সম্পাদকীয়

অবশেষে বৃদ্ধের আক্কেল দাঁত

একে সংসদীয় গণতন্ত্র, তার উপর বহুদলীয় ব্যবস্থা। তাই লড়াইটা প্রতিটি দিনের, প্রতি মুহূর্তেরও। ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট‍্রীয় কাঠামোয় আবার পাঁচবছর অন্তর দেশের সরকার গড়েই হাত ধুয়ে ফেলা যায় না। প্রতিটি রাজ্যে এবং কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও বিধানসভার ভোট নেওয়া হয়। এছাড়া রয়েছে পঞ্চায়েত এবং পুরসভার মতো স্থানীয় সরকার গঠনেরও তাগিদ। সবক্ষেত্রেই সরকারের সর্বোচ্চ মেয়াদ পাঁচ বছরের। ভোটাররা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলই সরকার তৈরির অধিকার পায়। সেই পর্যন্ত পৌঁছনোই সব দলের লক্ষ্য। কিন্তু যেমন তেমন একটি দলকে সেখানে রাতারাতি পৌঁছে দেবে এমন কোনও মন্ত্রশক্তি নেই। মন্ত্রের কথাই যদি ওঠে, তা হল মানুষের কল্যাণ। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে ঠকাবার জন্য একাধিক শক্তি সক্রিয়। অসংখ্য মেহনতি সৎ মানুষ নিত্য বঞ্চিত হয় বলেই মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিপুল সম্পদের ভাণ্ডার পায়। সমাজ শুধু বৈষম্য-পীড়িত হয় না, বৈষম্যের যন্ত্রণা উত্তরোত্তর বাড়েও। 
রাজনৈতিক দলগুলির একাংশের প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষ মদত ছাড়া সাম্যবাদের এই বিপরীত গতি প্রতিষ্ঠা পায় না। খেটে-খাওয়া নাগরিকরা এর অবসান চায়। তাদের এই চাহিদা কোনও একটি দল আন্তরিকভাবে চাইলেও রাতারাতি মিটিয়ে দিতে পারে না। তবে চালু সমাজব্যবস্থার মধ্যেও গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশে থাকা সম্ভব। যে রাজনৈতিক দল বৈষম্য দূর করতে সত্যিই আগ্রহী, মানুষের পাশে থাকার এই মহান দৃষ্টান্ত তাকে রাখতে হয়। সেটাও একবার নয়, নিরন্তর। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময় এবং স্বার্থশূন্যভাবে মানুষের জন্য লড়াই। এই লড়াই চলে সাধারণভাবে দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসকের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে। তাতে ভয়াবহ ঝুঁকি, এমনকী চরম পরিণতিও সর্বক্ষণের জন্য শিয়রে থাকে। স্বাধীনতার ভগীরথদের কথা আমরা জানি। গত শতকের শেষার্ধে জাতীয় ক্ষেত্রে জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়ারাও এক অভূতপূর্ব লড়াই সংগ্রামের কীর্তি স্থাপন করে গিয়েছেন। ষাট-সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গে বামেরাও বড় লড়াই দিয়েছেন, বিশেষ করে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের কুশাসন উৎখাত করতে। 
কিন্তু এরপর ১৯৭৭-এ জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামেরা এসে, টানা সাড়ে তিন দশকের এক জগদ্দল যন্ত্রণা বাংলাকে ‘উপহার’ দেন। ওই সামাজিক ‘ব্যাধি’ উপড়ে ফেলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন রাজনীতির ইতিহাসে তা এক অনবদ্য অধ্যায়। রাজনীতি যে নিছক ক্ষমতার কারবার নয়, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের ভালোর জন্য এক আপসহীন সংগ্রামের নাম, অগ্নিকন্যাই তার প্রমাণ দেন। তৃণমূল সুপ্রিমো এরাজ্যে তাঁর তৃতীয় সরকার পরিচালনা করছেন। কিন্তু ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেও তাঁর রাজনীতির রং এতটুকুও ফিকে হতে দেননি মমতা। একইসঙ্গে চলছে অদ্ভুত দক্ষতায় তাঁর প্রশাসন পরিচালনা এবং শাসক দল ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে জাঁকিয়ে বসতে চাওয়া অশুভ শক্তি নিকেশের নির্মম প্রক্রিয়া। সোজা কথায়, ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের ‘বেকার’ করে দিয়েছেন জননেত্রী। বেকারত্ব সৃষ্টির এই বদনাম তিনি নিশ্চয় অম্লান বদনেই স্বীকার করেন। ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতেই যাঁদের মোক্ষলাভ, এতে চরম বিপদে পড়ে গিয়েছেন তাঁরা। একদা ‘সাপে-নেউলে’ বলে পরিচিত বাম এবং কংগ্রেস গলাগলি করেও অস্তিত্বের সংক‍ট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে, বড়ই দিশাহীনতায় ভুগছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। নির্বাচনী বৈতরণীর পাড়ে দাঁড়াতে হলেই তারা আঁতকে ওঠে। ২০২১ থেকে  গেরুয়া শিবিরের আতঙ্কটা বেড়েই চলেছে। মাঝে পেরিয়েছে পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে লোকসভা, এমনকী একের পর এক উপ নির্বাচন। প্রতিটি ভোটেই তাদের ক্ষয়ের ধারা অব্যাহত। ২০১৯-এ বঙ্গ বিজেপি নিজেকে যদি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ ভেবে থাকে তো আজ নিশ্চয় ‘পিগমি’ হওয়ার আতঙ্কে কাটাচ্ছে তারা! আতঙ্কটা এখন আর গোপন নেই। স্বয়ং দলের রাজ্য সভাপতির মুখেই তা ‘শোভা’ পাচ্ছে, ‘অ্যারেস্ট করিয়ে ভোটে জেতা যায় না।’ কিছুদিন আগেই গিয়েছে লোকসভা ভোটের রামধাক্কা, আর সদ্য উপস্থিত উপ নির্বাচনে চরমতম ব্যর্থতার গ্লানি। ভরাডুবির এই ধারাবাহিকতাতেই সংবিৎ ফিরেছে সুকান্ত মজুমদারের। আহা, যেন আক্কেল দাঁত গজিয়েছে অবশেষে বৃদ্ধের! রবিবার দলের এক কর্মিসভায় তাঁর উপলব্ধির কথা শোনাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহোদয় জোর দিয়েছেন মজবুত দলীয় সংগঠন গড়ার উপর। তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এজেন্সিরাজ বা তথাকথিত মোদি ম্যাজিক আর যাই হোক মমতার মানবিক রাজনীতির বিকল্প নয়। তবে সুকান্ত যে-কথাটি বলতে ভুলে গিয়েছেন, তা হল—‘বাংলার বিরোধী’ হয়ে বঙ্গবাসীর মন তাঁরা কোনোদিনই জয় করতে পারবেন না। রাজ্যের উন্নয়নে এবং গরিবের প্রাপ্য টাকা আটকে দেওয়ার রাজনীতিই চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। একইসঙ্গে দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দেও বাংলাকে দুধুভাতু করে রেখে দেওয়া হয়েছে! এই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে বিজেপি আর যাই হোক মমতার বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারবে না।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা