সম্পাদকীয়

এবার চিকিৎসা চাই

১৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি খবর এইরকম: পিজি হাসপাতালের এক কোণে বসে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন গোসাবার আখতারুদ্দিন লস্কর। একটি পা লোহার রেলিংয়ে বাঁধা। বললেন, ‘যন্ত্রণায় কোমর নড়াতে পারছি না। পিজির ইমার্জেন্সি, বাঙ্গুরের ইমার্জেন্সি, আউটডোর—আর কত জায়গায় দেখাব? বলছে, ডাক্তার নেই, দেখবে কে?’ মধ্যমগ্রাম থেকে আর জি করে এসেছেন অতিবৃদ্ধ তমাল কাপাস। তাঁর ইকো করা জরুরি। বৃদ্ধকে বলা হয়েছে, ‘এখানে কী করছেন? অবস্থা দেখছেন না? বাড়ি যান।’ এই অচলাবস্থা শুধু রাজ্যে নয়, ছড়িয়ে গিয়েছে অন্যত্রও। আর তা নিয়েই কেন্দ্র একইসঙ্গে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। কয়েকদিন আগেই এইমস কর্তৃপক্ষ একটি কড়া সার্কুলার প্রকাশ করে। সংবিধানের ২১ ধারার উল্লেখসহ জানানো হয়, চিকিৎসা এবং জীবনরক্ষার অধিকার থেকে কাউকেই বঞ্চিত করা যায় না। তাই সকল ডাক্তারকেই অবিলম্বে কাজে ফিরতে হবে। এইমসের ওই কড়া বার্তার পরও ডাক্তারদের আন্দোলন অব্যাহত, এমনকী কিছু ক্ষেত্রে তা বরং তীব্রতরও হয়েছে। এদিকে, দিল্লি পুরসভা ১৭ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানায়, ওই সংস্থার অন্তর্গত হাসপাতালগুলিতে অব্যবস্থা তারা  বরদাস্ত করবে না। এরপর সব ডাক্তারকেই কাজে ফেরার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। ১৭ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে রাজ্য সরকার এবং দেশের চিকিৎসক মহলের থেকেও প্রস্তাব নেওয়া হবে।
কিন্তু তারপরেও যে পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি তারও একের পর এক ছবি উঠে আসছে মিডিয়ায়। মঙ্গলবারের কাগজে প্রকাশিত খবরে আর জি করের যে চিত্র ধরা পড়েছে তা এইরকম: ১৯ আগস্ট সেখানে চারজন নতুন রোগী ভর্তি হলেও ছুটি নিয়েছেন পাঁচজন। সব মিলিয়ে ২০০৩ বেডের হাসপাতালে সেদিন রোগী ভর্তি ছিলেন মাত্র ১২৬ জন। অপেক্ষায় থেকে থেকে চিকিৎসা না পেয়ে বহু রোগীকে ‘লামা’ (লিভিং এগেইনস্ট মেডিক্যাল অ্যাডভাইস) পদ্ধিতে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ড খাঁ খাঁ করছে, যেন ভূতুড়ে বাড়ি! শুধু ইমার্জেন্সি বা চালু বিভাগেই অব্যবস্থা নয়, অপারেশন বন্ধ দিনের পর দিন। ৯ আগস্ট আন্দোলন শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত শ’য়ে শ’য়ে রোগীর ‘প্ল্যানড অপারেশন’ ঝুলে রয়েছে কিংবা বাতিল হয়ে গিয়েছে। অব্যবস্থা কায়েম হয়েছে পিজি, এনআরএস এবং মেডিক্যাল কলেজের মতো আরও তিন সেরা হাসপাতালেও। বুধবারের কাগজে ছাপা হয়েছে তারও একাধিক মর্মান্তিক বর্ণনা। তীব্র শ্বাসকষ্টের মুমুর্ষু রোগীকে পিজি, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কেউই ভর্তি নেয়নি। হাড়োয়া থেকে তৃতীয় গন্তব্য কলকাতা মেডিক্যালে গিয়ে শুনতে হয়, ‘স্যার নেই, ভর্তি করলেও কোনও চিকিৎসা হবে না!’ কলকাতা মেডিক্যালেই দেখা গেল, এক যুবক অসুস্থ এক বৃদ্ধকে ট্যাক্সিতে তুলছেন। ফুটপাতে পড়ে থাকা ভবঘুরের কোমর ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিস। হাসপাতাল ভর্তি নিল না। যুবকটি বললেন, ‘কী আর করব, ফের ফুটপাতেই রেখে দেব।’ কোনও রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সেই ফিরিয়ে দিয়ে হাসপাতাল পরামর্শ দিচ্ছে, ‘বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করুন!’
আর জি কর কাণ্ডে দেশের প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষ সমব্যথী, মর্মাহত এবং প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। প্রত্যেকেই এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষী বা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। তাঁরা একইসঙ্গে চান প্রতিটি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিবেশ। এই দাবিতে চিকিৎসা জগতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষও। এরপর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে এবং ইতিমধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও করেছে তারা। আর জি কর কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে সিবিআই তদন্ত। মঙ্গলবার তাতে হস্তক্ষেপ করেছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। দেশজুড়ে ডাক্তারদের সুরক্ষায় জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে। আর জি করের নিরাপত্তায় এবার মোতায়েন হবে আধাসেনা। অবশেষে স্বয়ং দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের আহ্বান, ‘সমস্ত ডাক্তার কাজে ফিরুন।’ চিকিৎসায় বিলম্ব এবং আর প্রাণহানি যে বাঞ্ছনীয় নয়, সেই জরুরি বার্তাও ন্যায়ালয়ের সর্বোচ্চ আসন থেকে দেওয়া হয়েছে। ‘শেষ আশা’ হিসেবে ভারতবাসী আদালতের উপর বারবার ভরসা রেখেছে এবং ফিরেছে হাসিমুখে। বিচারের সর্বোচ্চ আসন নিশ্চয় আমাদের বিমুখ করবে না। চিকিৎসক সমাজ এরপরও কর্তব্যচ্যুত হলে এই সমব্যথী মানুষগুলিই কিন্তু বিরূপ হতে পারেন। সেই অভিজ্ঞতা কারও পক্ষেই হয়তো সুখকর হবে না।
 
25d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা