বিশেষ নিবন্ধ

বড় ধাক্কা খেতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি
হিমাংশু সিংহ

হিসেব কিছুতেই মিলছে না প্রধানমন্ত্রীর। তৃতীয়বার শপথ নেওয়া ইস্তক কী দেশে, কী বিদেশে। যত মিলছে না, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টেনশন ও সঙ্কট। সেই কারণেই উৎসব মরশুম শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদির রাতের ঘুম উধাও। দশ বছর পর কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট। ২০১৪’র পর ২০২৪। এরই মধ্যে টানা প্রায় ছ’বছর রাষ্ট্রপতি শাসনের ক্লেদ। উপত্যকায় নির্বাচিত সরকার না থাকায় সুপ্রিম কোর্টের কড়া টিপ্পনী এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই অবশেষে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে তিন দফায় বিধানসভা ভোট। এই ঘটনাক্রম মোটেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে না, করতে পারে না। কোনও রাজনৈতিক সাফল্যকেও কোনওভাবেই সূচিত করে না। কারণ যা ঘটেছে তা মোদিজির সৌজন্যেই। আর যা হয়নি তার দায়ও নিশ্চিতভাবে তাঁর সরকারের। 
কয়েক হাজার কোটি খরচ হয়েছে রাজ্য ভাগ করতে এবং নেহরু আমলের বিতর্কিত ৩৭০ ধারা বাতিল করার নেশায়। রেকর্ড সংখ্যক সেনা নামানো তো হয়েছেই, সিংহভাগ আধাসেনাও মোতায়েন করা হয়েছে রেকর্ড সময়ের জন্য। এ যেন দেশের মধ্যেই আর এক যুদ্ধ। বিরোধী নেতানেত্রীদের কাউকে গ্রেপ্তার, কাউকে দু’বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দি করে রাখা হয়। রাজনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ রাখতে দীর্ঘসময় ইন্টারনেট বন্ধ, সঙ্গে বিচার ব্যবস্থাকে ঘুম পাড়াতে হাইকোর্টের দরজায় পর্যন্ত অঘোষিত প্রবেশ নিষেধ। উনিশ সালের ৫ আগস্টের পর কাশ্মীর ছিল এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। এমনকী শ্রীনগর বিমানবন্দরে নেমেও শহরে ঢোকার অনুমতি ছিল না ভিভিআইপিদের। মানবাধিকার, সংবিধান ও আইনের শাসনকে শিকেয় তুলে যে বিশাল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে তার নিট ফল কী? শেষে দেখা গেল, সন্ত্রাস তো কমেইনি, উল্টে রাজ্যের মর্যাদাটাও হারিয়ে গিয়েছে। 
তাহলে এত কাঠখড় পুড়িয়ে কী হল? আজ ভোটের মুখে এই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনি রাজ্যের মর্যাদা এবং বিতর্কিত ৩৭০ ধারাকে যেকোনও মূল্যে ফিরিয়ে আনাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেরও প্রধান ইস্যু। সঙ্গে সেনা দিয়ে দমনপীড়ন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দেওয়ার স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। মোদি এবং অমিত শাহ জুটির তার চেয়েও বড় ব্যথা পাহাড়ের প্রায় সবক’টি দলই ৩৭০ ফেরানোর পক্ষে। সঙ্গে উপত্যকার পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের লড়াই। কংগ্রেস ও ফারুক আবদুল্লা একজোট হয়ে লড়ায় বিজেপির বিপর্যয় এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। মেহবুবা মুফতির সঙ্গে বিজেপির সমঝোতাও বিশ বাঁও জলে। তাহলে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট থেকে গত পাঁচ বছরের এই ‘পলিটিক্যাল গ্যাম্বল’ও কি ‘অব কি বার ৪০০ পার’-এর মতোই আর একটা ফ্লপ শো? স্বভাবতই মোদিজির রাতে ঘুম নেই। নিদ্রা এলেও ভেঙে যাচ্ছে বারবার। অমিত শাহ গত শুক্রবার কাশ্মীরে ভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে পর্যটকদের জন্য বিশেষ হাব এবং ৫ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু উপত্যকার মানুষ জানেন, এসবই কথার কথা। জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ না-হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
উপত্যকার সাধারণ মানুষ একতরফা দমনপীড়ন থেকে সেনার বাড়াবাড়ি, সব মেনে নিয়েছিলেন সন্ত্রাসমুক্ত এক কাশ্মীরের জন্ম হবে বলে। সেই অলীক স্বপ্নের ঘোর থেকেই বুটের আওয়াজ, অধিকাংশ সরকারি দপ্তর বন্ধ থাকার দুর্ভোগ সহ্য করেছেন তাঁরা। মোদিজির আশ্বাসও ছিল তাই। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিলের রেশ একটু থিতিয়ে যেতেই জঙ্গিদের দাপাদাপি বেড়ে গিয়েছে ভূস্বর্গের আনাচে কানাচে। চলতি বছরে তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলওয়ামার স্মৃতি উস্কে দিয়ে গত ৮ জুলাই কাঠুয়ায় আক্রান্ত হয়েছে সেনা কনভয়। প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় সেনার পাঁচ বীর জওয়ান। শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে অন্তত এক ডজন বড় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আবার পর্যটকদের মনে আতঙ্ক ফিরছে। শুধু জম্মুতেই ১১ জওয়ান শহিদ হয়েছেন। একাধিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সিনিয়র কর্তারা, মায় কর্নেল পর্যন্ত। প্রত্যুত্তরে সরকার জঙ্গি নিকেশ অভিযান বাড়ালেও রাশ টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। বরং বাড়ছেই। কমছে না সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানিদের অনুপ্রবেশও। বলা বাহুল্য, উপত্যকায় নতুন ভোর নিয়ে আসার আড়ালে গত পাঁচ বছর ধরে এত হম্বিতম্বি আসলে প্রকাণ্ড অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই নয়। সবটাই নাটক?
শুধু কাশ্মীরই নয়, জাতীয় রাজনীতিতে আগামী এক মাসের মধ্যে আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে বিজেপির জন্য। মোদিজি নিশ্চিত জানেন, কাশ্মীরের সঙ্গে হরিয়ানার ভোটেও মোটেই সুবিধা হবে না। কৃষকরা ফুঁসছে। কোনওক্রমে দিল্লির সীমানায় 
তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে বলপূর্বক। ভিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়া কংগ্রেসের হয়ে ভোট ময়দানে নামায় ইন্ডিয়া জোট বেশ সুবিধাজনক অবস্থায়। উল্টোদিকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর হরিয়ানায় বিজেপি শিবিরে নজিরবিহীন অসন্তোষ ও বিদ্রোহের ছবি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও কাশ্মীরে গেরুয়া শক্তির যে সামান্য লাভটুকুও হচ্ছে না, সেই দেওয়াল লিখন বেশ পড়তে পারছেন অমিত শাহরা, হরিয়ানার ভরাডুবির গন্ধও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে চণ্ডীগড়ের বাতাসে। বছর শেষে আর এক বড় রাজ্য মহারাষ্ট্রেও ঘোলা জলে খুব একটা মাছ যে উঠবে না তা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়। মহারাষ্ট্র দখলে গত কয়েক বছর ধরেই ঘুঁটি সাজিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি বিজেপির। শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসকে সুপরিকল্পিতভাবে ভেঙেও মহারাষ্ট্রের আসন্ন বিধানসভা ভোটে দাঁত ফোটাতে না পারলে তা মোদিজির পক্ষে মোটেই খুব স্বস্তিদায়ক হবে না। ঝাড়খণ্ডে চম্পই সোরেন জেএমএম ভেঙে বিজেপিতে যোগ দিলেও কী হবে, তা ভবিষ্যতের গর্ভে। চম্পই সোরেনের পক্ষে একা শিবু সোরেন ও তাঁর উত্তরাধিকারী পুত্র হেমন্তের সঙ্গে টক্কর দিয়ে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানো এখনও দুঃস্বপ্নই।
সেইদিক থেকে বলা যায়, অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচনের ফল ঘোষণার মাত্র চার মাসের মধ্যেই মোদিজির নেতৃত্বে গেরুয়া শিবির আর এক বিরাট অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি। ‘অব কি বার ৪০০ পার’ স্লোগান চূড়ান্ত ফ্লপ করলেও এবং কোনওরকমে কান ঘেঁষে একটা জোড়াতালি সরকার গড়া হলেও এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি মেলেনি। গেরুয়া শিবির ও সঙ্ঘ পরিবারের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব, লোকসভায় দল ভাঙিয়ে, রাজ্যে রাজ্যে ‘অপারেশন লোটাস’ চালিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ঘাটতি মেটানো। সেই প্রচেষ্টা যে হয়নি তা বলা যাবে না। কিন্তু লোকসভায় ৩২ আসনের ঘাটতি থেকেই গিয়েছে, সাফল্য মেলেনি। দুই যুযুধান শরিক নীতীশ ও চন্দ্রবাবুর আব্দার সামলাতেই সরকারের রাত কাবার। তার উপর আসন্ন হরিয়ানা ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভোটে সাফল্যের আশা দূর অস্ত! মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড থেকেও ইতিবাচক কোনও খবর মিলছে না। স্বভাবতই গেরুয়া শিবিরের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া হচ্ছে।
তৃতীয়বার ভোটে জিতে মাত্র চার মাসে ফ্রান্স, রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, ব্রুনেই, প্রায় আধ ডজন দেশে ভ্রমণ করেছেন ‘শান্তির দূত’ সাজতে। বিশ্বগুরুর এই সফরের খরচ? মোটেই কম নয়। কিন্তু পড়শি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ও ভারত বিরোধী জিগির তাঁর সেই প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এবং টালমাটাল পাকিস্তান দিল্লির বিদেশনীতির ভয়াবহ বিপর্যয়কেই সূচিত করে। সেইসঙ্গে বিপদও। পড়শি সবক’টি দেশ যুযুধান শত্রুতে পরিণত হলে এবং ইসলামিক মৌলবাদই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দেশ চালনার প্রধান মন্ত্রে পরিণত হলে তা মোদিজির রক্তচাপ বাড়াতে বাধ্য। 
এই কারণেই মোদিজির চোখে ঘুম নেই। কারণ সব প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়ে যাবে আগামী ৮ অক্টোবর দু’রাজ্যের ভোটের ফল বেরলেই। কথা ছিল মহারাষ্ট্রেও একইসঙ্গে নির্বাচনের সূচি ঘোষণা হবে। বিজেপি মোটেই স্বস্তিতে নেই বলেই তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরের দৌড়ে রয়েছে দিল্লির ভোট। মণীশ সিশোদিয়াকে ধরে রাখা যায়নি। কেন্দ্রের শাসক দলকে ধাক্কা দিয়ে তিনি ছাড়া পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সুপ্রিম কোর্টের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে, কেজরিওয়ালজিকেও আর বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে উজ্জীবিত আপের সঙ্গে লড়াই মোটেই সহজ হবে না। নিঃসন্দেহে একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা ভোট নিয়ে চাপে গেরুয়া শিবির। 
মোদিজি গত এক দশক ধরেই নেহরুকে মুছতে মরিয়া। কিন্তু সব ইচ্ছা একজীবনে পূরণ হয় না। ৩৭০ ধারা প্রবর্তনের ভুল সংশোধন করার মরিয়া দান খেলেও শোচনীয়ভাবে পস্তাচ্ছেন। বিধানসভা ভোটে জিতে নবনির্বাচিত সরকার যদি আবার বিধানসভায় ৩৭০ ধারা ফেরানোর প্রস্তাব পাশ করে তা নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষে খুব মর্যাদা ও সম্মানের হবে তো? ইতিহাস কিন্তু এভাবেই বারবার ফিরে এসে ক্ষমতাধরকে দুয়ো দিয়ে যায় সবার অলক্ষ্যে। সেখানেই তার জিত।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা