন্ডগোল বাধে। ফলে টেনশন কাটাতে গেলে প্রথম যেটা করা দরকার, তা হল নিজের চিন্তাভাবনাগুলোকে মনিটর করা। তার জন্য নিজের সঙ্গে নিজেকে অনেকটা সময় কাটাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য চিন্তার সমাধান বাইরে থেকেও আসে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে এই মনিটরিং বিষয়ে একটু বলি।
আমার যেটা হয়, প্রচণ্ড কাজের চাপ চলছে হয়তো, টানা সপ্তাহের পর সপ্তাহ শো করছি, রিহার্সাল দিচ্ছি ইত্যাদি, তখন আমি হঠাৎ করে এই প্রেশার বা চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে একটা দিন অফ নিয়ে নিই। সেদিন শুধু আমার নিজের জন্য রাখি। নিজের সঙ্গে কথা বলি। চাপ নেওয়ার সহজ উপায়গুলো মনে মনে ভাবি। এইভাবেই দেখেছি দিনের শেষে মনটা অনেকটাই হালকা লাগে। এতে কাজের উদ্যম, উৎসাহ তো বটেই, এমনকী আউটপুটও দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এছাড়া, আমি গায়িকা। গানই আমার জীবন, গানই সাধনা। অতএব স্বাভাবিকভাবেই আমার কাছে মিউজিক স্ট্রেস কমানোর মন্ত্র। কিন্তু এই যে মিউজিক আমার জীবন, আমার সাধনা— এহেন আমিও কিন্তু চাপে পড়ে গান শুনতে ভালোবাসি না। ফলে যে কারও ক্ষেত্রে এই না চাওয়াটা সহজাত প্রবৃত্তি। অর্থাৎ যখন চাপে থাকবেন, মানসিক স্ট্রেস হবে তখন গান শুনতে একটুও ইচ্ছে করবে না। কিন্তু তাও জোর করে গান শুনতে হবে। একবার যদি গান চালিয়ে দেওয়া যায় তাহলেই দেখবেন পারিপার্শ্বিক আমূল বদলে যাবে। অর্থাৎ আপনি গানে এমন বুঁদ হয়ে যাবেন যে মন নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যাবে। টেনশনের কথা আপনি ভুলেই যাবেন। আর সেজন্যই টেনশনে মিউজিক থেরাপি অনবদ্য। গান বা মিউজিক শুধু মনকে শান্ত রাখে তা-ই নয়, মনকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
এছাড়া টেনশন এড়ানোর দ্বিতীয় উপায় এক্সারসাইজ। সেটা ফ্রি-হ্যান্ড হতে পারে, জুম্বা হতে পারে, যোগাসন হতে পারে— যাই হোক না কেন, এক্সারসাইজ টেনশন কমানোর অন্যতম সেরা উপায়। অনেকেই মনে করেন, যখন টেনশন হবে তখন একটু এক্সারসাইজ করে নিলেই বুঝি কেল্লাফতে। মোটেও তা নয়। টেনশন কম করতে, মন শান্ত রাখতে নিয়মমাফিক এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা যোগাসন বা অন্য কোনও এক্সারসাইজ অভ্যাস করতেই হবে। আর তার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ারও অভ্যাস রাখতে হবে। হেলদি ডায়েট শরীর ভালো রাখে। আর শরীর ও মন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। একটার ভালো-মন্দের উপর অন্যটাও নির্ভর করে। ফলে শরীর ভালো থাকলে মনও ভালো থাকবে।
আপনার মতো আমিও অহেতুক টেনশন করে ফেলি। কিছুই হয়তো হয়নি, অথচ হতে পারে এমনটা ভেবেই একটু টেনশন করে ফেললাম, এটা আমার স্বভাবগত ত্রুটি। তখন কী করা উচিত? আমি নিজে এই নিয়ে প্রচুর ভেবেছি, টেনশন এড়িয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। তখন আমি আমার টেনশনটা শেয়ার করার চেষ্টা করে দেখেছি তাতে লাভ হয়েছে। ভীষণ চাপের মুখে নিজের এই চাপ ও টেনশনের কথা অন্যকে জানালে এবং তার পরামর্শ নিলেও কিন্তু চাপ অনেকটাই কমানো যায়। আমার ক্ষেত্রে যেমন, যে কোনও সমস্যা নিয়ে স্বামী নীলাঞ্জনের (ঘোষ) সঙ্গে আলোচনা করি। ভীষণ টেনশন হলে ওকে সে কথা জানাই। ও শোনে, পরামর্শ দেয়, এবং সেই পরামর্শমতো চলে আমি অনেকটাই টেনশন কাটিয়ে উঠতে পারি। একইভাবে সকলেরই জীবনে কোনও না কোনও ‘নীলাঞ্জন’ নিশ্চয়ই আছেন যাঁর সঙ্গে তিনি তাঁর টেনশন শেয়ার করতে পারেন। আমাদের সমাজেই একটা ধারণা আছে, নিজের সমস্যাগুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আমি বলব এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বরং সমস্যাটা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন। তবে কার সঙ্গে ভাগ করছেন সেটা একটু খুঁটিয়ে দেখা দরকার। এমন কাউকে নিজের সমস্যার কথা জানাতে যাবেন না, যিনি আবার আপনার টেনশনের পিঠে নিজেরও একটা টেনশনের গল্প শোনাবেন। তাতে কোনও লাভ হবে না। বরং এমন লোক খুঁজে নিন যাঁরা আপনার কথা শুনবেন এবং আপনার মতো করে তা বুঝে সমাধানের পথ বলতে পারবেন। দেখবেন ভালো থাকাটা অত্যন্ত সহজ।