সম্পাদকীয়

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

ঠিক একসপ্তাহ আগে জমা পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট, দিয়েছেন কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি (সিআরএস)। তাতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য মালগাড়ির চালক কোনোভাবেই দায়ী ছিলেন না। রিপোর্টে বরং রেলের গোটা সিস্টেমের চূড়ান্ত ব্যর্থতার দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে। সেফটি কমিশনারের মতো শীর্ষকর্তার বক্তব্যে নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে রেল বোর্ডের চেয়ারপার্সন জয়া ভার্মা সিনহার তাৎক্ষণিক সেই বক্তব্য, যা তিনি দুর্ঘটনার দিনেই করেছিলেন। জয়ার দাবি ছিল, ‘মালগাড়ির চালক সিগন্যাল না-মানার কারণেই এই ভয়াবহ ঘটনা!’ একজন মৃত রেলকর্মীর ঘাড়ে এত বড় বিপদের দায় চাপিয়ে দেওয়া যে কতখানি ভুল, অবিবেচক ও অমানবিক ছিল, এই রিপোর্টই তা পরিষ্কার করে দিয়েছে। ১৭ জুন সংঘটিত রেল দুর্ঘটনার ব্যাপারে সিআরএস তদন্ত রিপোর্টের বক্তব্য, রেলের না-ছিল পরিকাঠামো, না-ছিল প্রশিক্ষণ। এমনকী, সাধারণ রেলকর্মী থেকে স্টেশন মাস্টার—কেউই ঠিকমতো জানেন না রেল চালাবার সাধারণ নিয়মাবলি। আরও দুর্ভাগ্য এই যে, নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে ওয়াকিটকিও ছিল না। ফলে জরুরি মুহূর্তেও সংশ্লিষ্ট রেলকর্মীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেননি। এককথায়, রেল কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। রেল বোর্ডের পাশাপাশি গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে রেল মন্ত্রকের ভূমিকাকেও। কমিশনার স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, বস্তুত ভগবানের ভরসাতেই উত্তরবঙ্গের ওই অংশে ট্রেন চলাচল করছে। 
মোদি সরকার লাগাতার প্রচার চালিয়ে এসেছে, রেলযাত্রীর নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যই তাদের অগ্রাধিকার। কিন্তু বাস্তবে সবটাই যে বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া মাত্র, নির্মলজোতের ঘটনায় তৈরি সিআরএস রিপোর্ট সেটাই পরিষ্কার করল। তদন্তে প্রকাশ, মালগাড়ির চালক ওই অংশে নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি স্পিডে ট্রেন চালিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার নেপথ্যে ছিল স্টেশন মাস্টারের লিখিত অনুমতি। তাতে নির্ধারিত গতিসীমার উল্লেখই ছিল না! স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার অবর্তমানে টিডি-৯১২ ফর্ম দেওয়ার কথা, পরিবর্তে এক্ষেত্রে চালককে ধরানো হয় টিএ-৯১২। প্রথমোক্ত ফর্ম পেলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ কিমি বেগে ট্রেন চালাবার সতর্ক বার্তা চালক পেতে পারতেন। সেই সুযোগ পাননি বলেই তিনি ৪০ কিমি বেগে ট্রেন ছুটিয়েছিলেন। পরে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেও শেষরক্ষা হয়নি। রিপোর্টে রয়েছে আরও চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য, শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস কিংবা মালগাড়িই নয়, ওই একই লাইনে তখন আরও পাঁচটি ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। একমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার চালকই এগচ্ছিলেন নির্ধারিত গতিতে। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারের কর্তব্যে গাফিলতিরও উল্লেখ রয়েছে। 
স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা অকেজো হয়ে গেলে কী করণীয়, তা ঠিকমতো জানেনই না রেলকর্মীরা, মনে করেন সিআরএস। তাঁর রিপোর্ট অনুসারে, এক্ষেত্রে উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের অভাবটাও প্রকট হয়েছে। এজন্য তৈরি হচ্ছে ভুল ব্যাখ্যা (মিসইন্টারপ্রিটেশন) এবং ভুল বোঝাবুঝির (মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং) অবকাশ। দুর্ঘটনার সময় স্টেশনের সিগন্যালিং কন্ট্রোল অফিসে মাত্র একজন টেকনিশিয়ান ক্যাটিগরির কর্মী ছিলেন। এটি রেল আইনের পরিপন্থী। অর্থাৎ সার্বিক পরিকাঠামোই এখন গভীর প্রশ্নের মুখে। এছাড়া রাঙাপানি-চটেরহাট স্টেশনের মাঝে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপও ছিল সেদিন। এজন্য দায়ী করা হয়েছে অবশ্য বজ্রপাতকে। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সিআরএসের উল্লেখ, ‘এরর ইন ট্রেন ওয়ার্কিং’। এরপর রেলওয়ে সিস্টেমের ব্যর্থতা কবুলে কিছুমাত্র বাকি থাকে কি? একে একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র’ বলে দায় এড়ানোর কোনও চেষ্টা আর যেন না-হয়। তাহলে সেটি হবে আরও বড় ভুল। কর্তৃপক্ষের সেই ভুলেরই চড়া মাশুল গুনে যেতে হবে আগামী দিনের রেলযাত্রীদেরকেও। সিআরএসের পরামর্শ মতো রেল চলাচলের যাবতীয় ত্রুটি অবিলম্বে সংশোধন করে ফেলতে হবে। রেল  পরিবহণ ভারতের গর্ব এবং ঐক্য ও আর্থিক সমৃদ্ধির প্রতীক। ইংরেজ শাসক সাম্রাজ্য বিস্তারের ফাঁকেও ভারতের বুকে যতগুলি ভালো কাজ করেছিল, তার শীর্ষেই রাখতে হবে রেলকে। স্বাধীনতা-উত্তর সাতাত্তর বছরে ভারতীয় রেলকে ‘বিশ্বসেরা’ করে তোলার অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারিনি সস্তার রাজনীতি মূলধন হওয়ায় আর সৎ সাহসের অভাবে। এখনও কি সেই নিন্দিত পথেরই পথিক থাকব আমরা?
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা