সম্পাদকীয়

স্বাভাবিক!

নিজের বা দলের স্বার্থে বহু রাজনীতিক অহরহ অসত্য কথা বলেন, এটা প্রায় প্রবাদে পরিণত। একইভাবে সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় মন্ত্রী মশাই নির্বিকার চিত্তে স্বজ্ঞানে ভুল তথ্য ও পরিসংখ্যান পরিবেশন করছেন, এমন নজিরও মোটেই বিরল নয়। কিন্তু দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে যখন কোনও প্রধানমন্ত্রী সংসদে মুখ খোলেন, তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে, ধারে ও ভারে তাঁর কথার ওজন থাকবে, ফাঁকা বুলি আওড়াবেন না তিনি। ফলে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোনও তথ্য দিয়ে সভাকে আশ্বস্ত করলে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে ‘হাততালি’ দিয়ে টেবিল চাপড়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়। এটাই দস্তুর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, রাজ্যসভার সাম্প্রতিক অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলার পর সেই পরিচিত ছবিটা তেমনভাবে দেখা গেল না! উল্টে বিরোধী শিবির থেকে ‘ঝুট ঝুট’ (মিথ্যা, মিথ্যা) শুনতে হল নরেন্দ্র মোদিকে! কেন? প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে মণিপুরের পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফেরানোর চেষ্টা করছে। মণিপুরে স্বাভাবিকত্ব ফিরেছে। এতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে। কারণ, হিংসাদীর্ণ উত্তরপূর্বের এই রাজ্যে আজও সকাল হয় অশান্তি-সংঘর্ষের খবরে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সেই ‘স্বাভাবিক’ রাজ্যের তথ্য বলছে, গত চোদ্দো মাসে মণিপুরে ২২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, ১০ হাজার মণিপুরবাসী ভয়ে অন্য রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছেন, অন্তত ১৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি, নিখোঁজ ৩০ জন। এবং মণিপুরে আজও হিংসা অব্যাহত। লোকসভা ভোটের দিন মণিপুরে বুথের সামনে গুলি চলছে। এই সেদিন ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদের কনভয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মাসখানেক আগে জিজিরাম জেলায় মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, ২০০ পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছে। আসলে প্রধানমন্ত্রী নন, মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাস্তবটা তুলে ধরেছেন সে রাজ্যের সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-সাংসদ মধ্যরাতে প্রায় ফাঁকা লোকসভায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণে মণিপুর নিয়ে সম্পূর্ণ নীরবতার প্রসঙ্গ টেনে শাসকদলকে খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, একবার নিজেদের হৃদয়ে হাত রেখে দেখুন। গৃহহীন মা, বিধবাদের কথা ভাবুন। তারপর জাতীয়তাবাদের কথা বলবেন। মণিপুর এখন প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ছেয়ে গিয়েছে।
মণিপুর অশান্ত চোদ্দো মাস ধরে। গোষ্ঠী সংঘর্ষের হাত ধরে গত বছরের ৩ মে সেখানে প্রথম আগুন জ্বলেছিল। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এই পাহাড়ি রাজ্যটি। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এতদিন ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও বিজেপি শাসিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর সরকার কার্যত ঠুঁটো হয়ে রয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী একবারের জন্যও মণিপুরের মাটিতে পা রাখেননি। তবে বিরোধীদের প্রবল চাপে মাত্র কয়েকদিন আগে রাজ্যসভায় তিনি তাঁর নীরবতা ভেঙেছেন। যদিও এর দায় বিরোধীদের উপর চাপিয়ে তিনি বলেন, মণিপুর নিয়ে যাঁরা আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন, মণিপুরই একদিন তাঁদের প্রত্যাখ্যান করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই আশা কবে পূরণ হবে বা আদৌ পূরণ হবে কি না তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে তথ্যের খাতিরে জানানো যেতে পারে, গত এক বছরে তিনবার মণিপুর সফর করেছেন রাহুল গান্ধী। দুই গোষ্ঠীর আশ্রয় শিবিরেই তাঁকে কাছে টেনে নিয়েছেন অসহায় মানুষেরা। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী কি তবে কোনও অজানা আশঙ্কার কারণেই সেখানে যাচ্ছেন না? প্রশ্ন না রেখেই বলা যায়, মণিপুরের মানুষের কাছে রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই যেন ‘ভিলেন’ হয়ে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের ফলাফল বলছে, রাজ্যের দুটি আসনেই মোদির দলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সেখানকার মানুষ।
মণিপুরে গোষ্ঠী বিবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শুধু এলাকা দখল বা উপজাতি স্টেটাস নিয়েই নয়, সে রাজ্যে অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষার দাবিও চরম উপেক্ষিত হতে হতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই ঘোলা জলে রাজ্য সরকার তথা শাসক বিজেপি একটি পক্ষ নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের ভূমিকা আতস কাচের নীচে রেখে কাটাছেঁড়া চলছে। এই অবস্থায় দিল্লি থেকে কঠোরভাবে রাশ টানার প্রয়োজন ছিল। তার বদলে পরিচিত ঢঙে বিরোধীদের দোষারোপ করার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী! আর তাঁর ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মাঝেমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়ে দায় এড়াচ্ছেন। ফলে মণিপুর সত্যিই কবে স্বাভাবিক হবে তা কেউ জানে না।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা