সম্পাদকীয়

কিনারা আর কত দূর?

সিবিআই শব্দটির মধ্যে বেশ সমীহ ও ভারিক্কি ভাব রয়েছে। এই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটিকে বহু মানুষ মুশকিল আসান বলেই মনে করেন। তাঁদের ধারণা, দুষ্টের দমনে সিবিআইয়ের চেয়ে বড় সংস্থা ভূভারতে আর নেই। তাই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড-সহ যেকোনও মারাত্মক অপরাধের ঘটনায় মানুষের দাবি থাকে তদন্তটা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনই যেন করে। এই প্রত্যাশায় রাজ্য পুলিস, নগর পুলিস, এমনকী সিআইডির হাত থেকেও বহু তদন্ত সিবিআইতে হস্তান্তরিত হয়েছে। বিশেষ করে যখন রাজ্যে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকার বহাল এবং অভিযোগের তির রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তখন সিবিআই তদন্তের জন্য সমস্বর দাবি ওঠে। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লাল জমানা থেকেই মানুষ বহু ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। হাইকোর্ট বারবার তা মঞ্জুরও করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ করেছে সিবিআই। এই প্রসঙ্গে, স্মরণকালের কিছু ঘটনার উল্লেখ করা যায়: রিজওয়ানুর মৃত্যু রহস্য। সিঙ্গুরে তাপসী মালিক হত্যা। নন্দীগ্রাম, সুচপুর এবং বগটুই গণহত্যা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক গায়েব রহস্য। নারদা কেলেঙ্কারি। সারদা ও রোজভ্যালির মতো বৃহৎ চিটফান্ড দুর্নীতি। জ্ঞানেশ্বরী এবং ঝাড়গ্রামে রাজধানী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। কলকাতা জাদুঘর থেকে বুদ্ধমূর্তি চুরি। এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা ও গোরু পাচার কাণ্ডেও সিবিআই তদন্ত হয়েছে। কয়েকটি ঘটনায় তারা বেশ দেরিতে চার্জশিট দিলেও মামলাগুলির কোনোটিই আদালতে প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে দোষীদের শাস্তি এখনও বিশ বাঁও জলেই।
বস্তুত রাজ্যবাসীর প্রাপ্তির ঝুলিতে শুধুই জমেছে বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া! সিবিআই এ-যাবৎ এত সংখ্যক ঘটনার তদন্তভার নিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে যে, তার ঠিকঠাক খতিয়ান রাখা কঠিন। মানুষের এই স্বল্পায়ু স্মৃতিই সিবিআইয়ের খ্যাতির ভরসা আপাতত। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডেও কি মোদি সরকারের সিবিআই ‘ট্র্যাডিশন’ মেনেই কাজ করবে? সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। সম্প্রতি মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণসহ খুনের ঘটনাটি ৮ আগস্ট, গভীর রাতের। অভিযোগ পরদিন সামনে আসামাত্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিস কমিশনারের নেতৃত্বে শুরু হয় তদন্ত। অতিদ্রুত তৈরি হয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। তার ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণ হাতে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিস একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। সরিয়ে দেওয়া হয় ওই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে। মৃতার শোকসন্তপ্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনায় যথোচিত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। দোষীদের দ্রুত ও সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষেই মত প্রকাশ দেন মমতা। এমনকী, সাফ জানিয়ে দেন কাঙ্ক্ষিত সময়ে পুলিসি কিনারা না-হলে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতেই দিতে চান তিনি। রাজ্য সরকারের তরফে গৃহীত এই দৃঢ় সিদ্ধান্তের মধ্যেই, ১৩ আগস্ট, আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিবিআই অবাধে প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জেরাও করছে। সিবিআইকে সবরকমে সহযোগিতাও করছে কলকাতা পুলিস ও রাজ্য প্রশাসন। কারণ দোষীদের নিরপেক্ষভাবে চিহ্নিতকরণসহ চরমতম শাস্তিদানের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে আন্তরিক।
তা সত্ত্বেও, তদন্ত কলকাতা পুলিসের ‘প্রাথমিক সাফল্যেই’ আটকে রয়েছে। গ্রেপ্তার বলতে সেই একজনই—সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। এই লেখা পর্যন্ত, তারপর আর কাউকেই ধরতে পারেনি সিবিআই। শুধু জেরার পর জেরা চলছে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। অথচ ‘তিলোত্তমা’র মর্মান্তিক পরিণতির পর বারোদিন এবং তদন্তভার সিবিআই গ্রহণের পর একসপ্তাহ অতিবাহিত। রাজ্যের শাসক দলের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কোথায় ‘ব্রেক থ্রু’? এই ঘটনার চটজলদি ও নিরপেক্ষ কিনারা এবং সমাধানের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। বিশেষ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্র স্বাভাবিক করে তুলতে এটা জরুরি। না-হলে গরিব মানুষের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রের প্রতিটি সদস্য এবং রাজ্যবাসীও প্রকৃত দোষী বা দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। তাঁরা জানতে চান, ওই তরুণী ডাক্তারের সঙ্গে এমনটা হল কেন? এটা কি নিছকই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, নাকি এর পিছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে? অপরাধী কি একজনই, নাকি আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত? এক্ষেত্রে সন্দীপ ঘোষের ভূমিকাই-বা কী ছিল? চাঞ্চল্যকর হাতরাস কাণ্ডের দক্ষ অফিসার সীমা আহুজাকে এই ঘটনায় যুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা রাখব, সিবিআই দ্রুত কিনারা করবে। অন্যথায় প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের পরবর্তী নিশানার নাম হয়ে উঠতে পারে সিবিআই। তাতে অব্যাহত হইচইয়ের সঙ্গে দূরে সরে যেতে পারে সুবিচারের আরও একটি আশা!
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা